ডুমুরিয়ার ভদ্রা ও শালতা নদী খননের সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন : ব্যয় ৭৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা

0
845

এস রফিক, ডুমুরিয়া প্রতিনিধি:
একনেকে অনুমোদনের পর ডুমুরিয়ার ভদ্রা ও শালতা নদী খনন প্রকল্প বাস্তবায়নের সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। বৃহত্তর এ উপজেলার জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে ৭৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি চলতি মাসের মধ্যেই নদী দুটির খনন কাজ আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। এ লক্ষে বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ’র সাথে উপজেলা নির্বাহী অফিসার, পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তা, উপজেলা প্রকৌশলী, সাংবাদিক ও নদী সংলগ্ন পাঁচ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বৃন্দের সাথে মতবিনিময় করেছেন। ইতোমধ্যে মাঠ পর্যায়ে সীমানা নির্ধারন ও অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ প্রক্রিয়া শুরু করেছে পানি উন্নযন বোর্ড।
সংশ্লিষ্ট পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ভদ্রা ও শালতা নদী দুটি দেড় যুগ আগেও এ নদীতে হাজার হাজার মানুষের জীবন জীবিকা নির্বাহ করতো। নৌযান চলাচল, জোয়ার ভাটা ও নদীতে মাছ শিকার ছিল এ অঞ্চলের মানুষের নিত্য নৈমিত্তিক চিত্র। অর্থনৈতিক উন্নয়নেও ছিল অপরিসীম ভ’মিকা। কিন্তু কালের আবর্তে নানা প্রতিকুলতার মুখে এক সময়ের খর¯্রােতা প্রমত্তা ভদ্রা ও শালতা নদী প্রায় ৩০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে প্রাকৃতিক ভাবে পলি পড়ে নাব্যতা হারিয়ে ভরাট হয়ে যায়। নদী ভরাটের সাথে সাথে দখলদাররা শুরু করে চর ভরাটের মহোৎসব। প্রভাবশালীরা যে যার মতো দখল করে নেয় নদীর বুক। এরপর দখলবাজ চক্র নিয়ম বহির্ভ’ত ভাবে ভরাট হওয়া জমিতে গড়ে তুলেছে আলিশান বসত বাড়ী, রাইচ মিল, স’মিল, ক্লাব, বাজার, বহুতল ভবন সহ নানা স্থাপনা। এসবের পাশাপাশি নদী সমতল ভ’মিতে রয়েছে ফসলি মাঠ যা দেখলে আদৌও মনে হবেনা এখানে কখনও নদী ছিল। যার ফলে এ এলাকার পানি নিষ্কাশনের পথ স্থায়ী ভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতার করুন পরিনতির সৃষ্টি হয়। তখন হাজার হাজার বিঘা কৃষি জমি পানিতে তলিয়ে যায়্। এমনকি অনেক বসতি বাড়ীতে পানি ঢুকে পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে ২০০৫ সালে নদী দুটি খননের উদ্দোগ নেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু নানা জটিলতার কারনে প্রকল্পটি মন্ত্রনালয়ে লাল ফিতায় বন্দী হয়ে পড়ে। পরবর্তিতে উদ্দোগটি বাস্তবায়নে ২০১৪-২০১৫ অর্থ বছরে নদী দুটি খননের জন্য ডেপেলমেন্ট প্রজেক্ট প্রফোজল (ডিপিপি) তে জমা দেয়া হয়। প্রকল্পটি সম্ভাব্যতা যাচাই করে এবং এর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে বর্তমান সরকার ২০১৬ সালে সেপ্টেম্বর মাসে একনেকের বৈঠকে ৭৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্প অনুমোদন দেয়। যার বাস্তবায়নে মেয়াদ নির্ধারন করা হয়েছে ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছর।
এ নদী দুটি খনন হলে ডুমুরিয়া সদর, গুটুদিয়া, ভান্ডারপাড়া, শোভনা, খর্ণিয়া, ও রুদাঘরা ইউনিয়নের শ’শ’ এলাকা বিলের পানি নিস্কাশনের একটি স্থায়ী পথ তৈরী হবে। যার ফলে উপজেলার বিপুল জনগোষ্ঠী ও কৃষি জমি স্থায়ী জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষা পাবে। অর্থনৈতিক উন্নয়নেও মানুষের বিপুল পরিবর্তন আসবে। পানি নিয়ন্ত্রনে দিঘেলার ভদ্রা নদীর মুখে ১০ ভেল্টের একটি ¯øুইচ গেট এবং অপর অংশে অর্থ্যাৎ তেলিগাতির মুখে আরেকটি ১০ ভেল্টের ¯øুইচ গেট নির্মিত হবে। ভদ্রা নদীটি খননের প্রস্থ হবে ১শত ২০ ফুট এবং গভীরতা ১৪ ফুট। এছাড়া শালতা নদী ডুমুরিয়া বাজারের ভদ্রা নদী থেকে শুরু হয়ে ৯ কিলোমিটার খনন করে শৈলমারী নদীতে সংযুক্ত করা হবে। শালতা নদীর প্রস্থ হবে ১ শত ২০ ফুট এবং গভীরতা করা হবে ৫ দশমিক ৬ ফুট। ডুমুরিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান খান আলী মুনসুর জানান, নদী দুটি খনন হলে ডুমুরিয়া উপজেলার সকল মানুষের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে এবং উপজেলা বাসী স্থায়ী জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাবে। বিশেষ করে কৃষক শ্রেনীর মানুষ নানা ভাবে উপকৃত হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ড’র নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ শরিফুল ইসলাম বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে ঠিকাদার নিয়োগ ও নদীর সীমানা নির্ধারন করা হয়েছে। বর্তমানে নদীতে অবৈধ দখল উচ্ছেদের জন্য মাইকিং চলছে খুব জোরে শোরে। খুব শ্রীঘ্রই তালিকাভুক্ত অবৈধ দখলদারদের নোটিশ দিবে জেলা প্রশাসক। এ প্রসঙ্গে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ এমপি বলেন, প্রাকৃতিক পরিবেশ ভারসাম্য রক্ষায় নদী খননের বিকল্প নেই। নদী দুটি খনন হলে সংশ্লিষ্ট এলাকায় ফের পানি নিস্কাশনের একটি স্থায়ী পথ তৈরী হবে এবং এ উপজেলার বিপুল জনগোষ্ঠী ও কৃষি জমি স্থায়ী জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষা পাবে অর্থ্যাৎ অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটবে। পাশাপাশি প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্থ ভ’মিহীনদের পূনর্বাসনের আশ্বস্ত করেন।