খুলনাবাসির প্রথম দেখা লাল সবুজের পতাকা

0
991

কাজী মোতাহার রহমান
পদ্মা মেঘনা ও যমুনা পরিবেষ্টিত আঠারো জেলার মানুষের ন্যায় খুলনার শরণখোলা থেকে শ্যামনগর পর্যন্ত লাখ লাখ উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায়, প্রেসিডেন্ট ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত নেবেন। একাত্তরের পহেলা মার্চ, সোমবার। খুলনা শহরে থমথমে অবস্থা।একদিকে পাকিস্তানি বাহিনী, তাদের সাথে অবাঙালিরা। তাদের অবস্থান পাকিস্তানের অখন্ডতা রক্ষার পক্ষে। বিপরীতে স্বাধীনতা প্রত্যাশী ঐক্যবদ্ধ ছাত্র জনতা। তাদের মুখে শ্লোগান ‘জয় বাংলা’,‘তোমার আমার ঠিকানা পদ্মা মেঘনা যমুনা’,‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধর বাংলাদেশ স্বাধীন কর’, ‘তোমার নেতা আমার নেতা শেখ মুজিব, শেখ মুজিব’।
শহরের সার্কিট হাউসে পাকিস্তানি সেনা বাহিনীর সদর দপ্তর । এখানকার দায়িত্বে লেঃ কর্নেল শামস উল জামান। গল্লামারীস্থ রেডিও সেন্টার, শিপইয়ার্ড, টুটপাড়া, সাত নম্বর জেটি, পিএমজি কলোনি, নিউ ফায়ার বিগ্রেড স্টেশন, ওয়াপদা ভবন, গোয়ালপাড়া, গোয়ালখালী, দৌলতপুর, খালিশপুর নৌ-ঘাটি তিতুমীর ও লায়ন্স স্কুলে পাক সেনা ছাউনি। পাকিস্তানি সেনারা দিনের বেলায় শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় টহল দেয়। অসহযোগ আন্দোলন শুরু হলে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক ছাড়া অন্যন্য রাস্তাগুলোতে স্বাধীনতা প্রত্যাশীরা ব্যারিকেড সৃষ্টি করে।
পহেলা মার্চ পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেঃ আগা ইয়াহিয়া খান দুপুর একটায় জাতির উদ্দেশ্য দেয়া ভাষণে জাতীয় পরিষদের তেশরা মার্চের অধিবেশন অনির্দিষ্ট কালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করেন। এ সংবাদ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ার পর দুপুরে দৌলতপুর বি এল কলেজে পরীক্ষা বন্ধ হয়ে যায়। বিকেলে ছাত্রলীগ কমার্স কলেজ চত্বর থেকে জঙ্গি মিছিল বের করে। প্রেসিডেন্টের ঘোষণার প্রতিবাদে হাদিস পার্কে ছাত্রলীগের আহবানে বিকেলে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
শহরের সকল স্কুল কলেজ বন্ধ । ব্যাংক, বিমা, নিউজপ্রিন্ট মিলস, হার্ডবোর্ড, প্লাটিনাম, কেবল ফ্যাক্টরি, দাদা ম্যাচ ও বিএমসির উৎপাদনের চাকা বন্ধ ছিল। কালেক্টরেট ভবন, জেলা জজ আদালতের দরজাগুলো খোলা ছিল। দোসরা মার্চ থেকে ছয় মার্চ পর্যন্ত শহরে বেলা দুটা পর্যন্ত আওয়ামী লীগের ডাকে হরতাল পালিত হয়। সাত মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ আট মার্চ গল্লামারীস্থ রেডিও পাকিস্তান, খুলনা কেন্দ্র থেকে প্রচার হয়। আট মার্চ মহররম উপলক্ষে কর্মসূচি শিথিল ও নয় মার্চ হরতাল প্রতাহার করা হয়। তেশরা মার্চ শহিদ হাদিস পার্ক থেকে আওয়ামী লীগ এর উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি স্টেট ব্যাংক (আজকের বাংলাদেশ ব্যাংক) এর সামনে পৌছলে টেলিফোন ভবন থেকে পাকিস্তান বাহিনি গুলি চালায়। গুলিতে জয়নাল আবেদিন, আমজাদ হোসেন, চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র মুসা সহ সাত জন শহিদ হন। এর প্রতিবাদে সার্কিট হাউজ , কালেক্টরেট ভবন ও জজ কোর্ট ছাড়া সর্বত্র কালো পতাকা ওড়ে।
