চলতি মাসেই চালু হতে যাচ্ছে খুলনার আধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন রেল স্টেশন

0
1792

সাইমুম মোর্শেদঃ বহুত জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে দীর্ঘ অপেক্ষার পর খুলনার মানুষের প্রত্যাশিত আধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন রেল স্টেশন এই মাসেই চালু হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্স এর মাধ্যমে স্টেশনটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন বলে নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে।ইতিপূর্বে রেলস্টেশনটি চলতি মাসের ১৩ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের কথা থাকলেও সময় সল্পতার কারনে তা হয়ে ওঠেনি।বর্তমানে রেল স্টেশনের প্রায় শতভাগ কাজ শেষ হয়েছে।এখন শুধু ধোয়ামোছার কাজ চলছে।নবনির্মিত খুলনা আধুনিক এই স্টেশনটি উদ্বোধন উপলক্ষে মহানগরের মানুষের মধ্য উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। প্রতিদিনই উৎসুক মানুষ দেখতে আসছেন মহানগরীর প্রানকেন্দ্রে অবস্থিত পাওয়ার হাউজ মোড়ের এ স্টেশনটি।

আধুনিক এই রেলষ্টেশন হলে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের সাথে সারা দেশের যোগাযোগ সহজ হবে।তাছাড়া, আধুনিক রেল স্টেশন চালু হলে খুলনার সঙ্গে বাংলাদেশ-ভারত রেল যোগাযোগ আরও সহজ হবে।
এ স্টেশনে একসঙ্গে ৬টি ট্রেন প্রবেশ এবং বের হওয়ার ব্যবস্থা থাকায় প্রতিদিন প্রায় ৯ থেকে ১০ হাজার যাত্রী যাতায়াত করতে পারবে।

সম্প্রতি আধুনিক এ রেলস্টেশনটি পরিদর্শন করেছেন খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক এবং রেলওয়ে মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য মিজানুর রহমান মিজান।সেসময় আরো উপস্থিত ছিলেন রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের জিএম মুজিবুর রহমান, প্রধান প্রকৌশলী (অতি.) আবু জাফর মিয়া, প্রধান বৈদ্যুতিক প্রকৌশলী প্রদীপ কুমার সাহা ও আধুনিক রেল স্টেশন নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক রিয়াদ আহমেদসহ রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

রেলওয়ে মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান মিজান বলেন, বহুল প্রতিক্ষিত আমাদের এই আধুনিক রেলষ্টেশন চালু হলে ভারত-খুলনার যাত্রীদের খুলনা স্টেশনেই ইমিগ্রেশন ও চেকিংসহ সকল ভ্রমণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন এবং ভাড়া কমানোর বিষয়েও দু’ দেশের মধ্যে আলোচনা করে নিরাপদ ও সহজ যাত্রার দ্বার উন্মোচন করা হবে।খুলনার উন্নয়নে যোগাযোগ  ব্যাবস্থা আরো একধাপ অগ্রসর হবে বলেও জানান তিনি।

তিনি আরো বলেন, স্টেশনটি আরও দৃষ্টি নন্দন ও এর সৌন্দর্য্য বর্ধনের লক্ষে হাউজ বিল্ডিং’র ভবনটিও সরিয়ে ফেলা হবে। এ স্টেশন থেকেই বাংলাদেশ-ভারত নিরাপদ রেল যোগাযোগের মূল সেতুবন্ধ তৈরি হবে। যাত্রা আরও সহজ করতে ওয়ানস্টপ চেকিং ব্যবস্থা এবং ভাড়া কমানোর জন্যও পর্যায়ক্রমে উদ্যোগ নেয়া হবে।

এ সময় নির্মাণ ব্যয়, নিম্নমানের স্লিপার এবং রেলের জায়গা অবৈধ দখল সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে রেলওয়ের রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের জিএম মুজিবুর রহমান বলেন, নির্মাণ ব্যয় ৬০ কোটি টাকা অতিক্রম করছে না। ২০০৯ সালে আমদানিকৃত স্লিপার কিছুটা পুরাতন হওয়ায় ত্রুটি ধরা পড়েছে। তবে, ত্রুটিপূর্ণ স্লিপার পরিবর্তন করা হচ্ছে। এছাড়া অবৈধ দখলদারদের বিষয়েও কর্তৃপক্ষ সতর্ক রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

খুলনা রেলওয়ে ষ্টেশনের উর্ব্ধতন উপ- সহকারী প্রকৌশলী ওয়ার্কস মোঃ হাফিজুর রহমান বলেন, খুলনা রিমডেলিং রেলষ্টেশনের নির্মাণ কাজ সম্পূর্নভাবে শেষ হয়েছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ষ্টেশন এখনও বুঝে নেয়া হয়নি। কারণ ষ্টেশন বুঝে নিয়ে ব্যবহার না হলে এটি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই যেদিন এটি ট্রেন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত হবে সেদিন থেকেই কাজ বুঝে নেয়া হবে।

