আবরার হত্যায় বুয়েটের ছাত্রলীগ নেতা অমিতসহ গ্রেফতার ৩

0
268

খুলনাটাইমস: বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় তার রুমমেট মো. মিজানুর রহমান, আলোচিত ছাত্রলীগ নেতা অমিত সাহা এবং এজাহারভুক্ত আসামি হোসেন মোহাম্মদ তোহাকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। এ নিয়ে আলোচিত এ মামলায় মোট ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হল, যাদের মধ্যে তিনজনের নাম মামলার এজাহারে ছিল না। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র অমিত বুয়েট ছাত্রলীগের আইনবিষয়ক উপ সম্পাদক। আলোচিত এ হত্যাকা-ের অন্যতম সন্দেহভাজন হিসেবে তার নাম আসার পরও মামলায় তার নাম না থাকা নিয়ে গত দুদিন ধরেই নানা আলোচনা চলছিল। ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর সবুজবাগ এলাকায় এক আত্মীয়র বাসা থেকে অমিতকে গ্রেফতার করা হয়। বুয়েটের শেরে বাংলা হলের যে ২০১১ নম্বর কক্ষে গত রোববার রাতে কয়েক ঘণ্টা ধরে নির্যাতন চালিয়ে আবরার ফাহাদকে হত্যা করা হয়, সেই কক্ষেরই আবাসিক ছাত্র অমিত। সেদিন আবরারকে ওই কক্ষে ডেকে নেওয়ার আগে অমিত মেসেঞ্জারে আবরারের খোঁজ করেন তার এক সহপাঠীর কাছে, যার স্ক্রিনশট পরে ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার থাকতেন শেরে বাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে। তার রুমমেট মো. মিজানুর রহমানকেও গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ওই কক্ষ থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মিজান বুয়েটের ওয়াটার রির্সোসেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। আবরারের বাবার করা হত্যা মামলায় ১৯ জনের মধ্যে মিজানেরও নাম ছিল না। ওই মামলার এজাহারের ১১ নম্বর আসামি হোসেন মোহাম্মদ তোহাকে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টার দিকে গাজীপুরের মাওনা থেকে গ্রেফতার করা হয় বলে উপকমিশনার মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান জানান। যন্ত্র প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র তোহা থাকতেন শেরোংলা হলের ২১১ নম্বর কক্ষে। তিনিও হল শাখা ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে শিক্ষার্থীদের ভাষ্য। বুয়েট ছাত্রলীগের কয়েকজন গত রোববার রাতে আবরারকে ডেকে নিয়ে যায় ২০১১ নম্বর কক্ষে। ফেইসবুকে মন্তব্যের সূত্র ধরে শিবির সন্দেহে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তাকে লাঠি ও ক্রিকেট স্টাম্প দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয় বলে পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে। বুয়েট ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরাই যে মাতাল অবস্থায় আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করেছে, তা উঠে এসেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এই ভার্তৃপ্রতীম সংগঠনের নিজস্ব তদন্তেও। বুয়েট ছাত্রলীগের ১১ জনকে ইতোমধ্যে সংগঠন থেকে বহিষ্কারও করা হয়েছে। হত্যাকা-ের পর সোমবারই এ মামলার দশ আসামিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মঙ্গলবার গ্রেফতার করা হয় আরও তিনজনকে। ওই ১৩ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ইতোমধ্যে ৫ দিন করে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার তিনজনকে ধরার পর গ্রেফতারের সংখ্যা দাঁড়ালো ১৬ জনে। তাদের মধ্যে অমিত, মিজান এবং মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র শামসুল আরেফিন রাফাতের নাম মামলার এজাহারে ছিল না। এ বিষয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার ডিবি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মনিরুল ইসলাম বলেন, এজাহারে নাম না থাকলেও তদন্তে তাদের সংশ্লিষ্টতার প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে। সে কারণে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি বলেন, প্রথম দফায় গ্রেফতার হওয়া দশ বুয়েট শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং ‘তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে’ ওই হত্যাকা-ে তাদের জড়িত থাকার বিষয়ে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে। যাদের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আবরার হত্যাকা-ে অভিযুক্তদের অধিকাংশই ছাত্রলীগের রাজনীতি করে বলে প্রমাণিত হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে মনিরুল বরেন, কে কোন দলের সাথে জড়িত, পদ-পদবী কি তা আইনে দেখার সুযোগ নেই, এটি দেখাও হচ্ছে না। পাশাপাশি সামাজিক অবস্থান তদন্তের ক্ষেত্রে যেন প্রভাব বিস্তার না করে সে ব্যাপারে চৌকশ টিমগুলো কাজ করছে। আবরার হত্যার বিষয়ে কোনো তথ্য থাকলেও তা পুলিশকে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, আবরার হত্যার চার্জশট যখন বিচারে উঠবে, তখন সাক্ষ্যপ্রমাণগুলো আবার নতুনভাবে উপস্থাপিত হবে। বিচারক নিরপেক্ষভাবে সেগুলো বিচার করবেন, তখন এই সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে বিচার কাজ সম্পন্ন হবে। কারও কাছে কোনো তথ্য থাকলে তা আমাদের জানান।