ছাত্রলীগের খুলনা জেলা ও শহর শাখার প্রভাবশালী নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে সাত মার্চ আতœপ্রকাশ করে স্বাধীন বাংলা বাংলা সংগ্রাম পরিষদ। অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে এ কমিটিতে আহবায়ক নির্বাচন করা সম্ভব হয় নি। বি এল কলেজ ছাত্র সংসদের তৎকালীন সহ সভাপতি, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক স ম বাবর আলী ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সদস্য হুমায়ুন কবির বালুকে যুগ্ম আহবায়ক, শেখ আব্দুল কাইয়ুম, ইস্কান্দার কবির বাচ্চু, শেখ শহীদুল হক, হায়দার গাজী সালাহউদ্দিন রুনু, হেকমত আলী ভূইয়া, আবুল কাশেম ইঞ্জিনিয়ার, ফ ম সিরাজুল হক, মাহাবুবুল আলম হিরন, শেখ শওকত আলী ও মিজানুর রহমানকে সদস্য করে সংগ্রাম পরিষদের খুলনা কমিটি গঠন করা হয়। আওয়ামী লীগ ও স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ দুই থেকে পঁচিশ মার্চ অসহযোগ আন্দোলন পরিচালনা করে।
সাত মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণে অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষণা দেওয়ায় খুলনাবাসি খাজনা ও ট্যাক্স দেয়া বন্ধ করে দেয়। বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সরকারকে সর্বত্র অহসহযোগিতা করে। অসহযোগ আন্দোলনে প্রতিদিন রূপসা, খালিশপুর, দৌলতপুর, আটরা ও শিরোমনি শিল্পাঞ্চলে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বটিয়াঘাটা , ফুলতলা, দাকোপ ও পাইকগাছা ছাড়া অন্য থানাতে অসহযোগ আন্দোলনের ঢেউ লাগেনি।
আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশনা জানাতে আঠারো মার্চ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি বদিউল আলম (স্বাধীনতা পরবর্তী সংবাদ কর্মী) ও যশোরের রবিউল আলম খুলনায় আসেন। কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিরা খুলনাঞ্চলে স্বাধীনতার পক্ষে জনমত সৃষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দেন। তাঁরা স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকার নমুনা স্থানীয় নেতৃবৃন্দের হাতে তুলে দেন। প্রেক্ষাপট উল্লেখ করে বলতে হয় ১৯৭০ সালের সাত জুন মাসে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইকবাল হলে ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশের পতাকার তৈরির পরিকল্পনা নিয়ে বৈঠক করেন। গাঢ় সবুজের মাঝে লাল সূর্য তার ওপরে দেশের ম্যাপ দিয়েই পতাকা চুড়ান্ত করা হয়।
তখনকার দিনে সাধারণত বিত্তবান পরিবার, ঠিকাদার, আইনজীবী ছাড়া খুলনা শহরের মধ্যবিত্ত পরিবারে টেলিফোন সংযোগ ছিল না। উনিশ মার্চ ডাকসুর সহ সভাপতি আ স ম আব্দুর রব পিকচার প্যালেসে টেলিফোন করে শেখ আব্দুল কাইয়ুম ও স ম বাবর আলীকে তেইশ মার্চ খুলনায় স্বাধীনতা পতাকা উত্তোলনের নির্দেশনা দেন। পতাকার নমুনা সম্পর্কেও ধারণা দেন। তেইশ মার্চ পাকিস্তান দিবসের পরিবর্তে বাংলাদেশ দিবস পালনের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের বিষয়টিও নির্দেশনা দেন। জেমস ফিনলের শ্রমিক নেতা মমতাজ হোসেনের আর্থিক সহায়তায় শহরের বড় বাজারের তুলো পট্টি থেকে হুমায়ুন কবির বালু ও শেখ আব্দুল কাইয়ুম শতাধিক পতাকা তৈরি করে নিয়ে আসে। পতাকা প্রতিটি দশ টাকা বারো টাকা করে বিক্রি হয়। পতাকা জনগনের মধ্যে বিক্রি করার জন্য ইঞ্জিনিয়ার আবুল কাশেম ও শেখ আব্দুল কাইয়ুম সহ আরও পাঁচ জনকে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়।
