আইলার ‘বিধ্বস্ত দ্বীপে’ জ্বলছে বৈদ্যুতিক বাতি

0
1638

আজিজুর রহমান, খুলনাটাইমস :
ঠিক বছর দশেক আগের এক ‘মে’ মাসে ঘূর্ণিঝড় আইলায় দেশের দক্ষিণাঞ্চলের যেসব জনপদ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল তারমধ্যে খুলনার দাকোপ উপজেলার সুতারখালী গ্রাম সেগুলোর অন্যতম। সুন্দরবনসংলগ্ন ওই গ্রামের মানুষের রাস্তাঘাট, সুপেয় পানি কর্মসংস্থানের অভাবসহ নানান সমস্যার শেষ নেই। তবে আশার আলো হয়ে ওই ‘বিধ্বস্ত দ্বীপে’ নিভৃত গ্রামের ঘরে ঘরে এখন জ্বলছে বৈদ্যুতিক বাতি।

নানা হতাশার মাঝেও বিদ্যুতের নতুন সংযোগ পাওয়ায় খুশি গ্রামের মানুষ। চলতি সপ্তাহে ওই গ্রামের অন্তত সাড়ে তিনশ পরিবার বিদ্যুতের নতুন সংযোগ পেয়েছেন। খুলনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আলোর ফেরিওয়ালা দুয়ার মিটারিং কার্যক্রমের আওতায় গ্রাহকরা এই সংযোগ পেয়েছেন। সবশেষ বৃহস্পতিবারে (১৬ মে) কিছু নতুন মিটার লাগিয়ে এই গ্রামে বিদ্যুতায়নের কাজ সম্পন্ন হয়।

চালনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ব্যবস্থাপক মো. একানুর রহমান মুঠোফোনে বলেন, পল্লী বিদ্যুতের আলোর ফেরিওয়ালা দুয়ার মিটারিং কার্যক্রমের আওতায় সুতারখালী ইউনিয়নের সুতারখালি গ্রামের অন্তত ৩৫০জন গ্রাহক সংযোগ পেয়েছেন। উপজেলাজুড়ে প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছানো পর্যন্ত কার্যক্রম অব্যাহত আছে।

দুর্গম ওই গ্রামে ভ্যান কিংবা অটোরিক্সা চলে না। তাই মোটরসাইকেলে করে মিটার, বিদ্যুতের তার, আবেদন ফরমসহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য কাগজপত্র ও সরঞ্জাম নিয়ে যান পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। লাইনম্যান, ওয়ারিং পরিদর্শকরা গ্রাম ঘুরে দেখেন নতুন সংযোগ দেওয়ার উপযোগি অবস্থা আছে কিনা? যাচাই-বাছাই শেষে তাঁরা গ্রাহকের কাছ থেকে আবেদন ফরম সংগ্রহ করেন। টাকা জমাও নেওয়া হয় সেখানেই। আইলা দুর্গত এলাকা হওয়ায় এলাকাবাসির আবেদনের প্রেক্ষিতে নিরাপত্তা জামানত আর্ধেক করা হয়েছে। গ্রাহকদের কাছ থেকে সদস্য ফি ৫০ টাকা, মিটার জামানত বাবদ ৪০০ টাকাসহ (বানিজ্যিক ৮০০) মোট ৪৫০ টাকা দিয়ে বিদ্যুৎসংযোগ দেওয়া হয়েছে।

খুলনা কার্যালয়ের সহকারি মহাব্যবস্থাপক (সদস্য সেবা) সাঈদ হোসেন বলেন, বিদ্যুৎসংযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে হয়রানি, দুর্নীতিরোধ ও গ্রাহকের সুবিধার কথা মাথায় রেখে এ কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করায় গ্রাহকদের মুখে হাসি ফুটেছে। তিনি বলেন, জেলার বিভিন্ন উপজেলায় আমরা এই কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছি।

সুতারখালি পূর্বপাড়া গ্রামের বাসিন্দা গৌতম মণ্ডল বলেন, দেশ স্বাধীনের এতো বছর পর বিদ্যুৎ পেয়েও আমরা খুশি। আমাদের আইলায় বিধ্বস্ত এই অঞ্চলে নানান সমস্যা আর সঙ্কট আছে। বিদ্যুৎ হয়তো কিছু সঙ্কট কাটাতে সাহায্য করবে।
ওই গ্রামের রজত মণ্ডল বলেন, সংযোগ নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ে গিয়ে ধারনা দিতে হয়নি। টাকা জমা দেওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়ানো লাগেনি দিনের পর দিন ঘুরতে হয়নি। আমাদের শহরে যাওয়া লাগেনি। কর্মকর্তারা বাড়িতে এসে সংযোগ দিলেন। আমরা খুব খুশি হয়েছি।

সুতারখালি গ্রামের আরেক বাসিন্দা সাদিয়া চাঁদনী বলেন, বিদ্যুৎ ছাড়া গ্রামে আধুনিকতার কোনো ছোঁয়া লাগার সম্ভাবনা থাকে না। দুর্যোগকবলিত এই অঞ্চলে বিদ্যুৎসংযোগ পেয়ে আমরা খুশি। বিদ্যুৎ পাওয়ায় গ্রামে বিভিন্ন উদ্যোক্তা তৈরি হবে। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড লাইনের কাজ শেষ করার পর দ্রুততম সময়ে বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়ায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আন্তরিকতায় আমরা খুশি।

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি খুলনা কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ মহাব্যবস্থাপক শহীদুজ্জামান খুলনাটাইমসকে বলেন, পল্লী বিদ্যুৎ ঘরে ঘরে তাৎক্ষণিকভাবে বিদ্যুৎ দেওয়ার এই উদ্যোগ ব্যাপক সাড়া ফেলছে। বিদ্যুতের আওতার বাইরে থাকা পরিবারগুলোর কাছে গিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার প্রস্তাব করা হচ্ছে। কোনো হয়রানি ছাড়াই নতুন গ্রাহক কাঙ্খিত বিদ্যুৎসংযোগ পেয়ে যাচ্ছেন। বিদ্যুতের মিটারের জন্য আগে যেখানে আবেদনের পর দাপ্তরিক জটিলতা শেষ করে সংযোগ পেতে দীর্ঘদিন লাগত, সেখানে মাত্র কয়েক মিনিটের আনুষ্ঠানিকতা শেষেই মানুষ বিদ্যুৎ সংযোগ পাচ্ছেন। বিদ্যুতায়ন বোর্ডের কাছ থেকে লাইন বুঝে পাওয়ার পর দুর্গম ওই গ্রামে দ্রুততম সময়ে বিদ্যুৎ দিতে পেরে আমরা খুশি।