কয়রায় জনগনের আস্থা ভালবাসায়  ইউএনও শিমুল কুমার সাহা

0
403
নিজস্ব প্রতিবেদক :
সেই ধন্য নরকূলে লোকে নাহি ভুলে, মনের মন্দিরে নিত্য সেবে সর্বজন”। সারাবিশ্বের ন্যায় আমাদের দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও এমন কিছু সরকারি কর্মকতা রয়েছেন যারা তাদের কর্মযজ্ঞ দিয়ে জনগনের মনে আস্থার জায়গা করে নিয়েছেন।
এমনই একটা নাম বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণের উপকূলীয় অঞ্চল  খুলনার কয়রা  উপজেলার নির্বাহী কর্মকতা শিমুল কুমার সাহা। অত্যন্ত সৎ, মেধাবী, বিনয়ী, সদালাপী, দায়িত্ব ও কর্তব্যপরায়ন এ কর্মকর্তা ২০১৭ সালের ৩১ আগস্ট কয়রা উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে যোগদান করেন।
সেই থেকেই উপজেলাবাসীর কল্যাণে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। দিনরাত একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্ত ছুটে চলেছেন। যেকোন প্রাকৃতিক দুর্যোগে অসহায় মানুষের পাশে দাড়িয়েছে ।
তিনি যোগদানের পর কয়েকটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হানে, ফণি,  ঘূর্নিঝড় বুলবুল ও আম্পান এই উপজেলায়। অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ঐ সময় সকল প্রতিকূলতাকে উপেক্ষা করে অসহায় ও ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাড়িয়েছিলেন তিনি।
বসতবাড়ি নির্মাণে সরকারি ও বেসরকারী সংস্থা গুলোর (এনজিও) এর মাধ্যমে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন । কখনও কখনও নিজের ব্যক্তিগত অর্থ দিয়েও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এখানেই শেষ নয়। বর্তমান বৈশ্বিক প্রাণঘাতী মহামারি করোনা ভাইরাস এর প্রাদুর্ভাব রোধে নিয়েছেন সময় উপযোগী পদক্ষেপ।
জীবনের ঝুঁকিনিয়ে উপজেলা ব্যাপি মাইকিং, পোষ্টার-লিফলেট বিতরন, গণসংযোগ, সভা, সমাবেশ এর মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করেছেন। বিভিন্ন ইউনিয়নে স্কুল, কলেজ ও অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নির্মাণ করেছেন কোয়ারেন্টাইন। মাস্ক পরিধান, সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখা, জনসমাগম রোধ, বিভিন্ন বাজার-মার্কেট এ ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা, জরিমানা আদায়, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করে মানুষের প্রশংসা কুঁড়িয়েছেন।
উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে করোনা এক্সপার্ট টিম গঠন, প্রশিক্ষণ প্রদান, কর্মহীনদের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরন, বহিরাগতদের বাড়িতে লকডাউন ঘোষনা সহ হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার।
করোনা সংক্রান্ত কোন অভিযোগ তার কাছে গেলেই তিনি কারো মুখাপেক্ষী না হয়ে নিজেই দ্রুঁত ছুটে যান সেখানে এবং অভিযোগের সত্যতা যাচাই করে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তার কর্মপ্রচেষ্টার ফলে জেলার মধ্যে অদ্যাবধি এই উপজেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে কম। তার এ চেষ্টা তিনি অব্যহত রেখেছেন। ইউএনও শিমুল কুমারের উদ্যোগে সরকারি সহায়তার পাশাপাশি সাধারন মানুষের সাহায্যে এগিয়ে এসেছেন কয়রা উপজেলার কর্মরত সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারী ও শিক্ষকবৃন্দ।ইউএনও এর আহবানে  তাদের স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রদত্ত একদিনের বেতন দিয়ে গঠন করা হয়েছে ‘বেসরকারী মানবিক সহায়তা সেল’। এ মানবিক সহায়তা সেল থেকে ১২০০ অসহায় পরিবারের মাঝে খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হয়। তার পর ও বসে থাকেননি মানবিক এই ইউএনও তার ব্যক্তিগত পরিকল্পনায় করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত অসহায়, স্বল্প আয়ের ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারকে সহায়তা ও তাদের দোর -গোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে   চালু করেন ভ্রাম্যমান স্বল্পমূল্যের বাজার। তিনি যোগদানের পর থেকে তিনি তার উদ্যোগে নানা জনকল্যাণমূখী কাজ করেছেন। ইউএনও শিমুল কুমার সাহার পরিকল্পনা ও উদ্যোগে উপজেলা পরিষদ চত্বরে শৈশব আনন্দ নাসক শিশু পার্ক, পাঠাগার,জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের  ম্যুরাল,শিক্ষার মানোন্নয়নেে সুুন্দরবন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে বেগম ফজিলাতুন্নেছা  মুজিব হল রুম ও একই নামে একটি গেইট ও জেলা  প্রশাসকের অনুপ্রেরণায় চন্ডীপুর ইউনাইটেড মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিবাস নামে আবাসিক ভবন নির্মান করেছেন।
