ঘরবাড়ি গিলে খাচ্ছে পশুর নদী

0
1143
All-focus

আজিজুর রহমান,খুলনা টাইমস :
দীর্ঘ চার দশক ধরে পশুর নদীর ভাঙ্গনে বিলিন হচ্ছে বসতবাড়ি। এসব ঘরবাড়ি গিলে খাচ্ছে খুলনার দাকোপ উপজেলার চালনা পৌরসভার নলোপাড়ার পাশদিয়ে বয়ে যাওয়া পশুর নদী। তবে ভাঙ্গনের কবলে বিস্তীর্ণ এলাকা এখন নদীতে।
ভাঙনে হারিয়ে গেছে শত শত বিঘা ফসলীজমি, রাস্তাঘাট, হাট-বাজার, বেড়িবাঁধ এবং বিলিন হয়েছে বসতভিটা। নিঃস্ব হয়েছে হাজারও মানুষ। সেখানে রয়েছে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ, সেটিও রয়েছে ঝুঁকিতে।

এদিকে বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকে নলোপাড়ায় পশুর নদীর ভাঙ্গন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। গত এক বছর ভাঙনে প্রায় ৭০টি পরিবার অন্যত্র চলে যেতে হয়েছে। এমন অবস্থায় পৌরসভার নলোপাড়ার বাসিন্দারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।
হাঁটতে হাঁটতে পশুর নদীর তীরে গিয়ে দেখা যায়, নদীর খরস্রোতে মারাত্মক হুমকির মুখে রয়েছে কয়েকটি ঘরবাড়ি। তীব্র ভাঙ্গনের সামনে ছোট ছোট সন্তাদের নিয়ে নদীর পাশে বসবাস করছে হতদারিদ্র পরিবারগুলি।

ভাঙ্গনের শিকার নলোপাড়ার বাসিন্দা মো. বাদশা গাজী(৩৬) খুলনা টাইমসকে  বলেন, পশুর নদীর ভাঙ্গনে আমার বসতভিটা প্রায় বিলিন হওয়ার সম্মুখে। নদীতে জোয়ার হলে পানিতে ডুবে যায় ঘরবাড়ি। তখন খুব ভয়ে থাকতে হয়। তিনি আরও বলেন, জনপ্রতিনিধিরা ভোটের সময় হলে এখানে এসে অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়ে যায়। কিন্তু ভোট হয়ে গেলে আর ফিরে দেখেনা আমাদের বাড়ি আছে কিনা।
পশুর নদীর ভাঙনে তিনবার বিলিন হয়েগেছে মো. নুরুল হকের(৭২) বাসযোগ্য ঘরবাড়ি। তিনি বলেন, যেভাবে ঘরবাড়ি গিলে খাচ্ছে পশুর নদী। তাতে এখানে আর বসবাস করা সম্ভয় নেয়। খরস্রোতে সম্প্রতি ভেঙ্গে গেছে আমাদের বেশ কয়েকটি বসতবাড়ি। তিন দফায় পশুর নদীর ভাঙ্গনে নিজস্ব ভিটা বাড়ি বিলিন হওয়ার পর এখন অন্যের বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসাবে জীবন ধারণ করে চলতে হচ্ছে।
নদীর পাশে ট্রলারে আলকাতরা লাগাছিল নলোপাড়ার বাসিন্দা মহাসিন সরদার(৫০)। তিনি বলেন, বাসযোগ্য ঘরটি নদীর তীরে বাঁশেরদ্বারা ঝুলান্ত অবস্থায় রয়েছে। নদীতে জোয়ার হলে নির্ঘুম কাটে রাত। স্ত্রী, সন্তান নিয়ে বসে থাকতে হয় অনেক সময়। আর যখন ভাঁটা (পানি কম) হয়ে যায় তখন ঘুমিয়ে পড়তে হয়। এমনভাবে কখনো ভোরের দিকেও ঘুমাতে হয়েছে।
সোমবার দুপুরে ইসমাইল শেখ(৫৫) নামে সেখানকার একজন বাসিন্দা নদীর দিকে আঙ্গুল তুলে দেখা ছিলেন বর্তমানে নদীর তীরে দাঁড়িয়ে জরে হাঁক( আওয়াজ দিয়ে ডাক) দিয়ে ডাকলে যতদুর হাঁকের আওয়াজ শোনা যেত, ততদূর পর্যন্ত তাদের বাপদাদার সম্পত্তি ছিলো। তা সব এখন পশুর নদীর পেটে চলেগেছে।
ভাঙনের শিকার পশুর নদী পাড়ের কয়েকজন বাসিন্দা খুলনা টাইমসকে  বলেন, নদী গর্ভে তাদের সব চলে গেছে। ফসলি জমি, বসতভিটাসহ সব হারিয়ে তারা এখন নিঃস্ব। অসহায় জীবনযাপনে তারা কাঁদছে। বেঁচে থাকতে তাদের রাস্তা ও অন্যত্রে আশ্রয় নিতে হচ্ছে।

স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর মো. আইয়ুব কাজী খুলনা টাইমসকে  বলেন, পৌরসভার উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। তাছাড়া পশুর নদীর ভাঙ্গন বহুদিন ধরে অব্যাহত রয়েছে। এ ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করতে হলে কোটি কোটি টাকার প্রয়োজন। কিন্তু এতো টাকা পৌরসভায় বরাদ্দ নেয়।
বিষয়টি জানার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলি আনোয়ার হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করে কোনো সংযোগ না পাওয়ায় তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
দাকোপ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব শেখ আবুল হোসেন খুলনা টাইমসকে  বলেন, শহর রক্ষা বাঁধের জন্য পৌরমেয়র একটি প্রকল্পের মাধ্যমে বাজেট পেয়েছে। সেটি নিয়ে কিছুদিন আগে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে সভা করেছেন। তবে এখন পর্যন্ত সেটি কতদূর হয়েছে তা আমার জানা নেয়। এ সম্পর্কে জানার জন্য খুলনা-১ আসনের সাংসদ পঞ্চানন বিশ্বাসের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি ফোনটির কল ধরেনি।