কয়রায় খাটিঁ মধুর নামে চলছে প্রতারণা, ২২ মণ ভেজাল মধুসহ আটক দুই

0
642

কয়রা (খুলনা) প্রতিনিধি:-

বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণে সুন্দরবন কোল ঘেষা কয়রা উপজেলা। কয়রার সুন্দরবনের খাঁটি মধুর কদর দেশজুড়ে। কয়রার মধুর জনপ্রিয়তা সর্বমহলে। সেই জনপ্রিয়তা কাজে লাগিয়ে সুন্দরবন–সংলগ্ন কয়রা উপজেলায় সুন্দরবনের খাঁটি মধুর নামে চলছে ভেজাল মধুর ব্যবসা। ক্ষমতাশীন দলের লেবাচ ধরী ও নেতাদের ছত্যছায়ায় একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী চক্র অতি মুনাফার আশায় সুন্দরবন থেকে সংগৃহীত মধুতে ভেজাল দিয়ে বাজারে তা উচ্চ দামে বিক্রি করছে। ভেজাল মধু শনাক্ত করার সাধারণত কোনো উপায় না থাকায় পর্যটকসহ ক্রেতাসাধারণ তা কিনে প্রতারিত হচ্ছে।
সুন্দরবনের বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, প্রতিবছর এপ্রিল ও মে মাসে বন বিভাগের রাজস্ব প্রদান সাপেক্ষে মৌয়ালরা সুন্দরবন থেকে মধু সংগ্রহের অনুমতি পায়। এই মধু আহরণ মৌসুম শেষ হয়ে যাওয়ার পরপরই একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী চক্র মধুতে ভেজাল দিয়ে বাজার ও দেশের বিভিন্ন স্থানে সুন্দরবনের খাঁটি মধুর বলে বিক্রি করা শুরু করে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, অসাধু ব্যবসায়ী চক্রটি সুন্দরবনে মধু আহরণ মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই মৌয়ালদের মোটা অঙ্কের টাকা দাদন দেয়। এই ব্যবসায়ী চক্রের মধ্যে ক্ষমতাশীন দলের নেতা কর্মী ও রয়েছন। দাদনবাজ ব্যবসায়ীরা অতি মুনাফা লাভের আশায় বনের অভ্যন্তরে থাকা অবস্থাতেই সংগৃহীত মধুর সঙ্গে চিনির শিরা ও অন্যান্য উপকরণ মিশিয়ে পরে লোকালয়ে আনতে বলে দেয়। মৌয়ালদের একাংশ ভেজাল মধু তৈরির উপকরণ, সরঞ্জামসহ মৌসুমে বনে প্রবেশ করে।

