এডিবির পূর্বাভাস

0
295

খুলনাটাইমস: করোনাভাইরাসকবলিত বৈশ্বিক অর্থনীতি ও তজ্জনিত মহামন্দার আশঙ্কার মধ্যেই বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক পূর্বাভাস দিয়েছে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি)। এডিবি বলেছে, করোনা সঙ্কটে বাংলাদেশের অর্থনীতির ক্ষতির পরিমাণ মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। ফলে মোট জিডিপির প্রবৃদ্ধি তেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। তবে তা চলমান ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ থেকে কিছুটা নেমে ৭ দশমিক ৮ শতাংশ হতে পারে। অবশ্য এডিবি এও বলেছে যে, করোনা সঙ্কটের প্রভাব যদি দীর্ঘায়িত হয় তবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমাসহ বাড়তে পারে ক্ষতির পরিমাণ। এর সপক্ষে কতিপয় যুক্তিও তুলে ধরেছে সংস্থাটি। তারা বলেছে, করোনার কারণে আপাতত পোশাক খাত ও প্রবাসী আয় কমলেও দুটি খাতেই গত কয়েক মাসে আশাব্যঞ্জক আয় হয়েছে। তদুপরি চীনে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় বাংলাদেশে চৈনিক সহযোগিতা ফিরে এসেছে পুনরায়। উল্লেখ্য, পদ্মা সেতু, পোশাক ও চামড়াসহ অধিকাংশ উন্নয়ন প্রকল্পে চীন জড়িত। চীন এও বলেছে যে, দ্বিগুণ কাজ করে নির্ধারিত সময়ে তারা শেষ করে দেবে মেগা প্রকল্পগুলো।
নিজস্ব অর্থায়নে চীনের সহযোগিতায় স্বপ্নের পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী টানেল, জাইকার সহযোগিতায় মেট্রোরেল, রাশিয়ার সহযোগিতায় বঙ্গবন্ধু পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্রসহ দশটি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। সৌদি আরব, জাপানসহ বিদেশী বিনিয়োগ আসছে। দারিদ্র্য নেমে এসেছে বিশ শতাংশের নিচে। এরই ধারাবাহিকতায় নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদায় উন্নীত হয়েছে বাংলাদেশ। উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির এই ধারাবাহিকতায় প্রথম প্রেক্ষিত পরিকল্পনা-২০২১-এর সাফল্যের পর সরকার এবার অগ্রসর হচ্ছে রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নিয়ে। এই পরিকল্পনা যথাযথভাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে তখন মানুষের মাথাপিছু আয় দাঁড়াবে ১২ হাজার ৫০০ ডলারের বেশি। মোট দেশজ উৎপাদন ডিজিপি প্রবৃদ্ধি দাঁড়াবে ৯ দশমিক ৯ শতাংশ। হতদরিদ্রের হার নেমে আসবে শূন্যের কোঠায়। মানুষের গড় আয়ু বেড়ে হবে ৮০ বছর। উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ ও উচ্চ আয়ের দেশগুলো যে উন্নয়নের পথ পাড়ি দিয়েছে সেই ইতিবাচক দিকগুলো বিবেচনায় নিয়েই অগ্রসর হতে চায় সরকার।
বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণে সরকার ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি চালু হয়েছে, বাকিগুলো প্রক্রিয়াধীন। মাত্র সাত দিনে এসব জোনে বিদ্যুত দেয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। বিদ্যুতের সমস্যাও নেই বর্তমানে। সর্বোপরি রাশিয়া ও ভারতের সহযোগিতায় রূপপুরে নির্মাণাধীন দুটি পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র থেকে ২০২৪ সাল নাগাদ পাওয়া যাবে ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত। দ্বিতীয় পরমাণু বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে জায়গা খোঁজা হচ্ছে, যেটির দরপত্র আহ্বান করা হবে আগামী বছর। অপেক্ষাকৃত দরিদ্র ও অনুন্নত এলাকায় এটি নির্মাণ করা হবে। আগামীতে একটি দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ। প্রায় ১০ শতাংশ জাতীয় প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে আগামীতে বাজেটের আকারও অনেক বড় করার পূর্বাভাস দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। আগামী অর্থবছরে জাতীয় বাজেট ছাড়িয়ে যেতে পারে ৪ লাখ ষাট হাজার কোটি টাকার বেশি। গত কয়েক বছর ধরে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে। করোনাজনিত পরিস্থিতি সামাল দিতেও সরকারী তৎপরতা সন্তোষজনক। বেসরকারী খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, রফতানি আয় ও রেমিটেন্স প্রবাহের ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে জাতীয় প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশ ধরে রাখা অসম্ভব কিছু নয়। সরকার অন্তত সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে নিরন্তর কাজ করে চলেছে বলেই প্রতীয়মান হয়।