খুলনা রেলওয়ের সরকারি তেল চুরি চক্রের হোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরে

0
807

এম জে ফরাজী : খুলনা রেলওয়ে স্টেশন থেকে প্রতিদিন প্রায় ২০০-২৫০ লিটার সরকারি তেল চুরি হচ্ছে। আর এ তেল চুরি চক্রের নেতৃত্বে রয়েছে ক্ষমতাসীন দলের শ্রমিক সংগঠন রেলওয়ে শ্রমিক লীগের একাধিক নেতা। সম্প্রতি র‌্যাবের অভিযানে চক্রের দুই সদস্য গ্রেফতার হলেও মূল হোতারা রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।
সূত্র জানায়, খুলনা রেলওয়ের স্টেশন মাস্টার ও এ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারদের সহায়তায় দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্নভাবে সরকারি তেল চুরি হয়। আর এই তেল চুরি চক্রের মূল হোতা স্থানীয় রেলওয়ে শ্রমিকলীগ সভাপতি জাহাঙ্গীর হাওলাদারের জামাতা মাহামুদ ওরফে ট্যারা মাহামুদ। চোর চক্রের এই হোতা শ্বশুরের ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে দীর্ঘদিন দাপটের সাথে অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে আসছে। তার সাথে চক্রে আরও রয়েছেন রেলওয়ে শ্রমিক লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর হাওলাদার, যুগ্ম সম্পাদক আকাশ হাওলাদার, শরীফুল, আশরাফসহ ১০-১২ জনের একটি চক্র। যারা প্রত্যেকই রেলওয়ের কর্মচারী। তাদের কাছ থেকে স্বল্পমূল্যে তেল ক্রয় করে স্থানীয় তিন্নি এন্টারপ্রাইজ। প্রতি লিটার ডিজেল ৫০ টাকা ক্রয় করে ৭০ টাকায় এবং মবিল ৮০ টাকা লিটার ক্রয় করে ১২০ টাকায় বিক্রয় করা হয় বলে সূত্রটি আরও জানায়।
সরকারি তেল চুরির বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটেলিয়ান (র‌্যাব)-৬ এর কর্মকর্তারা ১৮/১০/২০১৮ইং তারিখ রাতে হঠাৎ অভিযান চালায়। অভিযান চালিয়ে ঘটনাস্থল থেকে ২৪৫ লিটার চোরাই ডিজেল ও ১২০ লিটার মবিলসহ স্থানীয় মেসার্স তিন্নি এন্টারপ্রাইজের ২ জনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলেন ৫নং ঘাট এলাকার মোতালেব হাওলাদারের ছেলে সজল হাওলাদার (২২) ও আব্দুল খালেকের ছেলে মো. মালেককে (২৭)। সেসময় র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে চোর চক্রের সদস্যরা পালিয়ে যায়। তবে র‌্যাবের কাছে চোর চক্রের সম্পর্কে গুরত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করে গ্রেফতারকৃত আসামীরা। তারা রেলের মবিল ও ডিজেল চুরির সাথে সংশ্লিষ্ট অন্য পলাতক আসামী খুলনা রেলষ্টেশনের নিরাপত্তাকর্মী মাহমুদ ওরফে ট্যারা মাহমুদ, মোঃ শরীফুল, মোঃ মহিউদ্দিন, মোঃ আশরাফ ও জাহাঙ্গীর এর নাম ঠিকানা প্রকাশ করে এবং পলাতক আসামীরা রেলষ্টেশনের সরকারী কর্মচারী বলে জানায়। এ বিষয়ে গ্রেফতারকৃত দুইজনকে আসামী করে এবং ৮-১০ জনকে অজ্ঞাত আসামী করে র‌্যাবের পক্ষ থেকে পুলিশ পরিদর্শক মো. আনিছুর রহমান বাদী হয়ে খুলনা রেলওয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন। যার নং ০২, তারিখ: ১৯/১০/১৮ইং।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ক্ষমতাসীন দলের শ্রমিক সংগঠনের নেতৃত্বে থাকায় জাহাঙ্গীর ও মাহামুদ চক্রটিকে গ্রেফতার করতে পারছে না স্থানীয় পুলিশ। রেলওয়ের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তায় জিআরপি থানা, নৌ পুলিশ, রেলের নিরাপত্তাকর্মী থাকলেও তারা কেউই তাদের গ্রেফতার করছে না। ক্ষমতার অপব্যবহার করে দীর্ঘদিন ধরে রাতের আধাঁরে তারা রেলওয়ের তেল-মবিল চুরির ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। সম্প্রতি চক্রের দুই সদস্য গ্রেফতার হলেও তিনদিনেও মূল হোতারা গ্রেফতার হয়নি বরং তারা প্রকাশ্যে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
এ বিষয়ে র‌্যাবের স্পেশাল কোম্পানী কমান্ডার ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ এনায়েত হোসেন মান্নান জানান, ‘গ্রেফতারকৃত আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে যেসব লোকের নাম পাওয়া গেছে তাদের গ্রেফতারে র‌্যাব চেষ্টা চালাচ্ছে। শীঘ্রই এ তেল চোর চক্রটির হোতারা ধরা পড়বে।’