সাম্প্রতিক  20 মে  সুপার সাইক্লোন ঘূর্ণিঝড় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন, অসহায়দের সাহায্য সহযোগিতা, গ্রামবাসীর সাথে স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে বেঁড়িবাধ নির্মানে সহযোগীতাসহ ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারী ও বেসরকারী আর্থিক সহায়তা প্রদানে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এভাবেই জয় করেছেন সাধারন মানুষের হৃদয়। জনগনের কাছে আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতিক হয়ে উঠেছে।
কয়রার দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের খেটে খাওয়া দিন মজুর আলম হোসেন জনান,কয়রায় করোনা সংক্রমন  রোধে ও আম্পান পরবর্তী সময়ে  ইউএনও স্যার নিজেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কয়রার প্রত্যন্ত অঞ্চল ছুটে চলেছেন।তার দেশ ও জনবান্ধব কর্মকান্ড কয়রায় সর্বত্র আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। কর্ম ও দক্ষতার মাধ্যমে তিনি মানুষের ভালবাসা ও সম্মান অর্জনে সক্ষম হয়েছেন।
কয়রা সদর ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির বলেন, ইউএনও শিমুল কুমার সাহা যোগদানের পর থেকে রাত-দিন কয়রা বাসীর জন্য নিবেদিতপ্রাণ হয়ে কাজ করে যাচ্ছে। এমন নিষ্ঠাবান, কর্মঠ ও মানবিক গুণাবলি সম্পন্ন  ইউএনও কয়রাবাসী আগে দেখেনী।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প কর্মকর্তা  ডাঃ সুদীপ বালা জানান,ইউএনও শিমুল কুমার সাহা অত্যন্ত পরিশ্রমী। তিনি করোনা ও আম্পান ক্ষতিগ্রস্ত পরিস্থিতিতে সার্বক্ষণিক  খোঁজ খবর নিচ্ছেন ও উপজেলার বিভিন্ন প্রাঁন্তে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন।
উপজেলা বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের কাছে ভালবাসার এক নাম ইউএনও শিমুল কুমার সাহা। এলাকাবাসী ইউএনও  প্রশংসা করে জানান,ইউএনও শিমুল কুমার সাহা একজন দক্ষ সরকারি অফিসার হিসাবে প্রতিনিয়ত মানুষের কল্যানে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণে দুর্যোগ প্রবণ উপকূলীয় দুর্গম এলাকায় তিনি প্রতিনিয়ত ছুটে গিয়ে মানুষকে কাঙ্খিত সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
কয়রা বাজার ব্যবসায় সমিতির সাধারন সম্পাদক আসাদুল ইসলাম বলেন, জনগণের সেবা ও সরকারের কাঙ্খিত উন্নয়নে কয়রার ইউএনও অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।
কয়রা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শিমুল কুমার সাহা বলেন, প্রজাতন্ত্রের জন্যই জনপ্রশাসন আর জনগণের সেবা করাই জনপ্রশাসনের প্রধান কাজ।কয়রায় যোগদানের পর থেকে সরকারি প্রজাতন্ত্রের একজন কর্মচারী হিসাবে অর্পিত দায়িত্ব পালন করছি মাত্র। করোনা পরিস্থিতেও সরকারি নির্দেশনা মতে জেলা প্রশাসকের নির্দেশমত কাজ করে যাচ্ছি। সারা দেশের ইউএনও -এসিল্যান্ডসহ সরকারি কর্মকর্তারা যেভাবে কাজ করছে  আমিও সে ভাবে কাজ করছি।
বেশী কিছু করছি বলে মনে হয় না।
তিনি আরও বলেন, দেশে করোনার ডংকা-টা বেজেছিল ৮ মার্চ। ভয়, শঙ্কা আর  অস্থিরতায় মেতেছিল জাতি। কারন ছোঁয়াচে এ ঘাতক ব্যধিটির প্রতিষেধক ছিলনা। মানুষকে সচেতন করে করোনা মোকাবেলা করাই ছিল একমাত্র সমাধান। সেই যুদ্ধ চলছে এখনো। সময়ের সাথে বাঁড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। বেড়েছে কাজের ব্যাপ্তি।রাষ্ট্রের নির্দেশনা মেনে তার বাস্তবায়ন, মানুষের স্বাস্থ্যসুরক্ষা নিশ্চিত করে তাদের নানা রকম সমস্যা চিহ্নিত করে ব্যবস্থা গ্রহনের কাজটি করতে হচ্ছে। স্বাস্থ্যঝুঁকি জেনেও কাজ করতে হচ্ছে মানুষের জন্য। এ কারনে দূরত্ব বেড়েছে পরিবারের সাথে। দিন শেষে একমাত্র সন্তানকে ভালোবেসে বুকে জড়িয়ে ধরার আঁকুতিতে ছেদ ঘটিয়েছে ভয়ঙ্কর করোনা। তবে দেশ, মাটি ও মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা শক্তি ও সাহস যুগিয়েছে প্রতিকুল পরিস্থিতি মোকাবেলার।