খুলনার ৩টি আসনে আ’লীগের প্রার্থী পরিবর্তন হচ্ছে!

0
1654

এম জে ফরাজী : খুলনার ৬টি সংসদীয় আসনের মধ্যে অন্তত ৩টিতে প্রার্থী পরিবর্তন করতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে একটি ছেড়ে দেওয়া হতে পারে মহাজোটের অন্যতম অংশীদার জাতীয় পার্টি (জাপা) কে। আসনগুলোর মধ্যে খুলনা-১ আসনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা, খুলনা-২ আসনে শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল ও খুলনা-৬ আসনে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব শফিকুল ইসলাম মধু নির্বাচন করতে যাচ্ছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
সূত্র জানায়, আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনার ৬টি আসনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রায় চূড়ান্ত। এর মধ্যে গত নির্বাচনে বিজয়ী হওয়া কমপক্ষে ৩টিতে প্রার্থী পরিবর্তন করা হচ্ছে। তবে রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি জোট নির্বাচনে অংশ না নিলে প্রার্থী তালিকার এই হিসাব পাল্টে যেতে পারে।
খুলনা-১ (দাকোপ-বটিয়াঘাটা উপজেলা) আসনে গতবারের ন্যায় এবারো চাইছে মহাজোটের শরীক দল জাতীয় পার্টি। দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায়কে প্রার্থী করার কথা রয়েছে। তবে আওয়ামী লীগের দুর্গ হিসেবে পরিচিতি আসনটি কোনভাবেই হাত ছাড়া করতে চাইছে না ক্ষমতাসীন দল। সেক্ষেত্রে বর্তমান সংসদ সদস্য পঞ্চানন বিশ্বাসকে বাদ রেখে দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই এই আসনে প্রার্থী হতে পারেন। যদি শেখ হাসিনা প্রার্থী না হন তবে সুনীল শুভ রায় মহাজোটের প্রার্থী হচ্ছেন এটা প্রায় নিশ্চিত।
খুলনা-২ (সদর ও সোনাডাঙ্গা থানা) আসন মুসলিম লীগ অধ্যুষিত এলাকা বলে পরিচিত। বরাবরই এই আসনে আওয়ামী লীগ বিরোধী প্রার্থীরা বিজয়ী হয়ে আসছেন। তবে স্বাধীনতার পর এম এ বারী একবার আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ২০০৮ সালের নির্বাচনে অংশ নিয়ে বর্তমান সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মিজানুর রহমান মিজান সামান্য ভোটে বিএনপি প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জুর নিকট পরাজিত হলেও ২০১৪ সালে নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তবে নাটকীয়ভাবে এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় এসেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র চাচাতো ভাই শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল। সম্প্রতি খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় নগর সভাপতি ও সিটি মেয়র আলহাজ্ব তালুকদার আব্দুল খালেক খুলনা-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে শেখ জুয়েলকে পরিচয় করিয়ে দেন। বর্তমানে খুলনা শহরজুড়ে তার নির্বাচনী প্যানা, ফেস্টুন, পোস্টার শোভা পাচ্ছে।
খুলনা-৬ (পাইকগাছা-কয়রা উপজেলা) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য এ্যাড. নূরুল হক জনপ্রিয়তা থাকলেও বিতর্কিত কর্মকান্ডের কারণে আসন্ন নির্বাচনে মনোনয়ন বঞ্চিত হতে পারেন বলে জনশ্র“তি রয়েছে। ২০১৭ সালের ফেব্র“য়ারি মাসে পাইকগাছার স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মী মোহাম্মদ আজিজ’র বাড়ির যাতায়াতের পথে উচু দেয়াল তুলে দেওয়ায় বেশ সমালোচিত হন এই সংসদ সদস্য। যা দেশের সংবাদপত্র ছাপিয়ে বিদেশের মিডিয়াও গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করা হয়। মূলত এই কারণে আওয়ামী লীগের প্রার্থী পরিবর্তন হতে পারে বলে গুঞ্জন রয়েছে।
তাছাড়া আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট খুলনার ২টি আসন চেয়েছে। যার মধ্যে এই আসনটিও রয়েছে। মহাজোট থেকে জাতীয় পার্টির যুগ্ম-মহাসচিব ও জেলা সভাপতি শফিকুল ইসলাম মধু প্রার্থী হতে চাইছেন। খুলনা-১ থেকে শেখ হাসিনা প্রার্থী হলে খুলনা-৬ নির্বাচনী আসনে মধু মহাজোট থেকে প্রার্থী হতে পারেন বলে একাধিক সূত্র জানায়।
এ বিষয়ে খুলনা মহানগর জাতীয় পার্টি (জাপা)’র সদস্য সচিব মোল্যা শওকত হোসেন বাবুল বলেন, ‘মহাজোটের সাথে আসন ভাগাভাগির বিষয়টি সম্পূর্ণ কেন্দ্রের উপর নির্ভর করছে। কেন্দ্র থেকে সিদ্ধান্তের পর আমরা বিস্তারিত বলতে পারবো।’
খুলনা-১ আসনের সংসদ সদস্য পঞ্চানন বিশ্বাস বলেন, ‘খুলনা-১ আসন আওয়ামী লীগের দুর্গ, এটি জাতীয় পার্টিকে দেওয়ার প্রশ্নই আসেনা। তাছাড়া ১৯৮৮ সালের থানা ঘেরাও কর্মসূচিতে জাতীয় পার্টির লোকজন আমাদেরকে উপর হামলা করেছিলো। নেত্রী এ বিষয়টি জানেন।’
দলীয় সভানেত্রী প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি কয়েকবার এই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছি। আমার মনে হয়, দল পুনরায় আমাকে মনোনয়ন দেবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই আসনে প্রার্থী হবেন, তা নিশ্চিত নয় বলে তিনি জানান।’
খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আলহাজ্ব তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, ‘প্রার্থী চূড়ান্ত করবেন দলীয় সভানেত্রী, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। খুলনার কয়েক আসনে প্রার্থী পরিবর্তন হচ্ছে এটা আমরাও শুনেছি। বিশেষ করে খুলনা-২ আসনে বঙ্গবন্ধুর ভ্রাতুষ্পুত্র শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল এর মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হয়েছে।’