ঝিনাইদহ জেলায় ৪৪৬ পূজা মন্ডপে আজ থেকে শুরু শারদীয় দূর্গাপূজা

0
1819

ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ আজ শারদীয় দুর্গোৎসব। এ উৎসব শুধু বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য নয়; বরং জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে বাঙ্গালীর জাতীয় ঐক্য চেতনায় এটি একটি মহামিলনোৎসব।বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এখানে আবহমানকাল থেকে একসঙ্গে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান এবং আদিবাসী ও উপজাতি সম্প্রদায়ের লোকেরা মিলেমিশে বসবাস করে আসছে। বিশ্বে এ এক অনন্য ইতিহাস। যে দেশে, যে ভূখ-ে একসঙ্গে নানা জাতি, নানা বর্ণের লোক এবং নানা ধর্ম-সংস্কৃতির লোকের বসবাস- সেটাই তাদের আসল পরিচয়। তাই তো প্রাচীনকাল থেকে এদেশ পারস্পরিক সম্প্রীতির মেলবন্ধনে আবদ্ধ আছে।
শরতের এই সুন্দর প্রকৃতির সঙ্গে মিশে আছে বাংলার আবহমানকালের শারদীয় দুর্গোৎসব। এ উৎসব বাঙালি হিন্দুদের সর্ববৃহৎ ও সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্মীয় উৎসব। শাস্ত্র মতে, দেবী দুর্গার আগমনের মধ্য দিয়ে পৃথিবীর সব দুঃখ-বেদনা, জরা-জীর্ণতা, রোগ-ব্যাধি আর অন্যায়-অত্যাচার যেমন দূরীভূত হয়, তেমনি মানব জীবনে সুখ-শান্তি আর শুভ শক্তির উদ্ভাবন ঘটে। এজন্যই দুর্গাপূজার সার্বজনীন আবেদন হল, অসুর শক্তির বিনাস আর শুভ শক্তির উদ্বোধন।
ধর্মীয় ভাবগাম্ভীয্যের মাধ্যমে দেবীর আরাধনার সীমানা ছাড়িয়ে কালের বিবর্তনে “শারদীয় দূর্গোৎসব” অনেক আগেই সর্বজনীন হয়ে উঠেছে । সাম্য ও শান্তির বাণী নিয়ে যুগে যুগে মর্ত্যধামে আগমন অসুর বিনাশিনী শক্তিরুপে দেবী দূর্গার । দেবী বন্দনায় মূখরিত এখন সমগ্র বাংলাদেশের আকাশ-বাতাস ।
আবহমানকাল থেকেই এ উপমহাদেশে বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায় অত্যন্ত আনন্দঘন পরিবেশে এবং ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপন করে আসছে। ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গা পূজার প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে। রবিবার রাতের মধ্যেই সকল কাজ শেষ হবে জানিয়েছেন জেলার পূজা কমিটির লোকজন।

