আওয়ামী ও জামায়াতপন্থী দুই সাংবাদিক নেতার ওএমএস ডিলারশীপ বাতিলসহ মামলার সুপারিশ

0
672

খুলনাটাইমস ডেস্ক :
করোনা ভাইরাস সংক্রামন রোধে সরকার ঘোষিত “ঘরে থাকুন নিরপদে থাকুন’’এর কারনে জনসাধারণের নিকট সরকার কর্তৃক নির্ধারিত স্বল্প মূল্যে প্রদত্ত ওএমএস (দশ টাকা কেজি চাল) পন্য অনিয়ম করে গোপনে বিক্রির অভিযোগে খুলনার পাচঁ ডিলারের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা সহ দুদকে মামলা করার সুপারিশ করেছে জেলা প্রশাসক কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটি ।
এর মধ্যে আওয়ামী ঘরানার খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়ন (কেইউজে)’র সাধারন সম্পাদক সাইদুজ্জামান স¤্রাট এর দুটি ডিলারশীপ বাতিল এবং জামায়াত ইসলামী ঘরানার মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সাবেক সাধারন সম্পাদক এইচ এম আলাউদ্দিন বিরুদ্ধে দুদকে মামলার সুপারিশ করা হয়েছে। করোনা কালিন সময় সরকার স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য এই ওএমএসএ চাল সহ পন্য বিক্রি শুরু হয়। কিন্তু নানান অনিয়মের অভিযোগে বর্তমানে এই পন্য বিক্রি স্থগিত রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মিডিয়াতে সংবাদও প্রকাশিত হয়।
খুলনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ হেলাল হোসেন নিজে স্বাক্ষর করে গত ১৬ এপ্রিল ডিলার সাইদুজ্জামান স¤্রাট (ছাত্রলীগের খুলনা জেলার সাবেক সহ সভাপতি এবং খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারন সম্পাদক) নাম উল্লেখ করে স্বারক নং ০৫.৪৪.৫৭০০.৬১২১৮.০০২.২০.৪৭৭ তে পাচঁ সদস্য তদন্ত কমিটি গঠন করেন। এই তদন্ত কমিটির আহবায়ক অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্টেট মো: ইউসুপ আলী, সদস্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এএনএম ওয়াসিম ফিরোজ, দুদক খুলনার উপ পরিচালক মো: নাজমুল হাসান, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো: তানভীর রহমান এবং সভাপতি খুলনা প্রেসক্লাব ।
এই পাচঁ সদস্য তদন্ত কমিটি তদন্ত করে বিভিন্ন অনিয়মের প্রেক্ষিতে দুই সাংবাদিক নেতা সহ ৫ ডিলারের বিরুদ্ধে শাস্তি মুলক ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট দফতরে পত্র দিয়েছেন। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক জিয়াউর রহমান স্বাক্ষরিত এই পত্রে নির্মান এন্টারপ্রাইজ এর মালিক এইচএম আলাউদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনকে বলা হয়েছে।
এ ব্যাপারে দুদক খুলনা উপ-পরিচালকক নাজমুল হাসানের সাথে যোগাযোগ করলে জানান, তিনি নিজেও এই কমিটির সদস্য ছিলেন। বলেন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের পত্র তারা পেয়েছেন, এ ব্যাপারে তারা দ্রুতই বিধি মত পদক্ষেপ নিবেন। তিনি স্বীকার করেন শাস্তি মুলক ব্যবস্থা নেবার মধ্যে দুজন সাংবাদিক নেতাও রয়েছেন।
খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারন সম্পাদক সাইদুজ্জামান স¤্রাটের সাথে যোগাযোগ করলে তিনিও তার পরিবারের একাধিক ডিলারশীপ থাকার কথা স্বীকার করেন। বলেন বাস্তবিক অর্থে একটি ডিলার শীপের পন্য উঠাতে গেলে নানা ঝামেলা এবং লোকসান পোহাতে হয়। তবে তিনি করোনা কালিন সময় চাল বরাদ্দ পাননি। তার বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটির কথা তিনি জানেন, তবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার কথা এখনও জানতে পারেন নি।
তিনি দাবি করেন তার ইউনিয়নের মধ্যে বিরোধকে কেন্দ্র করে তাকে এই হয়রানী করা হচ্ছে। তদন্ত কমিটি সুপারিশে সাইদুজ্জামান স¤্রাটের মালিকানাধীন সুলতানা এন্টারপ্রাইজ অঙ্গীকারনামায় উল্লেখিত স্থান খাদ্য বিভাগকে না জানিয়ে স্থানান্তর করায়, তার দোকানের জন্য উল্লেখিত মালামাল রাখার জন্য যথেষ্ট না হওয়া তার ছোট ভাই এম ওয়াহিদুজ্জামান (এস এম এন্টার প্রাইজ) এর নামে দুটি ডিলারশীপ থাকায় উভয় ডিলারশীপ বাতিল করতে বলা হয়েছে ।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবেদন করে টিআইবি পুরস্কার পাওয়া খুলনার আঞ্চলিক পত্রিকার সাংবাদিক এবং মেট্রোপলিন সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারন সম্পাদক এইচ এম আলাউদ্দিনের দৃষ্টি আকর্ষন করলে তিনি জানান, তদন্তু কমিটি করা হয়েছে সাইদুজ্জামান স¤্রাটের বিরুদ্ধে, কিন্তু এখন দুদকে তার নামে মামলা করার সুপারিশ করা হয়েছে। তিনি স্বীকার করেন একই পত্রিকায় কাজ করার সুবাদে সাইদুজ্জামান স¤্রাটের পরামর্শেই তিনি ডিলারশীপ নিযেছিলেন। কিন্তু এখন তাকে ফাঁসিয়ে দেয়া হয়েছে। তদন্ত কমিটির সুপারিশে এইচ এম আলাউদ্দীনের নামীয় নির্মান এন্টারপ্রাইজ, ২০১৯ সালের জানুয়ারী মাস হতে দোকান না থাকা সত্তে¡ও মালামাল উত্তোলন করায় উক্ত ডিলারশীপ লাইসেন্স বাতিল এবং উত্তোলন কোথায় কি ভাবে বিক্রি করেছেন সে বিষয় অনুসন্ধান / তদন্তের জন্য দুদক খুলনাকে সুপারিশ করা হয় ।
টিআইবি খুলনার সহ-সভাপতি এড শামীমা সুলতানা শীলুর সাথে যোগাযোগ করে দুর্নীতির নিউজ করে আঞ্চলিক কোটায় পুরস্কার পাওয়া সাংবাদিক নিজেই দুর্নীতির বিষয়ে অভিযুক্ত, তার দৃষ্টি আকর্ষন করলে তিনি কিছু জানেন না বলেন। আরও বলেন দুদক মামলা করলে এই সাংবাদিককে আগামীতে আর এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহনের সুযোগ দেয়া হবে না।
এই দুই সাংবাদিক নেতার তিনটি ডিলারশীপ ছাড়াও রুবেল ষ্টোর ও জোহরা এন্টারপ্রাইজের ডিলারশীপ বাতিলের জন্য এই তদন্ত কমিটি সুপারিশ করেছে। এদিকে খোজ নিয়ে জানা গেছে এই সরকার আমলে ওএমএসএ ডিলার শীপের বড় অংশই সরকারী দলীয় নেতা নেত্রীর নামে করা। এবং ত্রিশটি ডিলারশীপ দলীয় দশ পরিবারের নিয়ন্ত্রনে। স্থাণীয় এবং জাতীয় পত্রিকায় এ ব্যাপারে সংবাদও প্রকাশিত হয়েছে ।
এ ব্যাপারে খুলনা বিভাগীয় আঞ্চলিক খাদ্য কর্মকর্তা মো: মাহবুবুর রহমান স্বীকার করেন যে অনিয়নের কারনে ও এমএসএ চাল সরবরাহ উর্ধতন মহলে নির্দেশে বন্ধ রয়েছে। বলেন কোন অনিয়ম করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।