খুলনায় এক বছরে সনাক্ত ৪৪, মৃত্যু ৮ জন : আজ বিশ্ব এইডস দিবস

0
815

কামরুল হোসেন মনি : দিনকে দিন খুলনা জেলায় এইচআইভি/এইডস পজেটিভ ব্যক্তির সংখ্যা বেড়েই চলেছে। খুলনা বিভাগের ১২ জেলায় এ পর্যন্ত এইচআইভি সংক্রমিত ২১৭ জনকে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে খুলনা জেলায় এইচআইভি সংক্রমিত রয়েছে ৭৪ জন। গত ২০১৭ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৮ সালের অক্টোবর পর্যন্ত এইচআইভি সনাক্ত করা হয় শিশুসহ ৩৯ জনকে। এ সময়ের মধ্যে মারা যায় ৭ জন। এছাড়া নভেম্বরে আরও নতুন করে ৫ জনের শরীরে এইচআইভি সনাক্ত করা হয়। এ সময়ে আরও একজন মহিলা মারা যায়। সে হিসেবে খুলনায় এক বছরে ৪৪ জন সনাক্ত ও ৮ জনের মৃত্যু হয়।
স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় আওতাধীন এইডস/এসটিডি প্রোগ্রাম এবং ইউনিসেফ এর কারিগরি ও আর্থিক সহযোগিতায় স্টেনদেনিং অফ এইচআইভি সার্ভিসেস প্রকল্পের আওতায় prevention of mother to child Transmission of HIV (PMTC) এ সেবা দেওয়া হচ্ছে।
আজ শনিবার (১ ডিসেম্বর) বিশ্ব এইচআইভি/এইডস দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য “এইচআইভি পরীক্ষা করুন; নিজেকে জানুন” (know your status) এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতাল ও জেনারেল হাসপাতালে দিবসটি উপলক্ষে পৃথক পৃথক র‌্যালি ও সচেতনতামূলক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।
স্টেনদেনিং অফ এইচআইভি সার্ভিসেস প্রকল্পের প্রোগ্রাম ম্যানেজার মোল্যা মোঃ নুরুল আসলাম বলেন, ইউনিসেফ এর কারিগরি ও আর্থিক সহযোগিতায় উল্লিখিত প্রকল্পের মাধ্যমে ২০১৭ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৮ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ১ হাজার ৬১ জনকে এইচআইভি পরীক্ষা করা হয়। যার মধ্যে ৩৯ জন ব্যক্তির মধ্যে এইচআইভি সনাক্ত করা হয়। খুমেক হাসপাতালে এআরটি সেন্টার থেকে এ পরীক্ষা করানো হয়। এ পর্যন্ত মারা গেছে ৮ জন। যার মধ্যে শিশু ৬ জন, পুরুষ ১৫ জন ও মহিলা ১৫ জন রয়েছে। তার মধ্যে ৩ জন পুরুষ, ৪ জন মহিলা ও ১ জন শিশু মারা গেছে। এ পর্যন্ত এইচআইভি সংক্রমিত ২১২ জনকে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে আরও নতুন করে এইচআইভি ৫ জন ব্যক্তিকে সনাক্ত করা হয়েছে। যার মধ্যে পুরুষ ২ জন ও মহিলা ৩ জন রয়েছে। গেল বছর নভেম্বর থেকে চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত এইচআইভি পজেটিভ রিপোর্ট সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রেরণ করি। যার কারণে ওই তথ্যের মধ্যে এই ৫ জন উল্লেখ নেই। তার এই হিসেব মতো গত এক বছরে মোট ৪৪ জন এইচআইভি সনাক্ত করা হয়েছে। নভেম্বর মাসে নতুন করে ৫ জন এইচআইভি সনাক্ত হওয়ায় খুলনা জেলায় বর্তমানে ৭৪ জন এইচআইভি রয়েছে।
ওই সূত্র বর্তমানে তাদের প্রকল্পের আওতায় ১২ জেলায় মোট এইচআইভি সংক্রমিত ২১৭ জনকে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে এইচআইভি সংক্রমিত রয়েছে খুলনা জেলায় ৭৪ জন, যশোর জেলায় ৫৩ জন, সাতক্ষীরা জেলায় ৩২ জন, নড়াইল জেলায় ২৪ জন, ঝিনাইদহ জেলায় ৯ জন, চুয়াডাঙ্গা জেলায় ২ জন, মাগুরা জেলায় ৩ জন, গোপালগঞ্জ জেলায় ৫ জন, ফরিদপুর জেলায় ৩ জন, বাগেরহাট জেলায় ৮ জন, বগুড়া জেলায় ১ জন ও পিরোজপুর জেলায় রয়েছে ৩ জন। ওই প্রকল্পের মাধ্যমে খুমেক হাসপাতালে ৬ হাজার ২৬৯ জন গর্ভবতী মাকে বিনামূল্যে এইচআইভি পরীক্ষা করা হয়েছে। যার মধ্যে ২ জন এইচআইভি আক্রান্ত মাকে ও একজন শিশু পাওয়া যায়।
