খুলনায় উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তৃণমূলে অস্থিরতা

0
1082

বিশেষ প্রতিনিধি, খুলনা
খুলনা জেলায় আওয়ামী লীগের তৃণমূলে অস্থিরতার অভিযোগ করেছেন তৃণমূলের বক্তারা। শিগগিরই এ অস্থিরতার নিরসন করতে না পারলে দলটি সংকটের মধ্যে পড়তে পারে এমনই আশংকা করছেন দলের তৃণমূলের কর্মীরা। সদ্য সমাপ্ত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এ অস্থিরতার কারণ মনে করছেন প্রাচীণতম সংগঠনটির তৃণমূল নেতা-কর্মীরা।
গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রুপকল্প ২০২১ ও ২০৪১ বাস্তবায়নে সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ, দুর্নীতি ও মাদক নির্মূল এবং অর্থনৈতিকভাবে উন্নত সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ বিনির্মাণে গতকাল রবিবার দুপুর ১২টায় ইউনাইটেড ক্লাবে আয়োজিত জেলা আ’লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে দলটির বিভিন্ন উপজেলা আ’লীগের অধিকাংশ সভাপতি ও সম্পাদকের বক্তব্যে এ অস্থিরতার চিত্র ফুটে ওঠে।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হুইপ আবু সাইদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি দিক নির্দেশনা বক্তব্যে বলেন, ‘নৌকা ডুবানোর চক্রান্ত আমরা বরদাশত করবো না। বঙ্গবন্ধুর মার্কা নৌকা, শেখ হাসিনার মার্কা নৌকা, তাই নৌকার জন্য তৃণমূল নেতা-কর্মীদের কাজ করতে হবে।’
স্বপন বলেন, আগামী অক্টোবরে জাতীয় কাউন্সিলের আগেই ওয়ার্ড থেকে শুরু করে জেলা পর্যায়ে কাউন্সিলের কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা মিসকিন দেশের প্রধানমন্ত্রী নয়, তিনি গোটা বিশ্বের মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর প্রধানমন্ত্রী। বঙ্গবন্ধু মানে চেতনা, বঙ্গবন্ধু মানে ত্যাগ, বঙ্গবন্ধু মানে নৌকা, বঙ্গবন্ধু মানে আওয়ামী লীগ। তাই বঙ্গবন্ধুর চেতনাকে নতুন প্রজন্মের কাছে সঠিকভাবে তুলে ধরতে হবে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে মুজিব বর্ষ পালন করার জন্য নেতা-কর্মীদের কাছে আহ্বান জান তিনি।
সম্মানিত অতিথি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ভ্রাতুষ্পুত্র শেখ হেলাল উদ্দিন এমপি। তিনি বলেন, আগামী বিএনপি’র পক্ষে কথা বলার মতো লোক থাকবে না। আগামী কাউন্সিলের মাধ্যমে দলকে আরো শক্তিশালী করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ হারুনুর রশীদের সভাপতিত্বে ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এড. সুজিত অধিকারী, দপ্তর সম্পাদক এড. ফরিদ আহমেদ ও সিনিয়র সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ কামরুজ্জামান জামালের যৌথ পরিচালনায় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য এ্যাড. পিযুষ কান্তি ভট্টাচার্য।
সম্মানিত অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান। তিনি বলেন, সকল ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রত্যেক নেতা-কর্মীকে কাজ করতে হবে। বিশেষ অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান এমপি, খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য বঙ্গবন্ধুর ভ্রাতুষ্পুত্র সেখ সালাহউদ্দীন জুয়েল, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কাযনির্বাহী কমিটির সদস্য এসএম কামাল হোসেন, নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সিটি মেয়র আলহাজ্ব তালুকদার আব্দুল খালেক, নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মিজানুর রহমান মিজান, বাংলাদেশ ক্রিকট বোর্ডের পরিচালক শেখ সোহেল, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য পারভীন জামান কল্পনা।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা এমএ মজিদ, ডুমুরিয়া উপজেলা আ’লীগের সভাপতি নারায়ন চন্দ্র চন্দ এমপি, খুলনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুস সালাম মূর্শেদী, জেলা আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ আকতারুজ্জামান বাবু এমপি, জেলা মহিলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক হোসনেয়ারা চম্পা।
