খুলনার সড়কে প্রাণ ঝরছেই

0
686

ইয়াছিন আরাফাত : খুলনায় হঠাৎ করে বেড়েছে সড়ক দুর্ঘটনা। গত চার দিনে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং আহত হয়েছেন কমপক্ষে আরও ৪৫ জন। একের পর এক দুর্ঘটনার কারণে আতংকিত হয়ে পড়ছেন সাধারণ মানুষ। ফলে জনমনে শঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে।
সর্বশেষ গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে খুলনার ডুমুরিয়ার উপজেলার চুকনগরে যাত্রীবাহী বাস উল্টে নাছিমা (৪৫) নামের এক নারী যাত্রী নিহত হয়েছেন। নিহত নাছিমা ডুমুরিয়া উপজেলার খর্ণিয়া ইউনিয়নের উকড়া গ্রামের বাসিন্দা হাবিবুর রহমানের স্ত্রী। এ ঘটনায় আরও ১৫ যাত্রী আহত হয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে চুকনগর বাসস্ট্যান্ড থেকে একটি যাত্রীবাহি বাস যার নং-খুলনা মেট্রো-জ ০৪-০০২৬ যশোর অভিমুখে যাচ্ছিল। স্ট্যান্ড ছেড়েই চালক মোবাইল ফোনে কথা বলা শুরু করে এক পর্যায়ে নরনিয়া মাদ্রাসার কাছে পৌঁছালে বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার ওপর পাল্টি খেয়ে পড়ে যায়। তখন বাসের যাত্রী নাছিমা বেগম (৪৫) ঘটনাস্থলেই মারা যান। এসময় আহত হয়েছেন রোকেয়া বেগম (৪২), বারিক গাজী (৪৮), আশরাফুল সরদার (৪০), রবিউল ইসলাম (৩৫), শিশু হাবিবা (২), স্বপ্না বেগম (২৫) সহ কমপক্ষে ১৫ জন।
মাগুরাঘোনা পুলিশ ফাঁড়ি ক্যাম্প ইনচার্জ এসআই জাকারিয়া হোসেন জানান, প্রাথমিক ভাবে জানতে পারি, ড্রাইভার মোবাইলে কথা বলার কারণে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাস পাল্টি খাওয়ায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। থানা পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস কর্মীসহ স্থানীয় জনতার একত্রিত হয়ে উদ্ধারের চেষ্টা করছি। এখানে এক মহিলার মরদেহ উদ্ধার করেছি এবং আহত হয়েছে কমপক্ষে ১৫ জন। আহতদের বিভিন্ন স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রে প্রেরণ করছি এবং উদ্ধার কাজ চলমান রয়েছে।
এর আগে, গত রবিবার (১০ ফেব্র“য়ারি) রাত পৌনে ১১টায় নগরীর লবণচরা থানাধীন রূপসা বাইপাস সড়কের খাজুর বাগান নামক স্থানে ট্রাক চাপায় প্রাইভেটকারের পাঁচ আরোহী নিহত হন। যারা প্রত্যেকে গোপালগঞ্জের ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা।
গত সোমবার (১১ ফেব্র“য়ারি) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে সাতক্ষীরা-খুলনা সড়কের ডুমুরিয়ার চুকনগরের চাকুন্দিয়া এলাকায় পিকনিকের একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে খাদে পড়ে একজন ছাত্রী নিহত হয়। নিহত মেঘলা যশোরের শ্যামনগর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। এ দুর্ঘটনায় আহত হয় আরও ৩০ জন শিক্ষার্থী।
গত মঙ্গলবার (১২ ফেব্র“য়ারি) মঙ্গলবার বেলা ৩টার দিকে ফুলতলা উপজেলার দামোদর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে থেকে রাস্তা পার হওয়ার সময় ট্রাক চাপায় নিহত হন সরকারি বিএর কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কিশোর কুমার পাল (৫২)। এ ঘটনায় প্রতিবাদ কর্মসূচিও পালন করেছেন কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
একই দিন সন্ধ্যায় ফুলতলায় মোটরসাইকেলের ধাক্কায় নিহত হন স্টার জুট মিলের শ্রমিক লুৎফর। সন্ধ্যা ৭টায় ফুলতলার ১৪ মাইল এলাকায় সুপার জুট মিলের সম্মুখে রাস্তা পারাপারের সময় নওয়াপাড়াগামী অজ্ঞাত মোটর সাইকেলের ধাক্কায় সুপার জুট মিলের কর্মচারী লুৎফর রহমান সরদার (৬৮) গুরুতর আহত হয়। তাকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার পথেই সে মারা যায়।
এদিন দুপুরে আরেকটি সড়ক দুর্ঘটনায় নগরীর বয়রা এলাকায় আহত হন খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক, দৈনিক দেশ সংযোগ পত্রিকার সম্পাদক ও কেইউজে’র সভাপতি প্রার্থী মুন্সি মাহবুব আলম সোহাগ। দুর্ঘটনায় তার বাম হাতের হাড় ভেঙ্গে যায়।
গত বুধবার (১৩ ফেব্র“য়ারি) সকাল ৯টার দিকে নগরীর লবণচরা থানার গেট সংলগ্ন রূপসা সেতু বাইপাস সড়কে দুর্ঘটনা নিহত হন মোটরসাইকেল আরোহী খুলনা মেডিকেল কলেজের কে-২৪ এর ৫ম বর্ষের ছাত্র আরিফুল ইসলাম আকাশ। যিনি ওই কলেজ ছাত্রলীগ নেতা বলে জানা গেছে।
ফলে গত চার দিনে খুলনায় পৃথক ছয়টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ৪৫ জন। যা নিয়ে খুলনাবাসীর মনে শঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে। সড়ককে অনিরাপদ ভাবছেন কেউ কেউ।
এ বিষয়ে নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) খুলনা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক এস এম ইকবাল হোসেন বিপ্লব বলেন, একের পর সড়ক দুর্ঘটনার ফলে খুলনাবাসী আতংকিত হয়ে পড়ছেন। যদি জনগণ এবং চালকরা আইন মেনে চলেন তবে সড়ক দুর্ঘটনা কমে আসবে। এজন্য সর্বপ্রথম প্রয়োজন জনসচেতনতা।
খুলনা আইন সহায়তা কেন্দ্রের (আসক) বিভাগীয় সভাপতি এম এ কাশেম বলেন, আমাদের দেশে রেলওয়েকে যতি আধুনিক করা হয় তাহলে অন্যান্য যানের সংখ্যা কমে আসবে। সাথে সাথে সড়ক দুর্ঘটনা অনেকটা হ্রাস পাবে। এছাড়া খুলনা নগরী ও জেলা হালকা যানের জন্য ভিন্ন রাস্তা রাখা জরুরী। এত্থেকেও সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব।