খুলনায় পৌনে এক লাখ ভবন মালিকের তথ্য সংগ্রহে মাঠে এনবিআর’র টিম

0
1024

বিশেষ প্রতিনিধি: খুলনা সিটি কর্পোরেশনের (কেসিসি) আওতাধীন ৩১টি ওয়ার্ড জুড়েই চলছে বাড়ির মালিকদের তথ্য সংগ্রহের কাজ। রাজস্ব ফাঁকি রোধ এবং রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির লক্ষে আয়কর বিভাগ এ কাজটি শুরু করেছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নির্দেশনা অনুযায়ী আগামী ১৫ এপ্রিলের মধ্যে তাদের তথ্য সংগ্রহের কাজ সম্পন্ন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন কর বিভাগের জরিপ সার্কেল-১-এর অতিরিক্ত সহকারি কর কমিশনার রেবেকা খানম।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, নগরীর ৩১টি ওয়ার্ডের নম্বর অনুযায়ী বাড়ি বা ফ্লাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মালিকদের তথ্য পাওয়ার জন্য গত বছরের ২৫ নভেম্বর কেন্দ্রীয় কর জরিপ অঞ্চল ঢাকার কর কমিশনার মোঃ আসাদুজ্জামান চিঠি দেন কেসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট। ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, কেসিসি এলাকায় হোল্ডিং নম্বর ধারী অনেক বাড়ি-ফ্লাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক রয়েছেন যাদের আয়কর নথি নেই। অভিযোগ রয়েছে যে, এসব মালিকগণ বিনিয়োগ এবং ভাড়া আয় গোপন করে কর ফাঁকি দিচ্ছেন। কর ফাঁকি রোধ এবং নতুন করদাতা সৃষ্টির জন্য বাড়ি বা ফ্লাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকগণ তালিকা সংগ্রহ করা হবে।
ওই চিঠি অনুযায়ী মেয়রের নির্দেশনায় কেসিসি খুলনার কর বিভাগকে হাল নাগাদ তথ্য প্রদান করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে তারা ৬টি ওয়ার্ডের তথ্য সংগ্রহ করেছে। বাকী ওয়ার্ডগুলোর তথ্য আগামী এপ্রিল মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে সংগ্রহ করা সম্ভব হবে বলে কর বিভাগের জরিপ সার্কেল-১-এর অতিরিক্ত সহকারি কর কমিশনার রেবেকা খানম আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, তিনিসহ জরিপ সার্কেল-১-এর কর ইন্সপেক্টর একেএম জয়নুল আবেদীন এ তথ্য সংগ্রহ করছেন। নেতৃত্বে রয়েছেন খুলনার জরিপ অঞ্চল-৪ যুগ্ম কর পরিদর্শী মুনজুর আলম। তথ্যের সাথে যুক্ত করা হচ্ছে জাতীয় পরিচয়পত্র। সবার তথ্য সংগ্রহের পর ওই চিঠি ঢাকায় পাঠানো হবে। ঢাকা থেকে নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী কার্যাদেশ বাস্তবায়ন করা হবে। তবে এ তথ্য সংগ্রহের পর নগরীর বাড়ির মালিকরা কেউ আয়করের আওতার বাইরে থাকতে পারবে না। আয়কর ফাঁকি রোধে দেশ ব্যাপী এ কার্যক্রম চলছে বলে তিনি জানান।
খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কেসিসি) ও আয়কর বিভাগের সাথে সমঝোতা হয়েছে। দুর্নীতিরোধে উভয় সংস্থা কেসিসির ৩১ ওয়ার্ডকে তালিকাভুক্ত করেছে। সে অনুযায়ী ইতোমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে বাড়ির মালিকের তালিকা ও তাদের বাড়ির খবর আয়কর বিভাগ সংগ্রহ করছে। একই সাথে বছরে কত টাকা এসব বাড়ির মালিকার আয়কর দিচ্ছে তারও একটি তালিকা কেসিসির কাছ থেকে তারা সংগ্রহ করছে। দু’ সংস্থা যৌথভাবে কাজ করছে। তবে কেসিসি বলছে, তারা ভবনের তালিকা দিয়ে সহায়তা করছে আয়কর বিভাগকে। এছাড়া আর কিছু করছে না।
এদিকে ২৬,২৭,২৮,২৯, ৩০ ও ৩১ নং ওয়ার্ডগুলো কাজ শুরু করেছে আয়কর বিভাগ। ইতোমধ্যে তারা তালিকা নিয়েছে কেসিসি থেকে। গত এক মাস আগ থেকে তারা এ তালিকা কেসিসি থেকে সংগ্রহ করা শুরু করেছে। কেসিসির তালিকা অনুযায়ী ৩১টি ওয়ার্ডে মোট ৬৯ হাজার ১শ’ ৬৭টি ভবন রয়েছে। এর মধ্যে ১নং ওয়ার্ডে ২৭১১টি, ২নং ওয়ার্ডে-১০৭৩টি, ৩নং ওয়ার্ডে-২৮৫৬টি, ৪নং ওয়ার্ডে-২২০১, ৫নং ওয়ার্ডে-১৮৩৪টি, ৬নং ওয়ার্ডে-২৫৯৯টি, ৭নং ওয়ার্ডে-৮৩৪টি, ৮নং ওয়ার্ডে-৪৩৭টি, ৯নং ওয়ার্ডে-৩৮৭৮টি, ১০নং ওয়ার্ডে-২৪৯৬টি, ১১নং ওয়ার্ডে-১৩৬৮টি, ১২নং ওয়ার্ডে-১৬১৪টি, ১৩নং ওয়ার্ডে-১০০৪টি, ১৪নং ওয়ার্ডে-২৬৭৩টি, ১৫নং ওয়ার্ডে-১০১২টি, ১৬নং ওয়ার্ডে-৩২০০টি, ১৭নং ওয়ার্ডে-৩১৩৬টি, ১৮নং ওয়ার্ডে-২৯৩৮টি, ১৯নং ওয়ার্ডে-১৩৮৬টি, ২০নং ওয়ার্ডে-১৩৬৫টি, ২১নং ওয়ার্ডে-৩৮৫৪টি, ২২নং ওয়ার্ডে-২২৭৩টি, ২৩নং ওয়ার্ডে-১৪১৭টি, ২৪নং ওয়ার্ডে-৩৩৪৯টি, ২৫নং ওয়ার্ডে-২০১৭টি, ২৬নং ওয়ার্ডে-১৭৫৬টি, ২৭নং ওয়ার্ডে-২৬১৪টি, ২৮নং ওয়ার্ডে-১৯৩১টি ভবন, ২৯নং ওয়ার্ডে হোল্ডিং-এর সংখ্যা ১ হাজার ৪শ’ ৫৮টি, ৩০নং ওয়ার্ডে হোল্ডিং-এর সংখ্যা ৩ হাজার ২শ’ ১৩টি ও ৩১নং ওয়ার্ডে হোল্ডিং-এর সংখ্যা ৪ হাজার ৬শ’৭০টি।
স্থানীয় সরকার বিভাগ রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য দেশ ব্যাপী এ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কেসিসির সহযোগিতায় এ কাজটি করছে। খুলনা সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন বসবাসকারী বাড়ির মালিকরা আয়কর না দিয়ে থাকতে পারবে না। এমনই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে দু’টি সংস্থা এ কাজটি করছে। তারা যাবতীয় হোল্ডিং মালিকের নাম ঠিকানা সকল ডাটা কেসিসির নিকট থেকে সংগ্রহ করছে। নগরীতে বাড়ি আছে কিন্তু আয়কর দেয় না। এ আয়করের পরিধি বাড়াতে সরকার এ উদ্যোগ নিয়েছে। বাড়ির মালিকদের আয়করের আওতায় আনতে এ কাজটি করছে এনবিআর। নগরীতে বাড়ি থাকা সত্বেও যারা আয়কর দিচ্ছে না। এমন কি যাদের একাধীক বাড়ি থাকা সত্বেও তার তথ্য গোপন করে কম আয়কর দিচ্ছে। তাদের পুরোপুরি আয়করের আওতায় আনতে এ কাজ শুরু হয়েছে।
খুলনা কর বিভাগের জরিপ সার্কেল-১-এর অতিরিক্ত সহকারি কর কমিশনার রেবেকা খানম বলেন, নগরীতে বাড়ি আছে। আয়কর দেয়ার সক্ষমতাও রয়েছে। কিন্তু তারা আয়কর না দিয়ে ফাঁকি দিচ্ছে। তাদের সনাক্ত করে আয়করের আওতায় আনতে এ তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। তথ্য সংগ্রহ শেষে ঢাকার নির্দেশনা অনুযায়ী যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে তিনি জানান।