বটিয়াঘাটা উপজেলা আ’লীগের সভাপতি উপজেলার পরিষদের চেয়ারম্যান আশরাফুল আলম খান বলেন, ‘তৃণমূলে হাইব্রীডের কারণে দলের ত্যাগী নেতারা পদবঞ্চিত হয়ে আছে। দলের মধ্যে অস্থিরতা বিরাজ করছে। এ অস্থিরতার নিরসন করতে হবে; অন্যথায় দলীয় নেতা-কর্মীদের ভবিষ্যতে খুঁজে পাওয়া যাবে না।’
দিঘলিয়া উপজেলা আ’লীগের সভাপতি খান নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা এখন পথহারা পথিক। সংগঠনের তৃণমূলে বিরাজ করছে অস্থিরতা। এ অস্থিরতার নিরসন করতে না পারলে দল চরম সংকটের মধ্যে পড়তে পারে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।’
ডুমুরিয়া উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক নূরুদ্দীন আল মাসুদ বলেন, দলের মধ্যে হাইব্রীড ভরে গেছে। এসব হাইব্রীড যেনো আগামী কাউন্সিলে পদে আসতে না পারে সেদিক সকলকে লক্ষ্য রাখার আহ্বান জানান তিনি।’ ডুমুরিয়া উপজেলায় সাংগঠনিকভাবে সংগঠনের কোনো কাজ করা হচ্ছে। উপজেলা আ’লীগের সভাপতি নারায়ন চন্দ্র চন্দ নিজের ইচ্ছামত সাংগঠনিক কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে দলীয় নেতা-কর্মীদের মূল্যয়ন করা হচ্ছে না। যার জন্য দলের নেতা-কর্মীরা দূরে সরে যাচ্ছে।
রূপসা উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক সরদার আবুল কাশেম ডাবলু বলেন, ‘দলের মধ্যে হাইব্রীড কর্মী ঢুকে যাওয়ায় আওয়ামী লীগের প্রকৃত নেতা-কর্মীরা কোণঠাসা হয়ে আছে। তাদের একটুও মূল্যয়ন করা হচ্ছে না। তাই তৃণমূলে আওয়ামী লীগের ত্যাগী কর্মীদের পদে আনতে হবে। অন্যথায় দলীয় কর্মীরা আস্তে আস্তে হারিয়ে যাবে।’
তেরখাদা উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক কেএম আলমগীর হোসেন বলেন, তেরখাদা উপজেলা আওয়ামী লীগের ভোটব্যাংক। অথচ তেরখাদায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক প্রার্থী সরফুদ্দিন বিশ্বাস বাচ্চু পরাজিত হয়েছে। হাইব্রীড কর্মীদের কারণে নৌকা প্রার্থীর পরাজয় হয়েছে বলে এমনই মন্তব্য করেছেন তিনি।
দাকোপ উপজেলা আ’লীগের সভাপতি আলহাজ্ব আবুল হোসেন বলেন, ‘ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। বরং দলের প্রকৃত নেতা-কর্মী থানা পুলিশ দ্বারা প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হচ্ছে। তিনি অবিলম্বে দাকোপ থানার অফিসার ইনচার্জের অপসারণের দাবি করেছেন।’
কয়রা উপজেলা আ’লীগের সভাপতি জিএম মহসীন রেজা বলেন, ‘দলের মধ্যে জামায়াত-বিএনপি ঢুকে যাওয়ায় দলের প্রকৃত নেতা-কর্মীরা মূল্যায়ন পাচ্ছে না। এসব হাইব্রীড কর্র্মী যাতে আগামী কাউন্সিলে পদ পেতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে উদাত্ত আহ্বান জানান তিনি।’।
এসময় অন্যন্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা আ’লীগ নেতা সাবেক সংসদ সদস্য মোল্যা জালাল উদ্দিন, সাবেক এমপি নূর আফরোজ আলী, এড. এমএম মুজিবর রহমান, ডাঃ বিএম বাহারুল আলম, সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সরফুদ্দিন বিশ্বাস বাচ্চু, মোঃ নূরুজ্জামান, অধ্যাপক মিজানুর রহমান, রফিকুর রহমান রিপন, জোবায়ের আহমেদ খান জবা, সাবেক ছাত্রনেতা শেখ মোঃ আবু হানিফ, যুবলীগ নেতা শফিকুর রহমান পলাশ, ছাত্রনেতা পারভেজ হাওলাদার ও ইমরান হোসেন, জামিল খান, রেজাউল ইসলাম রেজা প্রমুখ। এদিকে ডাঃ কামরুল ইসলাম শেখ হেলাল উদ্দিন এমপির হাতে ফুলের তোড়া দিয়ে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন।