খুলনায় ২শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে ১শ’ শয্যাবিশিষ্ট ক্যান্সার হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ

0
1374

নিজস্ব প্রতিবেদক:
সারাদেশের ন্যায় খুলনায়ও ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আক্রান্তদের অধিকাংশই নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের। চিকিৎসা খরচ ব্যয়বহুল হওয়ায় হিমশিম খেতে হচ্ছে পরিবারগুলোর। খুলনায় সরকারি ক্যান্সার হাসপাতাল নেই। তবে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একটি ক্যান্সার ইউনিট রয়েছে। যেখানে কোন ইনডোর ওয়ার্ড নেই। চিকিৎসক আছে মাত্র দু’জন। ক্যান্সারের আধুনিক চিকিৎসা ও খরচ কমাতে সরকার ৮টি বিভাগে ৮টি ক্যান্সার হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহন করেছে। যার মধ্যে খুলনায় ২শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে ১শ’ শয্যাবিশিষ্ট ক্যান্সার হাসপাতাল নির্মাণ হবে।
গত ১৮ মার্চ রাজধানীর মিরপুরে ‘সচেতনতায় জীবন বাঁচায়’ শীর্ষক ক্যান্সার সচেতনতামূলক আলোচনা সভায় শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার বলেন, দেশের দরিদ্র জনগণকে স্বল্প খরচে ক্যান্সার চিকিৎসার সুবিধা নিশ্চিত করতে সরকার আন্তরিক। সরকার ১ হাজার ৬শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে ৮টি বিভাগে ১শ’ শয্যাবিশিষ্ট ক্যান্সার সেন্টার নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এর ফলে ক্যান্সারের আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা দেশের সর্বত্র পৌঁছে দেয়া অনেকটাই সম্ভব হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সভায় জানানো হয়, বাংলাদেশে প্রতিবছর দেড় লাখেরও বেশি মানুষ ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হচ্ছে এবং প্রায় ৯১ হাজার বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারে মারা যাচ্ছে। ক্যান্সার বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবক্যান এর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে বাংলাদেশে ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা ১৩ থেকে ১৫ লাখ। এ ছাড়া বর্তমানে দেশের গড়ে প্রায় ৪ কোটি পূর্ণবয়স্ক মানুষ বিভিন্ন উপায়ে তামাক ব্যবহার করে। শুধু ধূমপান বর্জন করলে ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি ৩৩ ভাগ পর্যন্ত হ্রাস করা সম্ভব।খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ক্যান্সার ইউনিট সূত্র মতে, ২০১৮ সালে খুলনা বিভাগে বিভিন্ন স্থান থেকে ক্যান্সার আক্রান্ত ২ হাজার ২৫৯ জনকে কেমোথেরাপী দেয়া হয়েছে। যার মধ্যে পুরুষ ৯৪১ জন ও মহিলা রয়েছে ১ হাজার ৩১৮ জন। এছাড়া ২০১৯ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ৩৯১ জন ক্যান্সার আক্রান্ত ব্যক্তিকে কেমোথেরাপি দেয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এ অঞ্চলের মানুষের ক্যান্সার চিকিৎসায় উন্নত সেবা প্রদানের লক্ষে ২০১২ সালের জুলাই মাসে লিনিয়র এক্সেলেটর বা রেডিওথেরাপি মেশিনটি খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। মেশিনটি ক্যান্সার বিভাগের ভবনের সামনে রাখা হয়। তখন থেকে আজ অবধি সেখানেই পড়ে আছে মেশিনটি। সূত্র জানায়, মেশিনটি প্রতিস্থাপন এবং আনুসঙ্গত অবকাঠামো নির্মাণে ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে সাড়ে ৭ কোটি টাকা চাওয়া হয়। যার মধ্যে ৫ কোটি টাকা মেশিনের অন্যান্য অংশ ও ২ কোটি টাকা অবকাঠামো নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে খোঁজ খবর নিয়ে দেখার পর জানানো হয়, এটির অবকাঠামো নির্মাণে প্রায় ১৭ কোটি টাকা ব্যয় হবে। কিন্তু দীর্ঘদিন পর আবারও রেডিওথেরাপি মেশিনটি রাজধানীর মহাখালী ক্যান্সার হাসপাতালে নেয়া হচ্ছে। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বাঙ্কার স্থাপনসহ অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ চলমান রয়েছে। সম্পন্ন হলে অন্য একটি রেডিওথেরাপি মেশিন এখানে দেয়া হবে।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্যান্সার ইউনিটের বিভাগীয় প্রধান ডা. মুকিতুল হুদা বলেন, এই মেশিনটি তখন ভুল করে আনা হয়েছিল। এই মেশিন প্রতিস্থাপন করতে অন্যান্য মেশিন আমাদের নেই। তাই মেশিনটি ফেরত নেয়া হচ্ছে। বর্তমানে আমাদের এখানে রেডিওথেরাপি মেশিন স্থাপনের জন্য বাঙ্কার নির্মাণ কাজ চলছে যা ২০১৯ সালে শেষ হবে। তখন অন্য একটি উন্নত মেশিন পাওয়া যাবে। তিনি খুলনায় ১শ’ শয্যাবিশিষ্ট ক্যান্সার হাসপাতালের বিষয় এখনও কোন তথ্য পাননি।
উল্লেখ্য, কবে নাগাদ খুলনায় ১শ’ শয্যাবিশিষ্ট ক্যান্সার হাসপাতাল নির্মাণ কাজ শুরু হবে তার কোন দিনক্ষণ জানা যায়নি। এ বিষয় খুলনা মেডিকেল কলেজ, গণপূর্ত বিভাগ ও সিভিল সার্জেন অফিসে যোগাযোগ করলে তারা বিষয়টি সম্পর্কে এখনও কোন তথ্য হাতে পায়নি বলে জানান।