স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে শহিদ হাদিস পার্কে দক্ষিণ গেটের অদূরে স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করা হয়। বিশ মার্চ খুলনা থেকে প্রকাশিত লুৎফর রহমান জাহানগীর সম্পাদিত ‘সাপ্তাহিক দেশের ডাক’ পত্রিকার পূর্ণ পাতায় চার রং-এ বাংলাদেশের পতাকা ছাপা হয় (সম্পাদকের জীবনী)। ক্লে রোডে হ্যানিমান মার্কেটে ছিল ‘সাপ্তাহিক দেশের ডাক’ এর কার্যালয়। ডাকবাংলা মোড়স্থ আজকের আইএফআইসি ব্যাংকের কাছেই ছিল নটরাজ প্রেস। এ প্রেস থেকেই সাপ্তাহিক দেশের ডাক ছাপা হত। দেশের ডাকের সকল সংখ্যা বিক্রি হয়ে যায়। পত্রিকার সকল সংখ্যা বিক্রি হয়ে গেলে বাংলাদেশের পতাকা ব্লক করে কাগজে ছাপিয়ে মানুষের মধ্যে বিলি করে। স্যার ইকবাল রোডস্থ মির্জাপুর এলাকায় মঞ্জুরুল ইমামের বাস ভবন সংলগ্ন খুলনা ব্লক আর্ট এ ব্লক তৈরি করা হয়। এক ইঞ্চি কাঠের ওপর জিঙ্ক জমাট বেঁেধ ব্লক তৈরি হত। খুলনা ব্লক আর্টের মালিক নারায়ন চন্দ্র তালুকদার চব্বিশটি ব্লক তৈরি করেন। এ ব্লক রাজশাহী পর্যন্ত পাঠানো হয়। আওয়ামী নেতা মঞ্জুরুল ইমামের অনুরোধে গোপন স্থানে বসে ব্লকগুলো তৈরি করেন। এ জন্য তিনি পারিশ্রমিক নেননি। গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে সাপ্তাহিক দেশের ডাকে পতাকা ছাপানোর খবর সার্কিট হাউসে পাকিস্তানি সেনা সদর দপ্তরে পৌছে যায়। মুসলিম লীগ সমর্থকদের পরামর্শে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নটরাজ প্রেস আগুন দিয়ে জ¦ালিয়ে দেয়। পাকিস্তানি সমর্থকরা ‘দেশের ডাক’ সম্পাদক লুৎফর রহমান জাহানগীরকে হত্যা করার জন্য শহরে খুঁজতে রাষ্ট্রদ্রোহীতার অভিযোগ এনে সামরিক আইনে ‘দেশের ডাক’ সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলা হয়। স্বাধীনতার পর আর কখনও ‘দেশের ডাক’ প্রকাশিত হয় নি। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেঃ ইয়াহিয়া খান একাত্তরের এক মার্চ ১১০ নং সামরিক বিধি জারি করেন। এই বিধিতে বলা হয় পাকিস্তানের অখন্ডতা, সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোনও ছবি, খবর, কোনো অভিমত, বিবৃতি, মন্তব্য ইত্যাদি সংবাদপত্রে মুদ্রণ করা যাবে না। এ বিধি লংঘন করলে সর্বোচ্চ শাস্তি দশ বছরের সশ্রম কারাদন্ড (বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের প্রকাশনা সংবাদপত্রে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা)। খুলনার সাপ্তাহিক দেশের ডাক সামরিক বিধি জারি করার পর তা ভঙ্গ করে। ছাব্বিশ মার্চ প্রেসিডেন্ট ৭৭নং সামরিক বিধি জারি করে। এ বিধিতে বলা হয় পাকিস্তানের অখন্ডতা বা সংহতির বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সমালোচনা বা সমালোচনার চেষ্টা করলে সাত বছর কারাদ-। কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র না নিয়ে রাজনৈতিক বিষয় সংবাদপত্রে মুদ্রণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস সাপ্তাহিক মুক্তি ছাড়া আর কোনও পত্রিকা প্রকাশিত হয়নি।
তেইশ মার্চ দৌলতপুর বিএল কলেজ প্রাঙ্গনে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইউনুস আলী ইনু পতাকা উত্তোলন করেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধকালীন জেলা মুজিব বাহিনির ডেপুটি কমান্ডার। শিরোমনির অধিবাসী দর্জি মতিয়ার রহমান পতাকা তৈরি করেন। পতাকা উত্তোলনের জন্য সার্বিক সহায়তা করেন ফ ম সিরাজ, শরীফ খসরুজ্জামান, শেখ শহিদুল ইসলাম, আব্দুল মালেক, আবদাল হোসেন। এ পতাকা তোলার অপরাধে দৌলতপুর থানায় ইউনুস আলী ইনুর নামে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা হয়। চাঁদখালী ফরেস্ট কোর্টে দায়িত্বে নিয়োজিত ম্যাজিষ্ট্রেট পাইকগাছা থানা সদরে পতাকা উত্তোলন করেন। এ অনুষ্ঠানে সক্রিয় ছিলেন জি এ সবুর, শেখ শাহাদাৎ হোসেন বাচ্চু, অধ্যাপক সোলায়ামান ফকির। বটিয়াঘাটা থানা সদরে পতাকা উত্তোলন করেন যৌথ ভাবে পঞ্চানন বিশ^াস, ইন্দ্রজিৎ জোয়ারদার, অধির কুমার মন্ডল, মনোরঞ্জন, বিদ্যাধর বিশ^াস, শ্যামল কুমার, রুহি দাস মন্ডল, শান্তিরাম দত্ত, মোঃ মোখতার হোসেন। তেরখাদা থানা সদরে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ডাঃ মনসুর আলী ও বোরহান উদ্দিন মাস্টার পতাকা উত্তোলন করেন (মোল্লা আমীর হোসেন রচিত মুক্তিযুদ্ধে খুলনা)।
