করোনায় ২৪ ঘণ্টায় ৪৪ মৃত্যু, শনাক্ত ২৮৫৬

0
293

দেশে করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৪৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল এক হাজার ১৩৯ জনে। একই সময়ে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন আরও দুই হাজার ৮৫৬ জন। ফলে করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৮৪ হাজার ৩৭৯ জনে। শনিবার দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস বিষয়ক নিয়মিত হেলথ বুলেটিনে এ তথ্য জানানো হয়। অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা এ বুলেটিন উপস্থাপন করেন। মোট ৫৯টি ল্যাবে নমুনা পরীক্ষার তথ্য তুলে ধরে তিনি জানান, করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৪ হাজার ৩৫টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষা করা হয় ১৩ হাজার ৬৩৮টি নমুনা। এ নিয়ে দেশে মোট নমুনা পরীক্ষা করা হলো চার লাখ ৮৬ হাজার ৯৬০টি। নতুন নমুনা পরীক্ষায় করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে আরও দুই হাজার ৮৫৬ জনের মধ্যে। ফলে ভাইরাসটিতে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৮৪ হাজার ৩৭৯ জনে। আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছেন আরও ৪৪ জন। এ নিয়ে মোট মৃত্যু হলো এক হাজার ১৩৯ জনের। ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ৫৭৮ জন। ফলে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেন মোট ১৭ হাজার ৮২৮ জন। নতুন করে যারা মারা গেছেন তাদের ৩৭ জন পুরুষ এবং নয়জন নারী। ১৯ জন ঢাকা বিভাগের, ১১ জন চট্টগ্রাম বিভাগের, দুজন রাজশাহী বিভাগের, তিনজন সিলেট বিভাগের, তিনজন বরিশাল বিভাগের, পাঁচজন রংপুর বিভাগের, একজন খুলনা বিভাগের এবং দুজন ময়মনসিংহ বিভাগের। এদের ৩২ জন মারা গেছেন হাসপাতালে এবং ১৪ জন মারা গেছেন বাসায়। এদের মধ্যে ২১ থেকে ৩০ বছরের একজন, ত্রিশোর্ধ্ব ছয়জন, চল্লিশোর্ধ্ব তিনজন, পঞ্চাশোর্ধ্ব ১২ জন, ষাটোর্ধ্ব ১৫ জন, সত্তরোর্ধ্ব সাতজন, ৮১ থেকে ৯০ বছর বয়সী একজন, ৯০ থেকে ১০০ বছর বয়সী একজন এবং শতবর্ষী একজন মারা গেছেন। গত শুক্রবারের বুলেটিনে জানানো হয়, করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৬ জন মারা গেছেন, যা একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। ১৫ হাজার ৯৯০টি নমুনা পরীক্ষায় করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে আরও তিন হাজার ৪৭১ জনের মধ্যে, যা একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড। সে হিসাবে আগের ২৪ ঘণ্টার তুলনায় গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু ও রোগী শনাক্ত- উভয় সংখ্যাই কমেছে। শনিবারের বুলেটিনে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার তুলনায় রোগী শনাক্তের হার ২০ দশমিক ৯৪ শতাংশ। এখন পর্যন্ত শনাক্ত রোগীদের মধ্যে সুস্থতার হার ২১ দশমিক ১৩ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩৫ শতাংশ। ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা, উপদেষ্টামÐলীর সদস্য ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম আজ (গতকাল শনিবার) সকালে ইন্তেকাল করেছেন। প্রিয় দেশবাসী, প্রতিদিন করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যার পরিসংখ্যান তুলে ধরা সুখকর নয়। কারণ এই সংখ্যা ও পরিসংখ্যানের মধ্যে আমি, আপনি, আমার-আপনার আপনজন, আত্মীয়স্বজন, বন্ধু, সহকর্মী, প্রতিবেশী প্রতিদিনই অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, আক্রান্তের তালিকা ইতোমধ্যে বেশ দীর্ঘ। মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, অন্যান্য জনপ্রতিনিধি, স্বাস্থ্যকর্মী, সাংবাদিক, প্রশাসন, অন্যান্য পেশার মানুষ, সাধারণ জনগণ এই পরিসংখ্যানে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন এবং মৃত্যুর তালিকাও দীর্ঘ হচ্ছে। স্বাস্থ্যসেবা, আইনশৃঙ্খলা ও অন্যান্য সেবাদানকারীরা তাদের সর্বোচ্চ দিয়ে কাজ করলেও এই সংখ্যা ও পরিসংখ্যানকে নিম্নমুখী করা যাবে না, যদি না আপনারা অর্থাৎ আমরা সচেতন না হই। নাসিমা সুলতানা আরও বলেন, করোনায় আক্রান্ত হয়ে আমি বা আপনি একটি সংখ্যা অন্তর্ভুক্ত হলে এবং পরিসংখ্যানে স্থান পেলে গবেষণার কাজে সহায়তা হবে। কিন্তু আমার-আপনার পরিবারের আপনজন, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু, সহকর্মী যে কষ্ট ও দুঃখের মধ্যে পড়বে, সেটা বিবেচনা করে সবার প্রতি বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি, করোনা মোকাবিলায় সচেতন হোন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। মাস্ক পরুন, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখুন, বারবার ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান দিয়ে হাত ধুবেন। অতি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যাবেন না। যেখানে-সেখানে কফ-থুথু ফেলবেন না। অপরিষ্কার হাত চোখে-মুখে-নাকে দেবেন না। ধূমপান থেকে বিরত থাকুন। করোনার ঝুঁকি বাড়ায় এমন বিষয়গুলোর প্রতি সজাগ থাকুন। স্বাস্থ্যকর খাদ্য-পানীয় গ্রহণ করুন। গোটা বিশ্ব এখন করোনাভাইরাসের ছোবলে বিপর্যস্ত। গত ডিসেম্বরে চীনের উহান শহর থেকে ছড়ানোর পর এ ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে এখন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে ৭৭ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। মৃতের সংখ্যা চার লাখ ২৮ হাজারেরও বেশি। তবে পৌনে ৪০ লাখ রোগী ইতোমধ্যে সুস্থ হয়েছেন। বাংলাদেশে করোনাভাইরাস প্রথম শনাক্ত হয় গত ৮ মার্চ।