দাকোপে আবারও অবৈধভাবে ভূগর্ভস্থ বালু উত্তোলন : নীরব প্রশাসন

0
634

আজিজুর রহমান, দাকোপ : খুলনার দাকোপ উপজেলার বাজুয়া ইউনিয়নের চড়া নদী থেকে অবৈধভাবে আবারও উত্তোলন করা হচ্ছে ভূগর্ভস্থ বালু। পরিবেশ বিপর্যয়ের আশংকা করছেন অনেকেই। ভূমিকায় প্রশাসন শুধু দর্শকমাত্র।
ক্ষমতাসীন দলের ছত্রছায়ায় স্থানীয় নেতাদের সিন্ডিকেট করে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। উপজেলায় কোন বালু মহল না থাকলেও অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছে মহলটি। উপজেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের বার বার দৃষ্টি আকর্ষণ করা সত্বেও কোনোভাবেই বন্ধ হচ্ছে না নদ-নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন। উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে নদীভাঙ্গন। চড়ানদী থেকে অবৈধভাবে ভূগর্ভস্থ বালু উত্তোলনের নেপথ্যে রয়েছে উপজেলা আ’লীগের নেতা ইউপি চেয়ারম্যান মিহির মন্ডল।
উপজেলার ৩৩ নম্বর পোল্ডার ঘুরে দেখা যায়, রাস্তা নির্মাণ, পুকুর ও বাড়ী ভরাটের জন্য মাটি ব্যবহার না করে, পার্শ্বের নদী-খাল থেকে স্যালো ড্রেজারের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। গত শনিবারে বাজুয়ার ত্রিমোহনী ব্রিজ সংলগ্ন চড়ানদী থেকে স্যালো ড্রেজার দিয়ে ভূগর্ভস্থ বালু উত্তোলন করতে দেখা গেছে। এভাবে বালু উত্তোলনের ফলে ইতিমধ্যে বানিশান্তা ইউনিয়নের লাউডোব বানিশান্তা সদ্য নির্মিত জাইকা রাস্তা এবং কৈলাশগঞ্জের রামনগর বাদুড়তলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের জাইকা রাস্তা দেবে গেছে, রাস্তায় ফাটলও ধরেছে।
স্থানীয় এলাকাবাসীর অভিযোগ, এভাবে বালু উত্তোলন করলে ভূগর্ভের শূন্যস্থান যখন পার্শ্বের বালু এবং মাটি পুরণ করতে যাবে, তখন ভূমি ধ্বসের সম্ভাবনা রয়েছে। এতে এলাকায় বড় ধরনের পরিবেশ বিপর্যয় ঘটতে পারে বলে তারা আশংকা প্রকাশ করেছে।
খোঁজ-খবর নিয়ে জানা যায়, এভাবে বালু উত্তোলন করার জন্য ড্রেজার মালিকদের আইনগত কোনো বৈধ অনুমতি নেই। সম্প্রতি ৬দিন ধরে বাজুয়ার চড়া নদী থেকে এভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। স্থানীয়ভাবে ড্রেজার মালিকদের অনেকেই নিষেধ করেছে। কিন্তু তারা কারো কথা শুনতে নারাজ। ভাবটা এমন, তাদের ব্যবসার জন্য তারা সব কিছুই করতে পারে।
ড্রেজারটির চালক মন্টু মন্ডলকে জিজ্ঞাসা করলে, সে বলে বালু তোলার জন্য আমাদের কোনো অনুমতিপত্র নেই তাছাড়া আমি কিছুই জানি না। সে জানায়, ড্রেজারটি মালিক কৈলাশগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান মিহির মন্ডল। আমি কর্মচারী হিসাবে ড্রেজারে কাজ করছি।
এ্যাডভোকেট তরুণ কান্তি রায়ের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, সব জায়গায় এই ড্রেজার দিয়ে বালু তুলে বাড়ি ভরাটসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। তাই ১ ফুট বালু ৫ টাকা দরে কিনে আমার জায়গাটি ভরাট করে নিচ্ছি।
স্থানীয়রা বলেন, এ বালু ব্যবসার সাথে সরকার দলীয় প্রভাবশালী নেতাদের হাত রয়েছে তাই প্রশাসন কিছুই বলে না। সাধারণ মানুষও ভয়ে মুখ খুলতে পারে না। তারা আরও বলেন, নদীভাঙ্গন এ উপজেলার প্রধান সমস্যা এবং সে সমস্যা সমাধানের জন্য সরকার কোটি কোটি টাকা ব্যয় করছেন। অথচ এলাকার কিছু স্বার্থান্বেশী মানুষের কারনে নদীভাঙ্গন আরও প্রসারিত হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, চড়া নদী থেকে চেয়ারম্যান মিহির মন্ডল ইচ্ছামত লক্ষ লক্ষ টাকার বালু উত্তোলন করছে। এসব বালু শুধু এই এলাকার অবকাঠামো নির্মাণের কাজে ব্যবহার হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, প্রতিবাদ করতে গেলে মামলা, হামলা ও হুমকি প্রদান করেন চেয়ারম্যান।
কৈলাশগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিহির মন্ডল মুঠোফোনে বলেন, উন্নয়ন কাজের স্বার্থে স্যালো ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করি। দুর্যোগ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বালু উত্তোলনের অনুমতি বিষয় জানাতে চাইলে। তিনি জানান, এটার কোনো অনুমতিপত্র নেই। তবে যেটা চলছে সেটি আমার ড্রেজার না।
উপজেলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মারুফুল আলমকে জানালে তিনি বলেন, বিষয়টি আমি দেখছি। এর সাথে জড়িত সকল অপরাধীকে আইনের মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।