খুমেকের বারান্দায় ধুকছে ছাবিনা, ভর্তির ১২ দিন পেরোলেও সুষ্ঠ বিচার পায়নি

0
562

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

ছাবিনা বেগম (২৬)। পিরোজপুরের জিয়ানগর উপজেলার দেলোয়ার হোসেন-এর কন্যা। প্রায় বছর খানেক আগে সন্তানদের ভরণপোষণ আর পেটের দায়ে পাশের বাড়ির চাচীর পরামর্শে গৃহকর্মীর কাজে রাজধানীতে গিয়েছিলেন স্বামী পরিত্যক্ত দু’সন্তানের এই জননী। অথচ গৃহকর্তীর ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হয়ে ক্ষতবিক্ষত শরীর নিয়ে অবশেষে ১২ই মে থেকে ঠাঁই হয়েছে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিছানায়। কর্তব্যরত চিকিৎসকরা বলছেন, ভয়াবহ নির্যাতন চালানো হয়েছে মেয়েটির উপর। মাথায় কোপের চিহ্ন ছাড়াও দু’হাতেই ভাঙা আছে অন্তত ৬টি স্থানে। চিকিৎসা না করানোয় কোনটিতে অস্বাভাবিক জোড়া লেগেছে আবার কোনটি লাগেনি। এমন অবস্থায় হতভাগ্য এই পরিবারের দাবি নির্মম নির্যাতনকারী এই গৃহকর্তীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি।কিন্তু ভর্তির বারো দিন পার হলেও দোষীরা রয়েছে ধরা ছোয়ার বাহিরে।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থপেডিক্স বিভাগের ৭ নম্বর বেডে ছাবিনাকে ভর্তি করা হয় গত ১৬ মে বিকেলে। সেখানে গেলে ধারাবাহিক নির্যাতনের শিকার পাগলপ্রায় মেয়েটি বলতে থাকেন তার সাথে প্রায় দু’মাস ধরে চলা ভয়াবহ নির্র্যাতনের কথা। স্বামী পরিত্যক্তা ছাবিনা জানান, দুই সন্তান ও নিজের পেটের আহারের জন্য পাশের বাড়ির চাচীর পরামর্শে গৃহকর্র্মীর কাজে ঢাকার ধানমণ্ডি যান তিনি। ধানমণ্ডির ৯ নম্বর রোডের ১৭ নম্বর বাড়িতে পার্টস ব্যবসায়ী সিদ্দিকুর ও তার স্ত্রী রিমা আহমেদ থাকেন। ৫ হাজার টাকা বেতন দেয়ার কথা বলে নিলেও তাকে বেতন দেয় ৩ হাজার টাকা। মাস তিনেক আগে চা বানানোর সময় তার পায়ে গরম পানি পড়ে। কোন প্রকার চিকিৎসা না করানোর ফলে পায়ের লিগামেন্ট কুচকে যাওয়ায় সোজা হয়ে হাঁটতে পারেন না তিনি। তাই ঠিকমত কাজ না হওয়ায় শুরু হয় অমানবিক নির্যাতন। সকাল-বিকেল মুখে কাপড় গুজে মোটা লাঠি দিয়ে দরজা বন্ধ করে পেটানো হতো তাকে। একের পর এক নির্যাতনে হাতের বাহু থেকে শুরু করে কবজি পর্যন্ত অন্তত ৮টি স্থানে হাড় ভেঙে যায়। কোন চিকিৎসা না দেয়ায় হাড়গুলো এখনও জোড়া লাগেনি। কোথাও কোথায় হাড় বৃদ্ধি হয়ে হাতের স্বাভাবিক আকৃতি নষ্ট হয়ে গেছে। নির্যাতনের কারণে কাজের সক্ষমতা কমতে থাকলে তার উপর গৃহকর্তী রিমা আহমেদ-এর নির্যাতন বাড়তে থাকে। সর্বশেষ ছাবিনার বাড়ির সাথে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। নির্যাতনের এক পর্যায়ে মাথায় ধারালো কিছু দিয়ে আঘাত করলে মাথায় গভীর ক্ষত হয়। এরপর অচেতন ছাবিনাকে বাথরুমে নিয়ে দিনের পর দিন আটকে রাখে।
এদিকে ছাবিনার মা মমতাজ বেগম মেয়ের কোন খোঁজ খবর না পেয়ে খুঁজতে খুঁজতে গৃহকর্তীর বাড়িতে যান। প্রথমে দেখতে না দিলেও মায়ের কাকুতি মিনতির এক পর্যায়ে দেখতে দিতে বাধ্য হয়। নিজের মেয়েকে দেখে চিনতে পারেনি মা মমতাজ বেগম। মেয়েকে এই নির্যাতনের ঘটনা যাতে কাউকে না জানায় তার জন্য হুমকি দেয়। তিনি অনেক কষ্ট করে মেয়েকে নিয়ে বাড়িতে এলেও থানায় মামলা করতে পারেননি। আগে হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিয়ে মেডিকেল সার্টিফিকেট নিয়ে আসতে বলে পুলিশ। পরে আসেন খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
গৃহকর্তী সাবিনা এ প্রতিবেদককে বলেন, “সাহেব আমাকে নির্যাতন করতো না। ম্যাডাম প্রতিদিন আমার মুখের মধ্যে কাপড় ঢুকিয়ে পেটাতো। হাত পা ভেঙে গেলে আরও বেশি মাত্রায় নির্যাতন করতো। আমি তাদের উপযুক্ত বিচার চাই।”
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাবিনার চিকিৎসক অর্থপেডিক্স বিভাগীয় প্রধান ও উপাধ্যক্ষ ডাঃ মেহেদী নেওয়াজ বলেন, মেয়েটির অবস্থা খুব গুরুতর। অব্যাহত নির্যাতনে তার দু’হাত ও পা অনেক খন্ড হয়ে গেছে। চিকিৎসা না দেয়ার কারণে কোথাও অস্বাভাবিকভাবে জোড়া লাগছে আবার কোথায় লাগেনি। তাই হাতের স্বাভাবিক আকৃতি নষ্ট হয়ে গেছে। তাকে খুব দ্রুত ঢাকায় পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা দেয়ার প্রয়োজন।