চলে এল মহালায়া আকাশে বাতাসে যখন পূজো পূজো গন্ধ,শরতের আকাশে পেজা তুলোর রাশির মতো মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে। মাঠে ঘাটে কাশ ফুলের ছড়া ছড়ি বাতাশে শিউলি ফুলের গন্ধে মাতোয়ারা আবাল বৃদ্ধ বনিতা। মেতে উঠতে চলেছে শারদীয়া উৎসবে। তারই ধারা বাহিকতায় ঝিনাইদহ জেলা জুড়ে ছয়টি উপজেলাতেও হিন্দু তথা স্বনাতন ধর্মালম্বীদের শারদিয় দূর্গা উৎসব আজ থেকে শুরু । বছর ঘুরে আবারো হিন্দু তথা স্বনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রাণের শারদীয় দুর্গা পূজার আগমনের সুবাতাস বইতে শুরু করেছে। ১৫ তারিখ মহা-ষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে শুরু হবে শারদীয়া দুর্গাপূজা আগামী ১৯ তারিখে প্রতিমা বিসর্জনের পর এর সমাপ্তি ঘটবে। এবার মা দুর্গা আসবেন ঘোড়ায় চড়ে, আর পূজা শেষে ফিরে যাবেন দোলায় করে।
দূর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গার আগমনী বার্তায় ভক্তকূলে আনন্দের জোয়ার সৃষ্টি হয়ে থাকে। এ কারণে ঝিনাইদহ জেলার সকল উপজেলার হিন্দু তথা স্বনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাড়িতে শারদীয় এ উৎসবের হাওয়া বইছে। কাদা-মাটি, বাঁশ, খড়, সুতলি দিয়ে শৈল্পিক ছোঁয়ায় তিলতিল করে গড়ে তোলা দেবী দুর্গার প্রতিমা তৈরিতে দিনরাত ব্যস্ত সময় পার করছেন পুরুষের পাশাপাশি নারী কারিগররা। ঝিনাইদহ জেলার অয়েকটি এলাকায় গিয়ে চারিদিকে ব্যস্ততার ছাপ পরিলক্ষিত হয়। প্রতিমা তৈরির পর শুরু হবে রূপায়নের কাজ শেষ। রঙ-তুলির শৈল্পিক আঁচড়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে দেবীর মনকাড়া প্রতিচ্ছবি। তাই যেনো ঘুম নেই হিন্দু তথা স্বনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাড়িতে। শুধু প্রতিমা তৈরি নয়, বিশাল বাজেটের বিভিন্ন থিমের আদলে তৈরি করা হয়েছে প্রতিমা মন্ডপও।
ঐতিহ্য ধরে রেখে এবারও বিশাল বাজেটের প্রতিমা মন্ডপগুলো সাজানো হচ্ছে আকর্ষণীয় থিমের আদলে। ঝিনাইদহ পূজা উদযাপন পরিষদের জেলার সভাপতি ও ঝিনাইদহ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম-সাধারন সম্পাদক বাবু অনক কান্তি দাষ বলেন, ‘বিগত দশ বছরের যে রেকর্ড এবার আমরা তা ভাঙ্গার চেষ্টা করছি।এবার ঝিনাইদহ জেলায় ৪৪৬ টি পূজামন্ডপে অনুষ্ঠিত হবে শারদীয়া দুর্গোৎসব।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বিনয় কৃষ্ঞ বিশ্বাস বলেন, ‘দেশের পরিস্থিতি ভাল আর পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। তারপরও আমরা প্রত্যেক পূজা মন্ডপকে নির্দেশ দিয়েছি ১৫ থেকে ২৫ জন ব্যাচধারী স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখার জন্য। সন্দেহজনক কাউকে দেখলে চার্জ করার জন্য।

এ বছর জেলার ৬টি উপজেলায় ৪৪৬টি ম-পে দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হবে। এরমধ্যে ঝিনাইদহ সদর উপজেলায় ১০৪টি, পৌরসভায় ২২টি, শৈলকুপা উপজেলায় ১২১টি, কালিগন্জ উপজেলায় ১০১টি, মহেশপুর উপজেলায় ৪২টি,হরিণাকুন্ডু উপজেলায় ২৬টি ও কোটঁচাদপুর উপজেলায় ৫২টি ম-পে চলছে শেষ মুহূর্তের সাজসজ্জা। মৃৎ শিল্পীরা রাতদিন পরিশ্রম করে রংতুলির আঁচরে রাঙিয়ে তুলছেন দেবী দুর্গাকে। তৈরি হচ্ছে সুদৃশ্য বিশাল বিশাল প্যান্ডেল। আগামী ১৫ অক্টোবর সোমবার ষষ্ঠি বোধনের মাধ্যমে পাঁচ দিনব্যাপী এ উৎসব শুরু হবে। ম-পগুলোতে আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় ইতি মধ্যেই জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

