ওসি মোয়াজ্জেমের আত্মপক্ষ সমর্থন, ২০ নভেম্বর যুক্তিতর্ক

0
376

খুলনাটাইমস: ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেন নিজেকে নির্দোষ দাবি করে ন্যায় বিচার দাবি করেছেন। এরপর যুক্তিতর্ক শুনানির জন্য আগামী ২০ নভেম্বর দিন ধার্য করেন আদালত। গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন এই তারিখ ধার্য করেন। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম শামীম এসব তথ্য জানান। এদিন মামলার বাদী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন ও আসামি ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন আদালতে হাজির ছিলেন। এ পর্যন্ত মামলার ১২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হলো।
আত্মপক্ষ সমর্থনকালে ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন আদালতে অঝোরে কেঁদে বলেন, এ অভিযোগে যত বড় শাস্তিই দেন না কেন, তার চেয়ে বড় শাস্তি আমি পেয়ে গেছি। মোয়াজ্জেম হোসেন, সামাজিকভাবে এ মামলার কারণে হেয় হয়েছি অনেক। আমার ১৫ বছরের ছেলে স্কুলে যেতে পারে না। আমি ১০টা খুন করলেও এত বড় সাজা হতো না। ৭০/৭৫ বয়সী আমার মা এ ঘটনায় খুবই মর্মাহত হয়েছেন। আমি কী অপরাধ করলাম! উনি (বাদী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন) যদি ভিডিওটা পুরোপুরি দেখতেন, তবে এ মামলা করতেন না। উনি ভিডিও ঠিকমতো দেখেনই নাই। তিনি বলেন, গত ৬ থেকে ৭ মাস আমাকে সারাবিশ্বে কলঙ্কিত করা হয়েছে। চাকরি থেকে আমাকে রংপুরে ক্লোজ করা হয়। আমার বিরুদ্ধে জুতা মিছিল পর্যন্ত হয়েছে। অথচ আমি এ মামলায় আইওকে (তদন্তকারী কর্মকর্তা) সর্বোচ্চ সহযোগিতা দিয়েছি। আমার মোবাইল তার কাছে জমা দিয়েছি। কিন্তু আমার দুর্ভাগ্য এমন তদন্ত কর্মকর্তার কাছে মামলা পড়েছে যিনি আইনানুযায়ী তদন্ত করেননি। উনি (আইও) নিজেই তদন্তের প্রয়োজনে ছবি তুলেছেন। বিচারক জিজ্ঞাসা করেন, আপনার জবানবন্দি গ্রহণকালে আইও কোনো ভিডিও নিয়েছেন কি-না? জবাবে ওসি মোয়াজ্জেম বলেন, না। ওসি মোয়াজ্জেম বলেন, আমার থানায় সিসি ক্যামেরা আছে। আমি তদন্ত কর্মকর্তাকে যে স্ক্রিন শট দিয়েছি, সেখানে তারিখ দেখে তিনি ঘটনার সময় উল্লেখ করেছেন। এডিশনাল ডিআইজি ফায়েজ স্যার আমার কাছ থেকে ভিডিও নিয়েছেন। সেটা আমি তাকে হোয়াটসঅ্যাপে দিয়েছি। আমি নিজে ফেসবুক ব্যবহার করি না। শুধু ঘটনার পরদিন রাতে এসপি সাহেব ফেসবুকে একটি অ্যাকাউন্ট খুলে দেন। দু’দিন পরই আমি তা আবার ডিয়েক্টিভ করে দেই। তখন বিচারক জিজ্ঞাসা করেন, মামলা দায়ের বা তদন্তের জন্য ভিডিও রেকর্ডের কোনো নির্দেশ করে কোনো আইন আছে কি-না? জবাবে মোয়াজ্জেম বলেন, না সেরকম কোনো আইন নেই। তবে টেকনোলজির আপডেটের কারণে আমরা অনেক কিছু ভিডিও ধারণ করে রাখি। এটা আমাদের প্র্যাকটিস আছে এ ক্ষেত্রে পুলিশ হেডকোয়ার্টারের কিছু নির্দেশনাও আছে। তখন বিচারক বলেন, বাদী, সাক্ষী তো দূরে থাক গ্রেফতারের পর আসামির ভিডিও বা ছবি না তোলার ব্যাপারে তো হাইকোর্টের নির্দেশনাই আছে। তখন মোয়াজ্জেম বলেন, জি¦ তা আছে। এগুলো ভিডিও করে আমরা কাউকে দেই না। শুধুমাত্র আদালত চাইলে সাক্ষ্য হিসেবে তা উপস্থাপন করা হয়। আমরা এটা ফেসবুক বা ইউটিউবে পোস্ট করি নাই। কিভাবে গিয়েছে তা স্যোসাল মিডিয়ায় গিয়েছে তা আমি জানি না। জ্ঞানত আমি কোনো অপরাধ করি নাই। আমি মুসলমান, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি। আমি স্যারের কাছে ন্যায়বিচার চাই। এসব বক্তব্যের সবিস্তার তিনি লিখিত আকারে আদালতে জমা দেন। তবে তিনি আত্মপক্ষ সমর্থনে কোনো সাফাই সাক্ষী দেবেন না বলে জানান তার আইনজীবী ফারুক আহাম্মাদ। এরপর আদালত আগামী ২০ নভেম্বর এ মামলার যুক্তিতর্কের জন্য দিন ধার্য করেন। এর আগে, ১৭ জুলাই অভিযোগ গঠন করে সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ৩১ জুলাই দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল। প্রসঙ্গত, গত ২৭ মার্চ ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাতকে যৌন হয়রানির অভিযোগে সোনাগাজী থানায় মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন নুসরাতের মা শিরিন আক্তার। ওই মামলায় অধ্যক্ষ সিরাজকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরবর্তী সময়ে মামলার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নুসরাতকে থানায় ডেকে এনে তার জবানবন্দি নেন ওসি মোয়াজ্জেম। ওই সময় তিনি জবানবন্দি নেওয়ার নাম করে বিভিন্ন আপত্তিকর প্রশ্ন করে তার ভিডিওধারণ করেন। পরে সেটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন তিনি। এই ঘটনায় গত ১১ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সাইদুল হক ব্যরিস্টার সুমন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিওটি দেখে ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। এরপর ২৭ মে ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার রীমা সুলতানা মামলার ১২৩ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন জমা দেন ট্রাইব্যুনালে। এরপর বাদীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। গত ১৬ জুন দুপুরে রাজধানীর শাহবাগ এলাকা থেকে ওসি মোয়াজ্জেমকে গ্রেফতার করে শাহবাগ থানা পুলিশ। পরদিন ১৭ জুন তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন সাইবার ট্রাইব্যুনাল। উল্লেখ্য, ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী ছিলেন নুসরাত জাহান রাফি। ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলার বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ এনেছিলেন তিনি। নুসরাতের মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে ২৭ মার্চ সোনাগাজী থানায় মামলা করেন। এরপর অধ্যক্ষকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ওই মামলায় নুসরাতের বক্তব্য গ্রহণের সময় তা ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে। ৬ এপ্রিল পরীক্ষা দিতে গেলে নুসরাতকে কৌশলে একটি ভবনের ছাদে ডেকে নিয়ে তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেওয়া হয়। পাঁচ দিন পর ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নুসরাত মারা যান।
.