খুলনার আধুনিক রেলস্টেশন নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক মোঃ রিয়াদ আহমেদ বলেন, স্টেশনের সব কাজ প্রায় শেষ।এখন প্রধানমন্ত্রী সময় দিলে যে কোনো দিন যাত্রী চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে ষ্টেশনটি।

জানা যায়, খুলনা আধুনিক রেলওয়ে স্টেশনে তিনটি প্লাটফর্মে ছয়টি লাইন দিয়ে ছয়টি ট্রেন থেকে যাত্রীরা ওঠা-নামা করতে পারবে। এছাড়া থাকবে ছয়টি টিকিট কাউন্টার, ফায়ার ফাইটিং ব্যবস্থা, প্রথম শ্রেণি ও শোভন যাত্রীদের আলাদা ওয়েটিং রুম, ভিআইপিদের জন্য দুটি ওয়েটিং রুম, নারী-পুরুষের আলাদা বাথরুম, রেস্টুরেন্ট, ব্যাংক, নামাজ ঘর, আবাসিক হোটেল, পিএবিএক্স টেলিফোন ব্যবস্থা, প্রতিটি প্লাটফর্মে যাত্রীদের বসার ব্যবস্থাও থাকবে। সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার জন্য রেল স্টেশনটিতে চালু থাকবে সিসি ক্যামেরার সুবিধা।
এছাড়াও তৃতীয় তলায় থাকছে রেলওয়ের প্রকৌশলীদের অফিস কক্ষ। স্টেশন চত্বরে থাকছে দৃষ্টি নন্দন ফুলের বাগান এবং অধিক সংখ্যক গাড়ি পার্কিং’র ব্যবস্থাও।

উল্লেখ্য, ব্রিটিশ আমলে নির্মিত খুলনার পুরানো রেল স্টেশনের বদলে একটি আধুনিক রেল স্টেশন নির্মানের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল খুলনাবাসীর। এর আগে চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে আধুনিক রেল স্টেশন নির্মাণ সম্পন্ন হলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় খুলনায় নির্মাণ কাজ শুরুতেই বিলম্ব হয়।

কয়েকবার দরপত্র জটিলতাসহ নানা কারণে সময়ক্ষেপণের পর বহু কাঙ্খিত আধুনিক রেল স্টেশন নির্মাণ কাজ ২০১৫ সালের এপিলে শুরু হয়। ৫৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৮ মাস মেয়াদে প্রকল্পের কাজ শেষ করার সময়সীমা নির্ধারিত ছিল। কিন্তু ঠিদাকারি প্রতিষ্ঠান তমা কনস্ট্রাকশন নির্ধারিত সময় কাজ শেষ করতে না পারায় দফায় দফায় সময় বৃদ্ধির কারণে নির্মাণ ব্যয় ৫৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ৬১ কোটি ২৭ লাখ টাকা।

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না হওয়া এবং প্রকল্পে নতুন পানির ওভার হেড ট্যাঙ্কি যুক্ত হওয়ায় অতিরিক্ত ৫ কোটি ২৮ লাখ টাকা ব্যয় বেড়ে যায়। এরই মধ্যে কনসালটেন্ট প্রতিষ্ঠানের ডিজাইনে ত্রুটির কারণে নির্মানাধীন ২নম্বর প্লাট ফর্মের ছাদে ফাঁটল দেখা দেয়। পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠানটিকে কালো তালিকাভূক্ত করে বুয়েটের প্রকৌশলীদের পরামর্শে প্লাট ফর্মের ছাদের দু’দিকে নতুন করে ভীম নির্মাণ করা হয়।

উল্লেখ, গত ২০০৭ সালে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ‘রিমডেলিং অব খুলনা স্টেশন অ্যান্ড ইয়ার্ড’ নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। একাধিকবার সংশোধনের পর ২০১৪ সালের ২৬ জানুয়ারি প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন করা হয়। ২০১৫ সালে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত কমিটিও অনুমোদন দেয়। ওই বছরের এপ্রিল মাস থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে খুলনায় আধুনিক রেল স্টেশনের নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। ২০১৬ সালের অক্টোবরে এ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। ১৮ মাস মেয়াদি এ কাজে ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ৫৬ কোটি টাকা। কাজে ধীর গতি পরিলক্ষিত হওয়ায় ব্যয় বাড়িয়ে তা করা হয়েছে ৬০ কোটি ৫৫ লাখ টাকা।