কয়রা প্রতিনিধি : শ্রমিকের শ্রমের উপর নির্ভর করেই ইটভাটার মালিকরা কোটি কোটি টাকা আয় করলেও শ্রমিকের ভাগ্যে জোটে শারিরিক নির্যাতন আর বঞ্চনা।প্রতি বছর ইটের মূল্য বৃদ্ধি করা হলেও বাড়ে না শ্রমিকের মজুরি। প্রতিদিন ৪০০ টাকায় ১২ থেকে ১৪ ঘন্টা শ্রম দেয় শ্রমিকরা। আর তাদের মাথা পিছু ৪০০ টাকা দেয় সর্দাররা। সর্দাররা শ্রমিকদের টাকা আগেভাগে বুঝে নেওয়ার কারনে ওই টাকা সমন্বয় না হওয়া পর্যন্ত লোহার শিকল দিয়ে বেধে অথবা শারিরিক নির্যাতন চালিয়ে কাজ আদায় করে নেয়া হয়।ঠিক তেমনি শ্যামনগর থানার পদ্মপুকুর গ্রামে ফজলু মোড়লের পুত্র ভাটা সর্দার জামিরুল মোড়ল এবং লাইন সর্দার কয়রা থানা ঘাটাখালী গ্রামের মোহাম্মাদ আলীর পুত্র আমজাদ মোল্লা দু জনে মিলে কয়রা থানা ও শ্যামনগর থানা থেকে কিছু সংখ্যক শ্রমিক ডুমুরিয়া উপজেলার মেসার্স চড়াই ব্রিকস্ এ কাজের জন্য নিয়ে যায় ।ঐ ইট ভাটায় ওসমান গাজী (৩২) নামক শ্রমিক কে আটকে রেখে জোর পূর্বক কাজ করানো এবং নির্যাতনের খবর পাওয়া যায়।শ্রমিক ওসমান গাজী কে নির্যাতনের ১৫ দিন পর তার স্বজনরা অন্য শ্রমিকদের কাছ থেকে নির্যাতনের খবর জানতে পেরে স্থানীয় গন্যমাণ্য ও সচেতন নাগরিকদের সহযোগিতায় ওসমান গাজীকে একটি তালা বদ্ধ ঘর থেকে শিকল বাধা অবস্থায় উদ্ধার করে।খবর নিয়ে জানা গেছে, ডুমুরিয়া উপজেলার মেসার্স চড়াই ব্রিকসে ওসমান গাজীকে একটি তাল বদ্ধ ঘরে আটকে রেখে দিনে পাহারা দিয়ে ১৫ দিন কাজ করানো হয়। আটক থাকা শ্রমিক ওসমান গাজী জানান, কিছু দিন কাজ করার পর হঠ্যাৎ আমি খুবই অসুস্থ হয়ে পড়ি এবং প্রতিদিন আমাকে ২ টা করে ইনজেকশান দিতে হত এমতাবস্থায় কাজ করতে অপারগতা জানালে সর্দার আমাকে ধমক দিয়ে বলেন, কাজ করতে পারবিনা তা টাকা নিয়েছিস কেন, তোরে কি আমি বসে বসে খাওয়াব।শরির যাই যাক তবুও কাজ করতে হবে।অসুস্থ অবস্থায় কাজে যেতে না চাইলে বেপরোয়া মারধর করে জোর করে কাজ করাতো, রাতে তালা বদ্ধ ঘরে শিকল দিয়ে বেধে রাখতো এবং রাতে না খাইয়ে রাখত।তাকে উদ্ধার করে এনে কয়রা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হলে কর্তব্যরত ডাক্তার জানান, তার মেরুদন্ডে চিড় ধরেছে, তাই তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিকেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।এ বিষয়ে সর্দার জামিরুল মোড়ল ও আমজাদ মোল্লার সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে নির্যাতনের কথা অস্বীকার করে তারা বলেন, ওসমান ও তার ভাই দু জনে টাকা নিয়ে ভাটায় আসার ৩ দিন পর ওসমানের ছোট ভাই কাজ ছেড়ে পালিয়ে যায় তাই তার (ওসমানের ছোট ভাই) টাকা আদায়ের জন্য ওসমান কে আটকিয়ে রাখি। পরে পাওনা টাকা ফেরত দিলে ওসমানকে ছেড়ে দেই।এদিকে অনুসন্ধানে জানা গেছে, বছরের পর বছর বিভিন্ন ইট ভাটায় এ ধরনের ঘটনা নিরবে ঘটে আসছে এবং শ্রমিক নির্যাতনের বিষয়টি দিন দিন বেড়েই চলেছে।