খুলনায় বৈশাখকে কেন্দ্র করে চড়া ইলিশের দাম বাড়তি : সাধারণের নাগালের বাইরে

0
772

সাইমুম মোর্শেদ:

বাংলা নববর্ষ সামনে রেখে খুলনার সহ দক্ষিনাঞ্চলের আশেপাশের বাজারগুলোতে ইলিশের চাহিদা কয়েক গুণবৃদ্ধি পেয়েছে। বাজারে যারাই যাচ্ছেন, তারাই ‘ঢু’ মারছেন ইলিশের দোকানে। কারণ বৈশাখ আসতে বাকি আর মাত্র কয় এক দিন। ইলিশ ছাড়া অনেকেরই আনন্দের ষোলোকলা পূর্ণ হয় না পহেলা বৈশাখে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই বেড়েছে ইলিশের চাহিদা। আর এ সুযোগ হাতছাড়া করতে রাজি নন মাছ ব্যবসায়ীরা। সুযোগ বুঝে ইলিশে বাজারে দামের উত্তাপ ছড়িয়েছেন তারা।

যে পরিমাণ টাটকা ইলিশ পাইকারি বাজারে আসছে, তার মূল্য আকাশছোঁয়া। পাইকারি বাজারে আগের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে ইলিশের মূল্য। তাই সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে চলে গেছে ইলিশ। গতকাল খুলনা নগরীর প্রধান প্রধান মাছের বাজারগুলোতে খোঁজ নিয়ে এমন তথ্য জানা গেছে।

সোমবার(৯ এপ্রিল) সন্ধায় খুলনা নগরীর সন্ধা বাজার, নিউমার্কেট, বড়বাজার, রুপসা স্টান্ড মাছ বাজার ঘুরে দেখা গেছে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। তবে, সাধারণ ক্রেতারা দরদাম করছেন কিন্তু আকাশছোঁয়া মূল্যের কারণে অনেকেই ইলিশ না কিনে হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন।
খাইরুল বাশার নামের বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা  ইলিশ কিনতে এসে দাম শুনে হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘স্ত্রী-সন্তানদের আবদারে নগরীর সন্ধা বাজারে ইলিশ কিনতে এসেছিলাম। কিন্তু মূল্য শুনে মাথা ঘুরে যাওয়ার অবস্থা! এই দাম দিয়ে ইলিশ কেনার সামর্থ্য আমাদের নেই। তাই খালি হাতে ফিরে যাচ্ছি।’

অবশ্য ব্যবসায়ীরা বলছেন অন্য কথা, হিমাগারে রাখা ইলিশের দাম এখনো তুলনামূলক কম।নগরীর নিউমার্কেট ইদ্রিস ফিস সাপ্লাইয়ার্স এর ইদ্রিস বলেন ঘাটের  আড়তদার জয়নাল ব্যাপারী বলেন, পয়লা বৈশাখ সামনে রেখে প্রতিদিন যেমন ইলিশের চাহিদা বাড়ছে, তেমনি দাম বাড়ছে না। কয়েক দিনে ধরা পড়া ইলিশগুলোই তাজা ইলিশ নামে পরিচিত।তাজা ইলিশ এর খুব কম পাওয়া যাচ্ছে, আমরা ফ্রীজে সংরক্ষিত ইলিশ বিক্রি করছি।যেটার দাম, তাজা মাছের তুলনায় অনেক কমি।
নিউমার্কেট সততা ফিস সাপ্লাইয়ার্স এর ফারুখ হোসেনের মাছ ঘরে গিয়ে দেখা গেলো  ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রামের এক হালি কাঁচা ইলিশের দাম হাঁকা হচ্ছে ন্যূনতম ছয় হাজার টাকা। একই ওজনের হিমায়িত ইলিশের দাম ৩২০০ থেকে ৪ হাজার ৪০০ টাকার মধ্যে।

সন্ধা বাজার মাছ বিক্রেতা সমিতির সভাপতি মোজাফফার হোসেন আশিক বলেন, ‘মূল জায়গাগুলোয় ইলিশ ধরা বন্ধ রয়েছে। আর অভয়াশ্রমের বাইরে ধরা পড়া তাজা ইলিশের সরবরাহ খুব কম। তাই দাম চড়া।’ আশিকের দাবি, দাম বেশি হলেও কোনো ইলিশ অবিক্রীত থাকছে না।

ঘাট এলাকার আড়তদার রহমান বলেন, পাইকারি বাজারে ৪০০ গ্রামের কম ওজনের ইলিশের আগে কেজিপ্রতি দাম ছিল ৩০০ টাকা, এখন তা ৬০০-৭০০ টাকা। ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের আগে কেজিপ্রতি দাম ছিল সাড়ে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, এখন তা ৮৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আবার ১ কেজি আকারের ইলিশ আগে বিক্রি হতো ১৫০০ টাকায়, এখন তা হচ্ছে ২ হাজার ৯০০ থেকে ৩০০০ টাকায়। আমদানি কমে যাওয়ার কারণে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে প্রতিদিন গড়ে এক থেকে দেড় শ মণ ইলিশ আসছে।

আগে যেখানে এক থেকে দেড় হাজার মণ আসত।
গতকাল বুধবার পাইকারি বাজারে ৫০০ গ্রামের ওপরে ওজনের মাছ মণপ্রতি বিক্রি হয়েছে ৩৫ হাজার টাকায়, আগে তা ছিল ২২-২৪ হাজার টাকা। ৬০০ গ্রাম থেকে ৮৫০ গ্রাম ওজনের মাছ বিক্রি হয়েছে মণপ্রতি ৫৫ হাজার টাকা, আগে তা ছিল ২৬ থেকে ২৮ হাজার টাকা। এক কেজি ওজনের ইলিশ গতকাল বিক্রি হয়েছে মণপ্রতি ১ লাখ ১৫ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকায়। আগে এই ওজনের মাছের মণপ্রতি মূল্য ছিল ৬০-৬৫ হাজার টাকা।
ঘাট এলাকার মৎস্য আড়তদার সমিতির সভাপতি সাঈদ বলেন, ‘এমনিতেই দেশের নদীতে বর্তমানে ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা চলছে। তার ওপরে অন্যান্য নদ-নদীতেও তেমন ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না। আর নববর্ষ উপলক্ষে ইলিশের চাহিদা অন্যান্য সময়ের তুলনায় কয়েক গুণ বেড়েছে। সব মিলিয়ে এখন ইলিশের বাজার খুব চড়া।

আড়তদার সুবির কর্মকার গতকাল বলেন, আগের বছরগুলোতে এই সময়ে ইলিশের আমদানি ভালোই ছিল। কিন্তু এবার এতটাই কম যে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য একেবারে মন্দা।আর মানুষ বৈশাখে একটু ইলিশ খাবে, সে অবস্থাও নেই। কারণ, আমদানি কম হওয়ায় মূল্য বেড়েছে কয়েক গুণ।

খুলনা জেলা মৎস্য অধিদফতরের ইলিশ বিষয়ক মৎস সম্প্রসারণ কর্মকর্তা দেবপ্রত কবিরাজ বলেন, বরিশাল, ভোলা, মেহেন্দীগঞ্জের মেঘনা ও কালাবদর নদীর বেশ কয়েকটি পয়েন্টে ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা চলছে।সরকারি নিষেধাজ্ঞা অনুযায়ী  ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা চলবে। এ ছাড়া অন্যান্য নদীতেও তেমন ইলিশ ধরা পড়ছে না। তার ওপরে মৎস্য বিভাগের অভিযান সব মিলিয়ে সরবরাহ কম থাকায় বাজারে ইলিশের দাম কিছুটা বাড়তি।