জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে খুলনার ৩৮ প্রস্তাব

0
516

নিজস্ব প্রতিবেদক:
মৃত শিল্প নগরী খুলনার অর্থনীতির চাকা সচল করতে ৩৮ প্রস্তাব তুলে ধরা হয়েছে। বছরের পর বছর বন্ধ খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিলস, হার্ডবোর্ড মিলস ও দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরির পরিত্যাক্ত সম্পত্তিতে ইকোনোমিক জোন স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে ঢাকায় চলমান জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে। বন্ধ পাটকল বেসরকারিকরণের মাধ্যমে চালু করার প্রস্তাবও করা হয়েছে। এতে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এ সম্মেলনে খুলনার উন্নয়নে ২৪টি মন্ত্রনালয়ে পেশ করা হয়। বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদের সাথে মুক্ত আলোচনায় এ প্রস্তবনা তুলে ধরা হয়। পাঁচদিন ব্যাপী সম্মেলন ১৪ জুলাই থেকে শুরু হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের সূত্র জানান, খুলনার উন্নয়নে তুলে ধরা প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা হয়েছে শিল্প নগরী মৃত প্রায়। বিসিআইসি নিয়ন্ত্রিত নিউজপ্রিন্ট, হার্ডবোর্ড ও দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরী দীর্ঘদিন বন্ধ। হাজার কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হয়েছে। কারখানার জমি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। এসব জায়গায় অবৈধ দখলদাররা অনুপ্রবেশ করছে। একই প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে। পাটকলগুলো রুগ্ন, সরকারি পাটকলে উৎপাদন ক্ষমতা ৫০ শতাংশ নেমে এসেছে। পাট শিল্পে বৈচিত্রতা নেই। বিসিআইসির নিজস্ব গোডাউন না থাকায় ইউরিয়া সার খোলা আকাশের নিচে রয়েছে। এমূহুর্তে নিউজপ্রিন্ট ও হার্ডবোর্ড মিলে বিসিআইসির সার রাখার প্রস্তাবনাও রয়েছে।
স্থানীয় অন্যান্য সূত্র জানায়, লোকসানের অজুহাতে খুলনার দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরি ২০১০ সালের ১৮ আগস্ট বন্ধ হয়ে যায়। সে সময় ফ্যাক্টরির ইজারা গ্রহীতা প্রতিষ্ঠান ভাইয়া গ্রুপ শ্রমিক-কর্মচারীদের ১০ মাসের মজুরি, প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্রাচ্যুইটির প্রায় ছয় কোটি টাকা বকেয়া রাখে। আকস্মিকভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে চরম বিপদে পড়েন এখানকার সাড়ে ৭শ’ শ্রমিক-কর্মচারী-কর্মকর্তা। অন্যদিকে ২০০২ সালে খুলনার হার্ডবোর্ড মিলটি লে অফ ঘোষণা করে সরকার। ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বরে সেটি আবার চালু করা হয়। তখন কাজ নেই, মজুরি নেই ভিত্তিতে মিল চলছিল। তবে জোড়াতালি দিয়ে চলা মিলটির লোকসান বেড়েই যাচ্ছিল। অর্থের সংকটে পড়ে ২০১১ সালের জুলাইয়ে এটি আবার বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমান সরকার প্রথম মেয়াদে ক্ষমতায় আসার আগে নির্বাচনী ইশতেহারে সরকারি বন্ধ শিল্পকারখানা চালুর ঘোষণা দেয়। পরে ২০১১ সালে প্রধানমন্ত্রী খুলনা সফরে এসে হার্ডবোর্ড মিলটি চালুর ঘোষণা দেন। এরই অংশ হিসেবে ১০ কোটি টাকা মূলধন জোগান দিয়ে মিলটি চালুর উদ্যোগ নেয় বিসিআইসি। ২০১৩ সালের আগস্ট মাসে মিলটি চালু করা হয়। তবে তিন মাসের মধ্যে আবার বন্ধ হয়ে যায় উৎপাদন। তখন শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তা মিলে কর্মরত ছিলেন প্রয় ২শ’ জন।
এদিকে চলতি মূলধন ও ফার্নেস অয়েলের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে ২০০২ সালের ৩০ নভেম্বর বন্ধ করা হয় নিউজপ্রিন্ট মিলটি। বন্ধ করে দেয়ার সময় ওই কারখানায় দুই হাজার ৩শ’ স্থায়ী এবং এক হাজার ২শ’ অস্থায়ী শ্রমিক-কর্মচারী কাজ করতেন। বন্ধের পর থেকে মিলটির দেখভাল করছে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি করপোরেশন। বন্ধ মিলটির পেছনে এই ১৭বছরে বিভিন্ন খাতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১২ কোটি টাকা। অপরদিকে অবহেলা ও অযতেœ মিলটির কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি নষ্ট হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, অন্যান্য প্রস্তবানার মধ্যে রয়েছে দাকোপ উপজেলার অনাবাদী জমিতে অর্থনৈতিক জোন গড়ে তোলা, উপকূলবর্তি উপজেলা কয়রায় সাইক্লোন শেল্টার নির্মান, সুন্দরবন এলাকায় চিংড়ির পোনা আহরন করায় অন্যান্য প্রজাতির মাছ নষ্ট থেকে রক্ষা করতে জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থান, পাইকগাছা উপজেলায় ১৩২/১৩৩ কেভি গ্রীড উপকেন্দ্র নির্মান করে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের নিরসন, কাবিখার চাল সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য না হওয়ায় শ্রমিকের মজুরী হিসেবে চালের পরিবর্তে টাকা বরাদ্দ, দাকোপ উপজেলায় ৩১,৩২ ও ৩৩ পোল্ডারে লবনাক্ত সহনশীল আবাদ, খুলনা নগররের প্রাণকেন্দ্রে ১ বিঘা জমিতে শিশু একাডেমী মিলনায়তন নির্মান, খুলনা-ঢাকা স্টীমার সার্ভিস সপ্তাহে একদিনের পরিবর্তে দুই দিনের সার্ভিস, বিশুদ্ধ খাওয়ার পানির লক্ষে গভীর নলকুপের বোরিং এক হাজার ফুটের পরিবর্তে ১৫শ’ ফুট, জেলা প্রশাসনের নিচতলা থেকে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত স্থানান্তর, ফুলতলার দক্ষিনডিহিতে রবিন্দ্র স্মৃতি সংগ্রহশালা, দিঘলিয়া সেনহাটিতে কবি কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার ইনস্টিটিউট, পাইকগাছার রাড়–লিতে বিজ্ঞানী পিসি রায়ের বাড়ি ও পৈত্রিক ভিটের উন্নয়নে অর্থ বরাদ্দ ইত্যাদি।
উন্নয়ন প্রস্তাবনার বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মোঃ ইকবাল হোসেন বলেন, বিভিন্ন সময়ে এসব উন্নয়নের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছিল। জেলা প্রশাসক সম্মেলনে সেগুলোই উপস্থাপন করা হয়েছে। বন্ধ বড় মিলগুলোর জায়গাতে ইকোনমিক জোন গড়ে তোলা যেতে পারে। এতে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। তবে এর বাইরেও নতুন অনেক প্রস্তাবনাই এসেছে।