জুট স্পিনার্সের মালিকের সাথে দাবী আদায় কমিটির আতাত! আন্দেলন স্থগিত : পাওনা নিয়ে সন্দেহ

0
452

ফুলবাড়ীগেট (খুলনা) প্রতিনিধি : শিরোমনি শিল্পাঞ্চালের অঘোষিত বন্ধকৃত ব্যাক্তিমালিকানা জুট স্পিনার্স মিলের শ্রমিকদের সমস্যা সমাধানের লক্ষে দীর্ঘ দুই বছর আন্দোলন সংগ্রাম যখন তুঙ্গে মালিক পক্ষ শ্রমিকদের দাবী বাস্তবায়নে বিভিন্ন মহলের চাপের মুখে ঠিক সেই মুহুর্তে মালিকের পাতা ফাঁদে দাবী আদায় কমিটি ধরা দিয়ে শ্রমিকদের দীর্ঘদিনের বকেয়া পাওনা পরিশোধের পথ বন্ধ করে দেওয়া হলো। শ্রমিকদের অভিযোগ মালিকের সাথে দাবী আদায় কমিটির আতাতে আন্দোলন স্থগিত হওয়ায় ঈদে তাদের বকেয়া পাওনা না পাওযার সন্দেহ রয়েছে। মিল মালিকের ঢাকাস্থ প্রধান কার্যালয়ে দাবী আদায় কমিটির বৈঠকের পর চলমান ধারাবাহিক আন্দোলনকে ষড়যন্ত্র করে কৌশলে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে সাধারণ শ্রমিকদের অভিযোগ । আসছে ঈদকে সামনে রেখে শ্রমিকরা তাদের বকেয়া পরিশোধের কোন পদক্ষেপ গ্রহন না করায় এবং দাবী আদায় কমিটির নেতৃবৃন্দের ভূমিকা নিয়ে শ্রমিকদের মাঝে অসন্তোষ বিরাজ করছে। শ্রমিক সুত্র বলছে দাবী আদয়ে যে কোন মুহুর্তে শ্রমিকরা রাজপথে নামতে পারে ।
২০১৬ সালের ২৫ আগস্ট মিলটির মালিক অত্যান্ত কৌশলে উৎপাদন বন্ধ করে মিলটি অঘোষিত বন্ধ করে রাখায় মিলের প্রায় দুই হাজার শ্রমিক-কর্মচারী বেচে থাকার তাগিদে রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম শুরু করে। তিলে তিলে আন্দোলন সংগ্রাম বেগবান হয়ে শ্রমিকদের অংশগ্রহনে রাজপথ উত্তপ্ত হয়ে উঠে। দফায় দফায় আন্দোলন সংগ্রাম কর্মসুচি ঘোষনা করে তা বাস্থবায়ন করা হয়। সর্বশেষ তৃতীয় দফার রাজপথ অবরোধ কর্মসুচি পালন শেষে মালিকের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে মামলা এবং ঢাকাস্থ মালিকের বাসভবন ঘেরাও কর্মসুচি ঘোষনা দেওয়া হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১১ মে মিল মালিকের বাড়ী ঘেরাও কর্মসুচির দিনখন ঠিক করা হয়। সেই মুহুর্তে মিলের মালিক আন্দোলনের দাবী আদায় কমিটির নেতৃবৃন্দকে ঢাকায় ডাকেন। ঘেরাও কর্মসুচি বাদ দিয়ে ১১ মে শুক্রবার ঢাকাস্থ মিলের প্রধান কার্যালয়ে রাতভর মালিকের সাথে দাবী আদায় কমিটির আহবায়ক আবুল কালাম আজাদ, সদস্য সচিব মনিরুল ইসলাম, সদস্য নুরুল ইসলাম, আসাদুজ্জামান,শেখ ইকবাল হোসেন, মোঃ আরিফুল ইসলাম এবং সিপিবি নেতা মোল্যা আঃ সাত্তার বৈঠক করেন। বৈঠকে কোম্পানীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোহাম্মদ শামস-উজ জোহা ১৬মে বৃধবার শ্রমিকদের দুই সপ্তাহের মুজুরী ও ষ্টাফ-অফিসারদের ১ মাসের বেতন প্রদান, ২৬ জুন শনিবার মিলের বিদ্যুৎ সংযোগ, যন্ত্রপাতি মেরামত ও রক্ষনাবেক্ষনের কাজ শুরু করা হবে এবং পবিত্র রমজান মাসের ২৪ তারিখের মধ্যে ২০১৬ সালের পবিত্র ঈদ উল আযহার বোনাস ও শ্রমিকদের এক সপ্তাহের মুজুরী এবং ষ্টাফ ও কর্মচারীদের এক মাসের বেতন প্রদান করা হবে বলে তিনটি সিদ্ধন্ত নেতৃবৃন্দকে জানালে নেতৃবৃন্দ সন্তোষ্ট ভাবে মেনে নিয়ে খুলনা ফিরে আসে। নেতৃবৃন্দের অল্পতে সহজে মালিকের কথা মেনে নিয়ে নিরবে ফিরে আসায় শ্রমিকদের মধ্যে নেতৃবৃন্দের ভূমিকা নিয়ে সন্দেহের দানা বাধে। শেষ পর্যন্ত শ্রমিকদের সন্দেহ সত্য হলো মালিকের দেওযা প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী গত ১৬মে বৃধবার শ্রমিকদের দুই সপ্তাহের মুজুরী ও ষ্টাফ-অফিসারদের ১ মাসের বেতন প্রদানের কথা থাকলেও মিলে গিয়ে শ্রমিকরা কাউকে না পেয়ে খালি হাতে হতাশ হয়ে ফিরে যান। মালিকে দেওয়া প্রতিশ্রæতির প্রথম দফাই বাস্তবায়ন না হওয়ায় নেতৃবৃন্দের ভূমিকায় শ্রমিকদের মাঝে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। ঈদকে সামনে রেখে শ্রমিকদের দাবী আদায় কমিটির নেতৃবৃন্দের ভূমিকায় শ্রমিকরা নিজেরা একত্রিত হয়ে আন্দোলনে নামবে বলে একাধিক শ্রমিক জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য শিরোমণির লাভজনক এই প্রতিষ্ঠানটি গত ২০১৬ সালের ১ জুন মালিনা জটিলতায় মিলটি উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। মিলটি বন্ধের পর গত ৪ এপ্রিল ২০১৭ সালে প্রায় ৮ লক্ষ টাকা বকেয়ার দায়ে মিলটির বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন করা হয় যা আজ পর্যন্ত সংযোগ দেওয়া হয়নি। মিলটির বর্তমানে শ্রমিকদের ৮৪ সপ্তাহের মজুরী, কর্মচারীদের ২৫ মাসের বেতন, কর্মকর্তাদের ২৬ মাসের বেতন, শ্রমিক কর্মকর্তাদের ৩টি বোনাস, পদত্যাগকৃত শ্রমিকদের ইন্সেুরেন্স এর টাকা, মজুরী কমিশনের এরিয়ার টাকা, ইনক্রিমেন্ট এরিয়ার, গ্রাইচুটি সহ বিভিন্ন বকেয়া বাবদ প্রায় ১২ কোটি ৭৯ লক্ষ ৩৩ হাজার ৮শত ৮০ টাকা বকেয়া রয়েছে বলে সিবিএ নেতৃবৃন্দ দাবী করেছেন।