আইএস’র জন্য ‘সুখবর’ সোলাইমানি হত্যা

0
236

খুলনাটাইমস আর্ন্তজাতিক: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে ইরানের কুদস ফোর্সের প্রধান জেনারেল কাসেম সোলাইমানি হত্যার নানামুখী প্রভাব ও পরিণতি রয়েছে। এগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি হলো জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিরুদ্ধে তার অসমাপ্ত যুদ্ধ। সোলাইমানি হত্যার পরপরই ইরাকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট ঘোষণা দিয়েছে আইএসবিরোধী লড়াই স্থগিত রেখে শুধু নিজেদের সুরক্ষায় কাজ করবে। সামরিক দৃষ্টিতে হয়তো তাদের সামনে আর কোনও বিকল্প নেই। ইরান ও তাদের সমর্থিত ইরাকি মিলিশিয়ারা বাগদাদ বিমানবন্দরে সোলাইমানির গাড়িতে মার্কিন ড্রোন হামলার প্রতিশোধ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এর ফলে ইরাকে মোতয়েনকৃত মার্কিন সেনা ও তাদের সঙ্গে কাজ পশ্চিমা মিত্ররা সমানভাবে গুলির নিশানায় রয়েছে। এই পরিস্থিতি আইএসের জন্য খুবই সুসংবাদ। তাদের ‘খিলাফতের’ পতনের পর তারা তা পুনরুদ্ধারের ঘোষণা দিয়েছে। এ ছাড়া ইরাকের পার্লামেন্টে সারাদেশ থেকে মার্কিন সেনাদের বিতাড়নের দাবিতে যে প্রস্তাব পাস হয়েছে সেটিও জঙ্গি গোষ্ঠীর জন্য সুখবর। ইরাকে আল-কায়েদা থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর থেকেই আইএস বেশ সক্রিয় রয়েছে। ইরাক ও সিরিয়ায় তাদের দখলকৃত ভূখণ্ড উদ্ধারে বড় ২০১৬ ও ২০১৭ সালে বড় ধরনের সামরিক অভিযান পরিচালনা করতে হয়েছে। অনেক জঙ্গি যুদ্ধে মারা গেছে অথবা বন্দি হয়েছে। কিন্তু এতে করে তাদের সংগঠন একেবারে হারিয়ে যায়নি। ইরাক ও সিরিয়ায় তাদের দখল হারানো ভূখন্ডে এখনও তারা সক্রিয়। ওঁৎপেতে হামলা, চাঁদা আদায়সহ হত্যাকাণ্ড অব্যাহত রেখেছে। ইরাকের রয়েছে কার্যকর অভিজাত সেনাবাহিনী ও পুলিশ। এদের অনেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপিয়ান মিত্রদের দ্বারা প্রশিক্ষিত। যাঁরা আইএসবিরোধী যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে। সোলাইমানি হত্যার পর যুক্তরাষ্ট্র আইএসবিরোধী অভিযানের পাশাপাশি প্রশিক্ষণও বাতিল করেছে। একইভাবে ডেনমার্ক ও জার্মানিও একই পদক্ষেপ নিয়েছে। জর্ডান ও কুয়েত থেকে জার্মানি তাদের সামরিক প্রশিক্ষকদের প্রত্যাহার করছে। ইরাকি সেনাবাহিনী আইএসবিরোধী লড়াইয়ে সম্মুখ যুদ্ধে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি নিয়েছে। কিন্তু প্রশিক্ষণের মতো লজিস্টিক সহযোগিতার জন্য তারা মার্কিন সেনাবাহিনীর কাছে নির্ভরশীল ছিল। যে মার্কিন বাহিনী এখন ঘাঁটির মধ্যে নিজেদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ব্যস্ত। আইএস জঙ্গিদের উদযাপনের আরও একটি বিষয় রয়েছে। ট্রাম্প যখন সোলাইমানিকে হত্যার সিদ্ধান্ত নিলেন তখন তিনি জঙ্গি গোষ্ঠীটির আরেকজন শত্রুকেও হত্যা করেন। ২০১৪ সালে যখন দখল শুরু করে তারা মসুলসহ ইরাকের বড় অংশ দখল করে। ইরাকের শীর্ষ শিয়া ধর্মীয় নেতা গ্র্যান্ড আয়াতুল্লাহ আলি আল-সিসতানি সুন্নি জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নেয়ার ডাক দেন। হাজারে হাজারে তরুণ শিয়া এই আহ্বানে সাড়া দেন। সোলাইমানি ও তার কুদস ফোর্স এই তরুণদের সশস্ত্র বাহিনীতে পরিণত করে। এই মিলিশিয়ারা ছিল নির্মম, আইএসের সবচেয়ে নৃশংস প্রতিদ্বন্দ্বি। কিন্তু এখন ইরান সমর্থিত এই মিলিশিয়াদের ইরাকি সেনাবাহিনীর ছায়াতলে নিয়ে আসা হয়েছে পপুলার মোবিলাইজেশন বাহিনীর নামে। এই বাহিনীর শীর্ষ নেতা রাজনীতিক প্রভাবশালী নেতায় পরিণত হন। ২০১৪ সালের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও মিলিশিয়াদের শত্রু ছিল আইএস। কিন্তু এখন শিয়া মিলিশিয়ারা তাদের আগের অবস্থানে ফিরে যাচ্ছে। যা ২০০৩ সালে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটের দখল অভিযানের বিরোধিতা করেছিল। সোলাইমানির প্রশিক্ষণ ও তার সরবরাহ করা অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে তারা অনেক মার্কিন সেনাকে হত্যা করেছে। গত সপ্তাহে ট্রাম্প তাকে হত্যার যে নির্দেশ দিয়েছেন সেটির পেছনেও এটি একটি কারণ। ২০১৮ সালে ট্রাম্প এককভাবে ইরানের পারমাণবিক চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহারের পর থেকেই ওয়াশিংটন ও তেহরান যুদ্ধের দামামা বাজিয়ে যাচ্ছিল। সোলাইমানি হত্যার আগে থেকেই শিয়া মিলিশিয়ারা মার্কিন সেনাদের লক্ষ্য করে হামলা শুরু করেছিল। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে উত্তর ইরাকের একটি ঘাঁটিতে হামলায় মার্কিন সামরিক ঠিকাদার নিহতের জবাবে যুক্তরাষ্ট্র কাতাইব হিজবুল্লাহ গোষ্ঠীর ওপর হামলা চালায়। এতে নিহত হয় অন্তত ২৫ যোদ্ধা। এই মিলিশিয়া গোষ্ঠীর নেতা আবু মাহদি আল-মুহান্দিস বাগদাদ বিমানবন্দরে সোলাইমানির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। একই গাড়িতে থাকায় তিনিও মার্কিন হামলায় ছিন্নভিন্ন হন। ইতিহাস বলে, জঙ্গিরা তখনই সবচেয়ে বেশি সুবিধা পায় যখন অস্থিতিশীলতা, বিশৃঙ্খলা, দুর্বল ও শত্রুদের মধ্যে বিভক্তি থাকে। অতীতেও এমনটি ঘটেছে এবং পুনরায় ঘটার মতো বড় সুযোগ রয়েছে। সূত্র: বিবিসি।