জেল হত্যা দিবসে খুলনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান!

0
1200

বিশেষ প্রতিবেদক, খুলনাটাইমস :

খুলনার দাকোপ উপজেলায় জাতীয় চার নেতার স্মরণে আলোচনা সভার শেষে প্রাণবন্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।

 

শনিবার (০৩ নভেম্বর) জেলহত্যা দিবস ছিল। দিবসটি উপলক্ষে সারা দেশে আওয়ামীলীগের প্রতিটি সংগঠন জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিত রেখে বিভিন্ন কর্মসূচীর মধ্যদিয়ে যখন শোক পালন করেছেন তখন দাকোপ উপজেলার লাউডোব ইউনিয়নে আয়োজন করা হয়েছে প্রাণবন্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। অনুষ্ঠানটির আয়োজন করছেন লাউডোব ইউপি চেয়ারম্যান সরোজিত কুমার রায় আর উদ্বোধন করেছেন খুলনা-১ আসনের সাংসদ পঞ্চানন বিশ্বাস। অনুষ্ঠানটি সফল করার জন্য উপজেলা জুড়ে এক সপ্তাহ ধরে পোষ্টারিং এবং গাড়িতে উচ্চ শব্দযন্ত্র ও ড্রাম বাজিয়ে প্রচার করে কর্তৃপক্ষ।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ইউনিয়নের লাউডোব বাদামতলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের উর্দ্ধমুখী সম্প্রসারণ ও বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে বীণাপানি স্মৃতিমুক্ত মঞ্চের শুভ উদ্বোধন উপলক্ষে উক্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানটি ঘিরে জনমনে প্রশ্নের ঝড় উঠেছে। উল্লেখ্য, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করার পর স্বাধীনতা সংগ্রামের বীর পুরুষ সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমেদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ও এএইচএম কামরুজ্জানকে গ্রেফতার করে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। তিন নভেম্বর কালোরাতে মুত্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী ওই জাতীয় চার নেতাকে বন্দী অবস্থায় কারাঅভ্যন্তরে গুলি করে হত্যা করা হয়।

 

এরপর থেকে ঐতিহাসিক জেলহত্যা দিবস হিসাবে দেশবাসী, সামাজিক সংগঠনসহ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রতিবছর দিবসটি শোক দিবস হিসেবে গভীর শ্রদ্ধার সাথে পালন করে থাকেন। এমন একটি রাষ্ট্রীয় বিশেষ শোকের দিনে কেনো প্রাণবন্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হল এ নিয়ে সাধারণ জনমনে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। তারা এ বিষয়ে কোনো প্রশ্নের সঠিক উত্তর খুঁজে পাচ্ছে না। এদিকে অনুষ্ঠানটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় উঠেছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দাকোপ উপজেলা আ’লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ আবুল হোসেন, উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান বিনয় কৃষ্ণ রায়, জেলা পরিষদের সদস্য জয়ন্তী রানী সরদার, রজত কান্তি শীল, চালনা পৌরসভার মেয়র সনত কুমার বিশ্বাসসহ বটিয়াঘাটা উপজেলা আ’লীগের বহু নেতা ও কর্মী।

 

এ বিষয়ে জানার জন্য আয়োজক কমিটির সভাপতি সরোজিত রায়ের মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে ফোন বেজে গেলেও  এ প্রতিবেদকের ফোন রিসিভ করেননি।

এ নিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য পঞ্চানন বিশ্বাস টেলিফোনে খুলনাটাইমসকে  বলেন, এ ধরণের কোন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ওই মঞ্চে আলোচনা সভাকালীন হয়নি। ওই প্রতিষ্ঠানের ভবন ও মঞ্চ উদ্বোধন করার কথা ছিল আরো দুই তিনদিন আগে। কিন্তু আবহাওয়া খারাপ থাকায় সেটি ঘটনার দিনে উদ্বোধন করা হয়েছে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পোষ্টারে আপনার নাম উদ্বোধক হিসেবে রয়েছে জানতে চাইলে তিনি নিশ্চিত করে বলেন এ ব্যাপারে তাঁর কিছু জানা নেই। তিনি আরও বলেন, জেল হত্যা দিবসে এই ধরণের সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠান মোটেই কাম্য নয়।

স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা সন্তোষ কুমার রায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সম্পর্কে মন্তব্য করে খুলনাটাইমসকে  বলেন, জেলহত্যা দিবসে এ ধরণের অনুষ্ঠান করা মানে জাতীয় চার নেতাকে অসম্মান করা।

 

দাকোপ উপজেলা আ’লীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক অসিত বরণ সাহা বলেন, জাতীয় চার নেতার শোক দিবসে এ ধরণের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনকারী এবং অতিথিরা প্রমান করেছেন তারা আ’লীগকে এবং চার নেতাকে কতটা শ্রদ্ধা করেন।

অনুষ্ঠানের দর্শকদের সূত্রে জানা যায়, লাউডোব বাদামতলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের উর্দ্ধমুখী সম্প্রসারণ ও বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে বীণাপানি স্মৃতিমুক্ত মঞ্চের উদ্বোধনের পরে আলোচনা সভা শেষে একই মঞ্চে সন্ধ্যা সাতটার দিকে থেকে শুরু করে রাত ১২টা পর্যন্ত মেগা কনসার্ট চলে।