এছাড়াও ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার মোঃ হাসানুজ্জামান সকল পূজা কমিটির নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলেছেন। শারদীয় দুর্গা পূজা নির্বিঘ্ন ও উৎসব মুখর পরিবেশে উদযাপনের লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বিষয়ক বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন বলে জানান। এদিকে শারদীয় দুর্গোৎসবকে ঘিরে জেলা শহর ও উপজেলা শহরের বিপণী বিতানগুলো রাতভর ক্রেতা বিক্রেতাদের ভিড়ে জমজমাট। এছাড়াও হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ী বাড়ী চলছে শারদীয় দুর্গোৎসবের শেষ প্রস্তুতি।

শহরের কেপি বসু সড়কের বারোয়ারী পূজা মন্ডপ এবং পৌর সভার সভাপতি বিকাশ রায় ও সাধারন সম্পাদক সাধন সরকার জানান, এবছর বারোয়ারী পূজা কমিটির দুর্গোৎসব আয়োজনের ১০০ বছর পূর্তি হবে। এজন্য আমাদের আয়োজনের প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে।

জেলা পূজা উদযাপন পরিষেদের সাধারণ সম্পাদক প্রফুল্ল সরকার জানান, গত বারের চেয়ে জেলায় ৩৮ টির অধিক ম-পে এবার শারদীয় দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আমরা আশা করছি কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই নির্বিঘ্নে এবারের শারদীয় উৎসব সার্বজনীন রুপ পাবে।

জেলা হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি বাবু নারায়ন চন্দ্র বিশ্বাস জানান, ধর্ম যার যার উৎসব সবার আমরা আশা করছি সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির মধ্য দিয়ে এবারের উৎসব সফলভাবে অনুষ্ঠিত হবে।তিনি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে শারদীয় দুর্গোৎসবের শুভেচ্ছা জানান।

ঝিনাইদহ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এমদাদুল হক শেখ জানান, প্রতিটি ম-পকে ঘিরে ইতিমধ্যেই আমরা বিশেষ নিরাপত্তা গ্রহণ করেছি। এছাড়াও স্ট্রাইকিং ফোর্স ও কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে।

স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে জাতির জনক শেখ মুজিবর রহমান একটিঅসাম্প্রদায়িক,যৌক্তিক
বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন । নানা রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাস্প নষ্ট করেছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এবং উৎসবের আনন্দ । ২০০১ সালের ১ অক্টোবর ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক অপশক্তির তান্ডব দেখা গেছে । সাম্প্রদায়িক শক্তি আবারও সংগঠিত হচ্ছে । আর দূর্বলের উপর সবলের অত্যাচার-নির্যাতনের মাত্রা ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে । দ্রব্য মূল্যের উদ্ধগতি সাধারন মানুষের জন্য অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে । ক্ষমতাসীন শাসক ও ক্ষমতাচ্যুত শাসকের দ্বন্দে উত্তপ্ত হচ্ছে রাজনীতি । চাঁদাবাজি,সন্ত্রাস টেন্ডারবাজি,ক্ষমতার অপব্যবহার কখনো কখনো অসুরদের নির্মমতাকেও হার মানিয়েছে।তাই,এবারের “দূর্গা পূঁজা” হোক সাম্প্রদায়িক অপশক্তির রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক শেকড় উচ্ছেদ এবং গনতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মানের প্রেরনা।
নৌকাতে মা দিল পাড়ি. মা আসছেন বাপের বাড়ি, সংগে তাহার ছেলেমেয়ে, কি সুন্দর বাহন নিয়ে,অষটমীতে ঢাকের বাড়ি. মা পড়বেন নতুন শাড়ী. খুশিতে তাই নাচে মন, ভালো কাটুক পুজোর ক্ষণ। মা দূর্গা কি জয়।শিব বাবা কি জয়।(লক্ষ্ন) লক্ষ্মি সরস্বতী কি জয়।গণেশ কার্তিক কি জয়।হরে হরে বম! বম!আসবে কবে বছর ঘুরে।জয় মা দুর্গা।