এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রথম অংশের কাজ শেষ হতেই আরও এক বছর

0
368

খুলনাটাইমস এক্সক্লুসিভ: রাজধানীবাসীকে যানজটের ভোগান্তি থেকে মুক্ত করতে নেওয়া নানা পদক্ষেপের মধ্যে একটি হলো এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। শুরুর পর গত ৭ বছরে এই প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি ছিল মাত্র ৯ শতাংশ। প্রায় নয় হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছিল ২০১১ সালে। কিন্তু অর্থসঙ্কটসহ নানা জটিলতায় মাঝে দীর্ঘদিন কাজ আটকে থাকায় আট বছরে নির্মাণের অগ্রগতি ছিল মাত্র ২২ শতাংশ।
তবে চলতি বছরের শেষের দিকে হঠাৎ গতি পেয়েছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প। এরইমধ্যে প্রথম অংশ (বিমানবন্দর-বনানী) দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে, এ অংশের কাজ এগিয়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ। দ্বিতীয় (বনানী-তেজগাঁও) ও তৃতীয় অংশ (মগবাজার- কুতুবখালী) দৃশ্যমান করতে সব কাজ এগিয়ে নেয়া হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন প্রকল্প কর্মকর্তারা। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের সূত্রে জানা গেছে, অর্থ সঙ্কট কেটে যাওয়ায় এখন দ্রুত কাজ চলছে।
এক বছরের মধ্যে বিমানবন্দর থেকে বনানী অংশ চলাচলের জন্য খুলে দিয়ে আড়াই বছরের মধ্যে কুতুবখালী পর্যন্ত পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ করা সম্ভব হবে বলে আশা করছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। জানা গেছে, বিমানবন্দর থেকে বনানী পর্যন্ত প্রকল্পের প্রথম অংশের কাজের ৫০ শতাংশ শেষ হয়েছে। এক বছর পর অর্থাৎ আগামী বছরের সেপ্টেম্বর নাগাদ ওই অংশ যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া যাবে। আর ২০২২ সালের মার্চের মধ্যে পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হবে বলে আশা করছে কৃর্তৃপক্ষ।
সেতু কর্তৃপক্ষ বলছে, কয়েক দফা সময় বাড়লেও এ প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারের ব্যয় আর বাড়বে না। সূত্রমতে ,ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে ২০১১ সালের ১৯ জানুয়ারি ইতাল-থাই ডেভেলপমেন্ট কোম্পানির চুক্তি করে সেতু বিভাগ। ওই বছর ৩০ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্পের ভিত্তি স্থাপন করেন। কিন্তু এরপর ভূমি অধিগ্রহণ নিয়ে জটিলতায় কাজ আটকে থাকে দুই বছর। নকশা পরিবর্তন ও মূল্যস্ফীতির কারণে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় ২০১৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নতুন করে চুক্তি করতে হয়। চুক্তি সংশোধনের পর ওই বছরই শুরু হয় ভূমি জরিপ। ২০১৪ সালের ৩০ অক্টোবর এবং ২০১৫ সালের ১৬ অগাস্ট দুই দফা এ নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। নির্মাতা প্রতিষ্ঠান প্রয়োনীয় অর্থ জোগাড় করতে না পারায় নির্মাণকাজ তা চলতে থাকে ঢিমেতালে।
সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হচ্ছে। এতে ব্যয় হচ্ছে ৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২ হাজার ৪১৩ কোটি টাকা বাংলাদেশ সরকার জোগান দিচ্ছে। বাকি টাকা বিনিয়োগ করবে ইতাল-থাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানি। নির্মাণকালীন তিন বছরসহ মোট ২৫ বছর টোল আদায়ের মাধ্যমে বিনিয়োগকৃত টাকা তুলে নেবে থাইল্যান্ডের প্রতিষ্ঠানটি। এরইমধ্যে এ প্রকল্পে ইতাল-থাইয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে চীনের সিনোহাইড্রো করপোরেশন এবং শেনডং ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল কোম্পানি গ্রুপ।
প্রকল্পের পরিচালক এএইচএমএস আক্তার জানান, ইতাল-থাই এ প্রকল্পে দুটি প্রতিষ্ঠানকে অংশীদার হিসেবে নেওয়ার পর তাদের অর্থসঙ্কট কেটেছে। এখন এ প্রকল্পের ৫১ শতাংশের মালিকানা রয়েছে ইতাল থাইয়ের হাতে। চায়না শেনডং ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল কোম্পানি গ্রুপ লিমিটেড ৩৫ শতাংশ এবং সিনো হাইড্রোর ১৪ শতাংশ অংশদারীত্ব নিয়েছে। প্রতিষ্ঠান দুটি ইতোমধ্যে টাকা ছাড় করাও শুরু করেছে। চায়না শেনডং গত ৩১ জুলাই ১১ দশমিক ৪৮ মিলিয়ন ডলার এবং সিনো হাইড্রো ৫ দশমিক ১৮ মিলিয়ন ডলার দিয়েছে। এ মাসে এ দুটি প্রতিষ্ঠান ৪০ মিলিয়ন ডলার এবং আগামি মাসে ৭০ মিলিয়ন অর্থ দেবে। এরসঙ্গে ইতাল-থাইও তাদের অংশ দিচ্ছে।
সূত্র জানায়, প্রথম ধাপের কাজ ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর নাগাদ শেষ করে বনানী পর্যন্ত অংশ যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। দ্বিতীয় ধাপের প্রকল্প এলাকার জন্য জমি অধিগ্রহণ শেষ। বনানী থেকে মগবাজার পর্যন্ত বিভিন্ন স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার কাজও হয়েছে। নির্মাতা প্রতিষ্ঠানকে তাদের অ্যালাইনমেন্ট বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ অংশে এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ শুরু হবে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে। আর তৃতীয় ধাপের জন্য জমি অধিগ্রহণ শেষ আগামি ছয় মাসের মধ্যে জায়গা খালি করে দেওয়া হবে। তারপর সেখানে নির্মাণ কাজ শুরু হবে।
প্রকল্প কর্তৃপক্ষ জানায়, এখন পর্যন্ত এক হাজার ৩৩৩টি পাইল, ৩০৭টি পাইল ক্যাপ, ৯৩টি ক্রস-বিম, ৪১৮টি কলামের মধ্যে ২০১টি সম্পূর্ণ ও ১৩১টি আংশিক, ১৮৬টি আই গার্ডার এবং ১৪টি স্প্যান নির্মাণ শেষ হয়েছে।
নির্মাণাধীন চার লেনের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মূল লেনের দৈর্ঘ্য ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। এটি চালু হলে যানবাহনগুলো রাজধানীর উত্তর অংশ থেকে নির্বিঘেœ মধ্য, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব অংশে যাতায়াত করতে পারবে। যান চলাচলে গতি বৃদ্ধির পাশাপাশি যানজট সহনীয় রাখতেও প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।