সুন্দরবনের বনবিভাগের বিভিন্ন রেঞ্জের অফিস থেকে মৌয়ালরা অনুমতি নিয়ে বনে প্রবেশ করে সংগৃহীত মধুর সঙ্গে অন্যান্য উপাদান মিশিয়ের ভেজাল মধু তৈরি করে। এ ছাড়া অনেক সময় বন থেকে আহরিত মধু লোকালয়ে এনে চাষের মধু মিশিয়েও ভেজাল দেওয়া হয়।
মাঝে মধ্যে উপজেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান ও মাঝে মধ্যে কয়রা থানা হাতে ধররা পড়ে। গত ৯ মে শনিবার রাত ১০ টায় কয়রা থানা অফিসার ইনচার্জ মোঃ রবিউল হোসেনের নেতৃত্বে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে কয়রা আমাদি পুলিশ ফাঁড়ি সংলগ্ন এলাকা থেকে ২৫ ড্রাম ভেজাল মধু (আনুমানিক ২২ মণ ) সহ ২ জনকে আটক করে কয়রা থানা পুলিশ। এ ব্যাপারে কয়রা থানা একটি মামলা দায়ের হয়েছে মামলা নং ৯। আটককৃতরা হলেন ১। পল্লী মঙ্গল গ্রামের মৃত ওহেদ আলী পুত্র ফজলু গাজী । মাদার বাড়িয়া গ্রামের শওকত সরদারের রবিউল। ভ্রাম্যমান আদালত ও থানা পুলিশ মাঝে মধ্যে অভিযান চালালেও বন বিভাগের এ ক্ষেত্রে তেমন কোনো তৎপরতা নেই।
সুন্দরবন খুলনা রেঞ্জের অন্তর্গত কয়রা উপজেলার মহেশ্বরীপুর, কাটকাটা,৬ নং কয়রা, বিনাপানী, সুতির অফিস গ্রামের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক জেলে ও গ্রামবাসি জানান,বনে এখন আর আগের মতো মধু পাওয়া যায় না। মধু আহরণ মৌসুমের শুরুতে গরান ও খলসী ফুলের মধুর মৌসুম এবং শেষের দিকে কেওড়া ফুলের মধুর মৌসুম। কিন্তু বনে গরান ও খলসী এই দুই জাতের গাছের সংখ্যা ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। তাই একশ্রেণির অসৎ মৌয়াল অধিক লাভের আশায় নকল মধু বানানোর জন্য বন বিভাগের চোখ ফাঁকি দিয়ে বস্তাভর্তি চিনি ও বড় বড় পাতিল নিয়ে বনে যায়। এই ভেজাল মধু তৈরির জন্য এলাকায় কয়েকটি সংঘবদ্ধ চক্র গড়ে উঠেছে এদের কয়েক জনের নামে আগে মামলাও আছে। এর সঙ্গে শতাধিক লোক জড়িত। কয়রায় এ চক্রের শক্তিশালী সিন্ডিকেট রয়েছে।মুল নেতৃত্বদান করী হোতা ও মধু দাদন কারী ব্যবসায়ী থাকেন ধরা ছোঁয়ার বাইরে। কয়রা উপজেলা সুন্দরবন সংলগ্ন হওয়াতে সুন্দরবনের অপরুপ সৌন্দর্য দেখার জন্য বছরের অধিকাংশ সময়ই পর্যটকদের আনাগোনা থাকে। পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন স্থানে সুন্দরবনের মধু বিক্রির দোকান গজিয়ে উঠেছে।

কয়রার মেইন রোডসহ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা যায়, মুদিদোকান, কাপড়ের দোকান, ওষুধের দোকান, ফলের দোকান, পান–সিগারেটের দোকান, কবিরাজি দোকান,বেকারি, জুতার দোকান এমনকি সেলুনেও সুন্দরবনের খাঁটি মধুর পাওয়া যাই লিখ ভেজাল মধু বিক্রি করা হচ্ছে। সব স্থানে প্রকারভেদে প্রতি কেজি ২৫০,৩৫০,৫০০ টাকা থেকে শুরু করে১০০০ টাকা দরে এ মধু বিক্রি করা হচ্ছে। এ মধু কতটা খাটি না তা নিয়ে নানা প্রশ্ন সচেতন মহলের।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সুন্দরবনের দীর্ঘদিন যাবত এক মৎস্য ব্যবসায়ী বলেন, সুন্দরবনের মৌয়ালদের কারও কারও বিরুদ্ধে ভেজাল মধু তৈরির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এ বিষয়ে বন বিভাগের উদাসীনতাও বরাবরেরই। তাদের অবশ্যই এ বিষয়ে কঠোর হওয়া উচিত।

পশ্চিম সুন্দরবনের কাশিয়াবাদ স্টেশন কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল বারহাম বলেন, ভেজাল মধু তৈরির অভিযোগ তিনি শুনেছেন।তিনি কয়রা উপজেলা সদরের পল্লীমঙ্গল গ্রামে একটি চক্র দীর্ঘদিন যাবত মধুতে ভেজাল দিয়ে ভাসছেন বলে বিভিন্ন মধ্যমে জানতে পারেন। তিনি বলেন, কয়রাসদর সহ আশপাশের দোকানে প্রশাসন যদি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে, তাহলে মধুতে ভেজাল দেওয়ার প্রবণতা কমবে।

কয়রা থানা অফিসার ইনচার্জ রবিউল হোসেন বলেন, গতকাল শনিবারে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করে একটি ছোট পিকআপসহ আনুমানিক ২২ মণ ভেজাল মধুসহ ২ জনকে আটক করা হয়।এ ব্যাপারে কয়রা থানায় অজ্ঞাত সহ ৪জনকে আসামী মামলা দায়ের করা হয়েছে। বাকি দের ধরতে আমাদের অভিযান অব্যহত আছে। তিনি  বলেন অপরাধী যেই হোক আইনের উদ্বে কেউ নয়।

কয়রা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শিমুল কুমার সাহা বলেন,‘আমরা ইতিমধ্যে মধুতে ভেজাল দেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছি। খুব দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’