খুমেক হাসপাতালে স্টেনদেনিং অফ এইচআইভি সার্ভিসেস প্রকল্পের প্রোগ্রাম অ্যাসোসিয়েট কুতুব উদ্দীন বখতির এ প্রতিবেদককে বলেন, এইডস দিবস উপলক্ষে তাদের উদ্যোগে আজ শনিবার হাসপাতালের চত্বর থেকে একটি র‌্যালি প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে হাসপাতালে এসে শেষ হবে। এরপর হাসপাতালের কনফারেন্স রুমে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ এ টি এম মঞ্জুর মোর্শেদ এর সভাপতিত্বে এইডস এর ওপর জনসচেতনতামূলক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সিভিল সার্জন অফিসের সিনিয়র স্বাস্থ্য শিক্ষা অফিসার আবুল কালাম আজাদ বলেন, দিবসটি উপলক্ষে জেনারেল হাসপাতালের চত্বর থেকে সকাল ৯টায় একটি র‌্যালি বের হবে। র‌্যালিটি নগরীর শামসুর রহমান রোডস্থ স্কুল হেলথ ক্লিনিকে এসে শেষ হবে। সেখানে দিবসটি উপলক্ষে সিভিল সার্জন ডাঃ এ এস এম আব্দুর রাজ্জাকের সভাপতিত্বে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। অনুরূপ খুলনার ৯ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও দিবসটি উপলক্ষে আলোচনা সভা ও র‌্যালি বের হবে।
এইচআইভি/এইডস দিবসে এর আগে বিভিন্ন জনসচেতনতামূলক সভায় বক্তারা বলেন, সমুদ্র ও স্থল সীমান্ত অতিক্রম করে দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশকারীদের রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা না করা, নিষিদ্ধ পল্লী ও ভাসমান যৌন কর্মীদের নিয়মিত রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় এবং ট্রাক চালকদের অবাধে নিষিদ্ধ পল্লীতে যাতায়াত, পুরুষ সমকামী (এমএসএম) বৃদ্ধি, কনডম ব্যবহারে অনীহার কারণে এ অঞ্চলে এইডস’র ভয়াবহতা বেড়ে যাচ্ছে। ভাসমান যৌন কর্মী যারা বিভিন্ন রেল স্টেশন, বাস স্ট্যান্ড, নিষিদ্ধ পল্লীর যৌন কর্মী, মাদকসেবী, হিজড়া, সমকামীদের কারণে এ অঞ্চল ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এইডস কি এটা সাধারণ মানুষকে বোঝাতে হবে। এটা একটি ভাইরাস। এই ভাইরাস যার শরীরের পাওয়া যায় তার রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা দিনকে দিন কমে যায়। ফলে আস্তে আস্তে আক্রান্ত এ মানুষগুলো মারা যায়।
উল্লেখ্য, খুলনা জেলায় ২০১৬ সাল পর্যন্ত এইডস এ আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ৫১ জন। এ সময় আক্রান্ত হয়েছে ২৩২ জন। জাতীয় এইডস এসটিডি কর্মসূচি কর্তৃক ২০১৫ সালের ১ ডিসেম্বর প্রকাশিত এক তথ্য দেখা গেছে, ২০১৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে এইচআইভি ভাইরাসে সংক্রমিত ৪ হাজার ১৪৩ জন। এ সময়ের মধ্যে মারা গেছে ৬৫৮ জন। শুধুমাত্র ২০১৫ সালে নতুন করে এইচআইভি ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছে ৪৬৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৩৪৪ জন, নারী ১১৭ জন ও হিজড়া রয়েছে ৮ জন। শুধুমাত্র ২০১৫ সালে এইডস মারা গেছে ৯৫ জন। বাংলাদেশে এইচআইভিতে আক্রান্ত প্রথম ব্যক্তি সনাক্ত হয় ১৯৮৯ সালে। তবে UNAIDS এর হিসাব মতে বাংলাদেশে অনুমিত ১২ হাজার এইচআইভিতে আক্রান্ত ব্যক্তি রয়েছে।