কেরালার বন্যাদুর্গত জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা ও মানবিক সাহায্য নেওয়া শুরু করতে যাচ্ছে নরেন্দ্র মোদি সরকার

0
618

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ২০০৪ সালে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন জোট ভারতে সরকার গঠনের পর প্রাকৃতিক দুর্যোগে আন্তর্জাতিক সহায়তা না নেওয়ার নীতি গ্রহণ করে। পরের সরকারগুলোও সেই ধারাবাহিকতায় প্রয়োজনে অন্য দেশে সহায়তা পাঠালেও নিজেরা গ্রহণ করেনি। জাতীয় অর্থনীতির সক্ষমতা ও আত্মনির্ভরশীলতার প্রতিফলন হিসেবে দেখে আসা এই নীতিতে পরিবর্তন ঘটাচ্ছে ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসা বিজেপির নেতৃত্বাধীন সরকার। নিজস্ব সূত্রের বরাতে দেশটির সম্প্রচারমাধ্যম এনডিটিভি বলছে বন্যাদুর্গত কেরালার জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা ও মানবিক সাহায্য নেওয়া শুরু করতে যাচ্ছে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন সরকার। এর আগে বুধবার রাজ্য পুনর্গঠনে প্রয়োজনীয় তহবিল যোগানোয় কেন্দ্র সরকারের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন কেরালার অর্থমন্ত্রী।ভারতের দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য কেরালায় সাম্প্রতিক বন্যা ও ভূমিধসে চার শতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। ভারতের ‘ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি রেসপন্স সেন্টার’ (এনইআরসি)-এর তথ্য অনুযায়ী, বন্যায় রাজ্যের ৩০ হাজার ৫০০ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পিনারায়ি ভিজায়ান জানান, প্রাথমিক হিসাবে বন্যার কারণে রাজ্যটির প্রায় ১৯ হাজার ৫১২ কোটি রুপির ক্ষতি হয়েছে।

বুধবার সকালের দিকে থাইল্যান্ডের একজন দূত টুইটার বার্তায় জানান, ভারত সরকার পরিস্কার জানিয়ে দিয়েছে কেরালার বন্যা দুর্গতদের জন্য তারা আন্তর্জাতিক সহায়তা গ্রহণ করবে না। ভারতের কর্মকর্তারাও ইঙ্গিত দেন সংযুক্ত আরব আমিরাত ঘোষিত সাতশো কোটি রুপি গ্রহণের সুযোগ সীমিত। কেরালার মুখ্যমন্ত্রীকে পিনারায়ি ভিজায়ানকে ওই অর্থ সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভাইস প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাখতুম। ১৮ আগস্ট তিনি টুইটার বার্তায় কেরালার জন্য ত্রাণ সরবরাহের জন্য একটি কমিটি গঠনেরও ঘোষণা দেন।

এমন পরিস্থিতিতে এনডিটিভি’র ওয়েবসাইটে বলা হয়, এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও দেশ না পাঠালেও বিভিন্ন সংস্থা ও ফাউন্ডেশনের তরফ থেকে সাহায্যের প্রস্তাব পেয়েছে ভারত সরকার। বিদ্যমান নিয়ম ও প্রক্রিয়া মেনে এসব প্রস্তাব গ্রহণ করা হবে বলে বুধবার সন্ধ্যায় ওই সূত্রের কাছে জানতে পেরেছে এনডিটিভি। রাষ্ট্রীয় নীতির বদল ঘটলেও ভারত সরকারের এই সিদ্ধান্তে কেরালা স্বস্তি পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এর আগে বুধবার রাজ্য সরকারের অর্থমন্ত্রী থমাস ইসাক কেরালা পুনর্গঠনে প্রয়োজনীয় বিপুল অর্থ বরাদ্দে কেন্দ্রীয় সরকারের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। কেরালা ২ হাজার কোটি চাইলে কেন্দ্র ৬০০ কোটি দেয় জানিয়ে তিনি বলেন, এই দিয়েও আমি জানি না কেন তারা বিভিন্ন বিদেশি সরকার ও ব্যক্তি সাহায্য দিতে চাইলেও তারা অস্বীকার করছে।

ইসাক বলেন, আরব আমিরাতের প্রস্তাব বিষয়ে কেন্দ্র বলছে আসলে দেখা যাবে। আরব রাষ্ট্রটির সঙ্গে ভারতের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক জানিয়ে তিনি বলেন, এমনকি সেখানকার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষও হতে পারে মালয়লিরা (কেরালার নৃতাতিত্বক গোষ্ঠী)। ভারতের প্রায় ৩০ লাখ নাগরিক আরব আমিরাতে কাজ করে যার ৮০ শতাংশই কেরালা রাজ্যের।

ভারত সরকারের তরফ থেকে আন্তর্জাতিক সাহায্য গ্রহণের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না আসলেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে বলেছে, বিদেশে বসবাসরত ভারতীয় নাগরিকরা চাইলে শুল্কমুক্তভাবে কেরালার মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে অনুদান পাঠাতে পারবে।