আর্থিক ঝুঁকির আশঙ্কা

0
412

অনলাইন ডেস্ক: ইন্দোনেশিয়ার বালিতে অনুষ্ঠিত বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বার্ষিক বৈঠকে বৈশ্বিক অর্থনীতির ঝুঁকি সম্পর্কে ১৮৯টি দেশের অর্থমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে।

বিশ্ব অর্থনীতি পর্যালোচনা করে নেতারা যেসব বিষয়ে একমত হয়েছেন তা হল- দুটি কারণে এশিয়ার দেশগুলো ঝুঁকির মধ্যে পড়তে যাচ্ছে। এক. মার্কিন ডলারের দাম স্থিতিশীল থাকলেও আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দামের ক্রমোবৃদ্ধি। সার্বিক পরিস্থিতিতে বিশ্ব অর্থনীতিতে একধরনের টালমাটাল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

এ কারণে ছোট দেশগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। দুই. অনেক দেশের অর্থনীতি ক্ষতির মুখে পড়তে যাচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে। এছাড়াও চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে বাংলাদেশসহ এশিয়ার দেশগুলোয় বড় ধরনের আর্থিক ঝুঁকি ও সংকটের আশঙ্কা করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে আইএমএফের পূর্বাভাস হল- ২০১৯ সালে এশিয়ার দেশগুলোর প্রবৃদ্ধি হ্রাস পাবে। বাড়বে মূল্যস্ফীতি। স্বভাবতই বাংলাদেশও এ আশঙ্কার বাইরে নয়। প্রশ্ন হল, এ ঝুঁকি মোকাবেলায় আমরা কতটা প্রস্তুত?

বাংলাদেশে গত এক দশক ধরে নিরবচ্ছিন্নভাবে প্রবৃদ্ধি বাড়ছে এবং বর্তমানে এ হার ৭ শতাংশের উপরে। এটিকে টেকসই অর্থনীতির নির্দেশক বলা গেলেও বাস্তবতা হল সর্বস্তরের জনগণ সেভাবে এর সুফল পাচ্ছে না। এর কারণ বৈষম্য। মূলত অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুফল ভোগ করছে মুষ্টিমেয় মানুষ। ফলে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য ক্রমেই বাড়ছে। সাম্প্রতিক বিভিন্ন সূচকেও এ তথ্যের সত্যতা মিলেছে। এর অর্থ হল, ধনীদের সম্পদ ক্রমেই বাড়ছে, আর গরিব হচ্ছে আরও গরিব। আইএমএফ বলছে, এ বৈষম্য অর্থনীতিতে ঝুঁকি সৃষ্টি করছে। এ পরিস্থিতি বদলাতে হলে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য অর্থনৈতিক সুযোগ সৃষ্টি করা জরুরি। নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে এটি সম্ভব হতে পারে। এজন্য প্রয়োজন বিনিয়োগ বৃদ্ধি। দুর্ভাগ্যজনক, দেশে বেশ কয়েক বছর ধরে এ ক্ষেত্রে সাফল্য আসছে না। গ্যাস-বিদ্যুৎ ও অবকাঠামোগত সমস্যা বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হওয়ার একটি বড় কারণ বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। দুর্নীতি ও আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রতাসহ বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা আর্থিক খাতের সুশাসনকে ব্যাহত করছে। সবকিছু মিলিয়ে উদ্যোক্তারা দেশে নতুন বিনিয়োগে সেভাবে এগিয়ে আসছেন না। এ অবস্থা থেকে উত্তরণই এখন অর্থনীতির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আর্থিক খাতে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার এবং ব্যবসার পরিবেশ উন্নত করার মাধ্যমে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ানো প্রয়োজন। সরকারের নীতিনির্ধারকরা এদিকে দৃষ্টি দেবেন, এটাই কাম্য।

আমরা স্মরণ করতে পারি ২০০৭-০৮ সালের বৈশ্বিক খাদ্য সংকটের কথা। তখন অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দ্রব্যমূল্যের ক্রমোবৃদ্ধি সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের কারণ হয়েছিল। স্বল্পোন্নত, উন্নয়নশীল, এমনকি অনেক উন্নত দেশেও দেখা দিয়েছিল অর্থনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা। উল্লেখ্য, সে সময়ও বিশ্বে জ্বালানি তেলের দাম ছিল ঊর্ধ্বমুখী। এবার এ প্রবণতার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দুই অর্থনৈতিক পরাশক্তির মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধ। অর্থমন্ত্রী নিজেই বলেছেন, এ যুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাব হিসেবে দেশে পণ্যের দাম বেড়ে যেতে পারে। কাজেই সে পরিস্থিতি মোকাবেলার পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেয়া দরকার বলে মনে করি আমরা। এ সংক্রান্ত পদক্ষেপ যত দ্রুত নেয়া যায় ততই মঙ্গল।