টঙ্গীতে ৫৫তম বিশ্ব ইজতেমা দাওয়াতি কার্যক্রমের মিলনমেলা

0
304

আগামীকাল থেকে টঙ্গীর তুরাগতীরে শুরু হচ্ছে ৫৫তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। তাবলিগ জামাতের অনুসারী দেশ-বিদেশের মুসল্লির কাফেলা এখন তুরাগতীরে। শুক্রবার থেকে ইজতেমার মূল কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা থাকলেও গতকাল বৃহস্পতিবার বাদ ফজর থেকে আমবয়ান শুরু হয়েছে। আরবি ‘ইজতেমা’ শব্দের অর্থ সমাবেশ বা সম্মেলন। ধর্মীয় কোনো কাজে বহুসংখ্যক মানুষকে একত্র করাকে শরিয়তের পরিভাষায় ইজতেমা বলে। এ দৃষ্টিকোণ থেকে পৃথিবীর বহুসংখ্যক দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা যেখানে সমবেত হন, একে ‘বিশ্ব ইজতেমা’ বলা হয়। সারা বিশ্বের অর্ধশতাধিক দেশ থেকে আসা হাজার হাজার তাবলিগ ও ইসলামি দাওয়াহ অনুসারী দীনদার মুসলমান বাংলাদেশের রাজধানীর উপকণ্ঠে টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে প্রতিবছর দুই পর্বে তিন দিনব্যাপী বিশ্ব ইজতেমায় শরিক হন। বিশ্ব ইজতেমা বা সমাবেশের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, মুসলমানদের সব ভ্রান্তপথ পরিহারের তাগিদ করে আল্লাহর রাস্তায় ফিরিয়ে এনে পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে সহজ-সরল জীবনযাপন এবং আদর্শ সমাজ গঠনের জন্য কল্যাণের পথচলায় ব্যাপকভাবে উদ্বুদ্ধ ও উৎসাহিত করা।
টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা মুসলিম উম্মাহর দাওয়াতি কার্যক্রমের অন্যতম মিলনমেলা হিসেবে ইতিমধ্যে পরিচিতি লাভ করেছে। সেখানে দেশ-বিদেশের লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসুল্লি তাঁদের পবিত্র ধর্ম ইসলামের ওপর আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিশিষ্ট চিন্তাবিদসহ বিভিন্ন আলেম-ওলামাগণের জ্ঞানগর্ভ ও দিক-নির্দেশনামূলক বয়ানের মাধ্যমে জ্ঞান লাভ করেন। রবিবার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে মাওলানা জোবায়েরের অনুসারীদের আয়োজনে এই পর্ব সমাপ্ত হবে। ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব শুরু হবে আগামী ১৭ জানুয়ারি। ভারতের বিশ্ব তাবলিগ মারকাজের সাবেক আমির মাওলানা সাদ কান্ধলভির অনুসারীদের আয়োজনে হওয়া এই পর্বের সমাপ্তি হবে ১৯ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে। তাবলিগ জামাতের বিবদমান দুই গ্রুপের বিরোধের কারণে গত বছর থেকে মাওলানা সাদের অনুসারী এবং মাওলানা জোবায়েরের অনুসারীদের আয়োজনে পৃথকভাবে দুই পর্বে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
বিশ্ব ইজতেমার গুরুত্ব বিবেচনায় সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিবছরই বিভিন্নমুখী ব্যবস্থা গ্রহণ করা ছাড়াও বেসরকারি পর্যায়ের অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ফ্রি-চিকিৎসাসহ অন্যান্য সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। স্বেচ্ছাশ্রম ও সেবা কার্যক্রম প্রকৃতপক্ষে শান্তির ধর্ম ইসলামের প্রচার ও প্রসারের শিক্ষা। যেখানে থাকবে না কোনো হানাহানি, হিংসা-বিদ্বেষ, থাকবে না কোনো বিশৃঙ্খলা, মানুষে মানুষে থাকবে সৌহার্দ্য ও শান্তি। পৃথিবীর বুকে ইসলামের ক্রমবিকাশের অগ্রযাত্রা ও প্রচার-প্রসারের মৌলিক কর্মসূচি হলো দাওয়াত ও তাবলিগ। ইসলামের আবির্ভাবের মুহূর্ত থেকে অদ্যাবধি নিরলস, নিরবচ্ছিন্ন গতিতে অব্যাহত রয়েছে তাবলিগের কার্যক্রম।
তাবলিগ জামাত আয়োজিত এবারের বিশ্ব ইজতেমা লক্ষ্য পূরণে সফল হোক, এ কামনা রইল। আমাদের বিশ্বাস, তাদের সফল আয়োজন এবারের বিশ্ব ইজতেমাকে অন্য সব বছরের মতোই সফল ও সুন্দর করে তুলবে। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে সত্যিকার মুসলমান হিসেবে গড়ে তুলুন এবং তিনিই আমাদের দান করুন ঈমানি সব দায়িত্ব পালনের সক্ষমতা। ঈমান ও আকিদাকে সম্বল করে আমরা যেন হতে পারি সফলকাম। আমিন।