তেইশ মার্চ সকাল আনুমানিক ১০টা নাগাদ ছাত্র জনতার একটি জঙ্গি মিছিল বাগেরহাট মহাকুমা প্রশাসকের কার্যালয়ের এসে জমায়েত হয়। প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য শেখ আব্দুর রহমান, মহাকুমা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ অজিয়র রহমান, এসএম এ সবুর, আব্দুস সাত্তার খান, গাজী আব্দুল জলিল, চিত্তরঞ্জন মজুমদার, সরদার আব্দুল জলিল, মতিয়ার রহমান পাটোয়ারি, ইব্রাহিম মাস্টার ও আমিরুজ্জামান বাচ্চু পাকিস্তানি পতাকা নামিয়ে পুড়িয়ে ফেলে। এর নেপথ্যে ছিলেন ছাত্রলীগ নেতা আব্দুস সালাম মোড়ল। মহাকুমা প্রশাসকের কার্যালয় প্রাঙ্গনে ওই দিনই বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। পাকিস্তানের পতাকা পোড়ানোর কারণে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ এনে শেখ আব্দুর রহমানকে এক নম্বর আসামি ও চিত্তরঞ্জন মজুমদারকে ২ নম্বর আসামি করে বাগেরহাট সদর থানায় মামলা দায়ের করা হয়। ছাব্বিশ মার্চের পর তারা শহর ত্যাগ করে (অধ্যাপক স্বরচিস সরকার রচিত একাত্তরের বাগেরহাট)। রামপাল তানার ভ’ইয়ারকান্দা স্কুল প্রাঙ্গণে নবাবপুর গ্রামের মোল্লা নেছার উদ্দিনের পুত্র মাস্টার আব্দুল মজিদ মোল্লা পতাকা উত্তোলন করেন।
কেন্দ্রীয় নির্দেশে মোস্তাফিজুর রহমানকে সভাপতি, কামরুল ইসলাম খানকে সাধারণ সম্পাদক, নাজমুল আবেদীন খোকন, এনামুলক হক বিশ্বাস, এরশাদ হোসেন খান চৌধুরী হাবলু, আজিবার রহমান, কিসমত হাসান, শেখ আবু নাসিম ময়না ও মীর মোস্তাক আহমেদ রবি(দশম ও একাদশ সংসদের সদস্য)কে সদস্য করে সাতক্ষীরা মহাকুমা স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের কমিটি গঠন করা হয়। তেইশ মার্চ সাতক্ষীরা এসডিও কোর্ট ভবনের সামনে থেকে ছাত্রলীগ নেতা আব্দুস সালাম মোড়ল, পাকিস্তানি পতাকা নামিয়ে ফেলেন। কামরুল ইসলাম খান তাতে অগ্নিসংযোগ করেন। তিনি পাকা পোলের সামনে স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করেন।
আঠাশ মার্চ ছাত্র ইউনিয়ন নেতা সৈয়দ ঈসা পাকিস্তানি পতাকা নামিয়ে পুড়িয়ে ফেলেন। ন্যাপ নেতা প্রদীপ কুমার মজুমদার স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন। শ্যামনগর থানার নকিপুর হাইস্কুল, ছাত্রলীগ কার্যালয়, থানা চত্ত্বর ও কালিগঞ্জ থানার সোহ্রাওয়ার্দী পার্কে স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করা হয়। সখিনা খাতুন না¤œী গৃহবধু পতাকা সেলাই করেন। দেবহাটা থানা চত্ত্বরে ছাত্র জনতার সমাবেশে মুজাহিদ ক্যাপ্টেন শাহাজাহান মাস্টার (স্বাধীনতা যুদ্ধে ৯নং সেক্টরের সাব-সেক্টর কমান্ডার)। ছাব্বিশ মার্চের পর পাকিস্তানি বাহিনী জেলা সদর ও মহাকুমা সদর নিয়ন্ত্রণে আনে। তারা মুক্ত বাতাসে উড়া স্বাধীনতার পতাকা গুলি করে ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে দেয়।
(তথ্যসুত্রঃ স ম বাবর আলী রচিত স্বাধীনতার দূর্জয় অভিযান, নাজিম উদ্দিন মানিক রচিত অসহযোগ আন্দোলনের দিনগুলি ও সাপ্তাহিক দেশের ডাক সম্পাদিক লুৎফর রহমান জাহানগীর এর জীবনী )।
লেখকঃ সংবাদ কর্মী, খুলনা