খুলনায় মোড়ে মোড়ে শীতের পিঠা বিক্রির ধুম

0
615

আজিজুর রহমান, খুলনাটাইমস :
ফুটপাতের পাশে ছোট একটা ভ্রাম্যমাণ দোকান। পৌষের কনকনে শীতের সন্ধ্যায় সেখানে পিঠা খেতে ভিড় জমিয়েছেন কয়েকজন তরুণ-তরুণী। দোকানের পাশে ফুটপাতে জ্বলছে দুটো চুলা। একটিতে মাটির খোলা, অন্যটিতে ভাপা পিঠা তৈরির পাতিল বসানো। পিঠা তৈরির ছাঁচে চালের গুঁড়ি নিয়ে তার ওপর খেজুরের গুড়, নারিকেল ছিটিয়ে দিয়ে ভাপে দিচ্ছিলেন দোকানি। খোলায় বানানো হচ্ছিল চিতই পিঠা। তৈরি হতেই গরম গরম ধোঁয়া ওঠা পিঠা উঠে যাচ্ছিল ক্রেতার হাতে হাতে।

শীতের সন্ধ্যায় এমন চিত্র দেখা যায় খুলনা নগরের জাতিসংঘ শিশু পার্কের পাশে এমডি বাবুল মিয়ার অস্থায়ী ভাপা পিঠার দোকানে। তবে বাবুল মিয়ার মতো এমন শতাধিক ভ্রাম্যমাণ পিঠার দোকান রয়েছে শহরের আনাচকানাচে। সন্ধ্যা হলে প্রতিটি দোকানেই পড়ে পিঠা বিক্রির ধুম।

ফাস্টফুড সংস্কৃতির এই যুগেও শীতের গরম পিঠার জনপ্রিয়তা দিন দিনই বাড়ছে। নগরের বিভিন্ন এলাকার ফুটপাতে গড়ে ওঠা মৌসুমি পিঠাপুলির দোকানে ক্রেতাদের ভিড়ই তার বড় প্রমাণ। সূর্য ডোবার পরপরই দোকানিরা তাঁদের পিঠার পসরা বসান রাজপথে কিংবা অলি-গলিতে। চুলায় আগুন জ্বেলে একের পর এক পিঠা বানতে থাকেন তাঁরা আর অন্যদিকে ক্রেতারা গরম গরম পিঠা সাবাড় করতে থাকেন। মহানগরে বসেও গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী এই খাবার উপভোগ করার সুযোগ হাতছাড়া করতে চান না অনেকে। এসব দোকানে পাঁচ টাকায় চিতই ও পাঁচ থেকে ১০ টাকায় ভাপা পিঠা পাওয়া যায়। চিতই পিঠার সঙ্গে সর্ষে বা ঝাল শুঁটকির ভর্তা ‘ফ্রি’ মেলে।

নগরের রূপসা ঘাট, মডার্ন মোড়, পিটিআই মোড়, দোলখোলা মোড়, গফ্ফারের মোড়, শিশু হাসপাতাল রোড, তারের পুকুর পাড়, পিকচার প্যালেস মোড়, ক্লে রোড, মহারাজ চত্বর রোড, স্টেশন রোড, কদমতলা রোড, খান জাহান আলী রোড, সোনাডাঙ্গা বাস স্টান্ড, নিউ মার্কেট, খালিশপুর, দৌলতপুর, রেল স্টেশনসহ বিভিন্ন এলাকার রাস্তার মোড় আর ফুটপাতে গড়ে উঠেছে অগণিত অস্থায়ী পিঠার দোকান। এসব দোকানের বেচা বিক্রিও বেশ ভালো। এ ছাড়া নগরের সাতরাস্তা মোড়ে আছে অভিজাত পিঠা বিপণি ‘পিঠা শপ’। এই দোকানে পাটিসাপটা, নকশা পিঠা, পাক্কন পিঠাসহ হরেক রকম পিঠা বিক্রি হয়। পাশাপাশি নগরের বিভিন্ন সুপার স্টোরে প্যাকেটজাত পিঠা বিক্রি হয়।

সোমবার (১৩ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় কথা হয় তারের পুকুর পাড় এলাকার ভ্রাম্যমাণ পিঠার দোকানি বাবুল মিয়ার সঙ্গে। তিনি জানান, দুই বছর ধরে কুড়িগ্রামের কোমরভাঙ্গি গ্রাম থেকে খুলনায় এসে ভাপা পিঠা তৈরি করছেন। লেখাপড়ার পাশাপাশি তিনি এ পেশা ধরে রেখেছেন। সীমিত খরচে ভালো লাভের আশায় প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত পিঠা বিক্রি করেন। তিনি জানান, প্রতিদিন ১২ থেকে ১৫ কেজি চালের গুড়ার ভাপা পিঠা বিক্রি হয়। ৮শ’ টাকা খরচ করে তিনি প্রায় ২ হাজার টাকা পর্যন্ত বেচাকেনা করেন।

পিঠা বিক্রেতা বাবুল মিয়া বলেন, ‘অভাবের সংসারে শীতের মৌসুমে ফুটপাতে পিঠা বিক্রি করে সংসার চালাতে হয়। প্রতিদিন প্রায় তিন থেকে চারশ পিঠা বিক্রি হয়। খরচ বাদ দিয়ে দিনে প্রায় ৯০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা আয় হয়। ভাপা পিঠা তৈরিতে খরচ ও সময় দুটোই কম লাগে। তাই অল্প সময়ে বেশি আয় হয় বলে পিঠা তৈরিকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছি।

ভোজনরসিকদের মধ্যেও শীতের পিঠা নিয়ে উচ্ছ্বাসের কমতি নেই। নগরের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা জুবায়ের রহমান লিঙ্কন বলেন, ‘কাজের চাপে সব সময় গ্রামের বাড়িতে যাওয়া হয় না। তাই শীতের পিঠা খাওয়ার সাধ মেটাতে ফুটপাত থেকে পিঠা কিনে খেতে হয়। স্বাদ-গন্ধে গ্রামের বাড়ির মতো না হলেও ভালো লাগে।

নগরীর তারের পুকুর পাড়ে পিঠা কিনতে আসা শিক্ষার্থী অর্পিতা পাইক বলেন, গ্রামের বাড়িতে শীতের সময় পিঠা খাওয়ার আনন্দঘন মুহূর্তগুলো শহুরে জীবনে এখন স্মৃতি। এখন শহরেই মিলছে নানা রকম পিঠা। শীতের পিঠার এ রসনা বিলাসের সুযোগ হাতছাড়া করি না। প্রায় কিনে নিয়ে যাই বাসায়। তবে বিরক্তির বিষয় একটি তারের পুকুর পাড়ে কখনও লাইনে না দাঁড়িয়ে পিঠা কেনা যায় না।