অধিভুক্ত কলেজ নিয়ে অচলাবস্থা স্থায়ী সমাধান খুঁজতে হবে

0
382

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘ভারমুক্ত’ করতে অনেক দিন আগে অধিভুক্ত কলেজগুলোকে এর থেকে বিযুক্ত করা হয়েছিল। বিযুক্ত কলেজগুলোর শিক্ষাক্রমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য গঠন করা হয়েছিল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু কাঠামোর অপর্যাপ্ততা, ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার কারণে এতগুলো কলেজের দায়িত্বপালন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। সেশনজট দেখা দেয়; শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়। বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখেও পড়তে হয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে।
এ পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর চাপ কমাতে অধীনস্থ সরকারি কলেজগুলোকে সংশ্লিষ্ট এলাকার সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন। ওই বছরের ডিসেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) অনুষ্ঠিত সভায় সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যরা কলেজগুলোকে তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নিতে সম্মত হন। কাছাকাছি সময়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সেশনজট কমাতে বিশেষ উদ্যোগ নেয়। এর ফলে পরীক্ষা গ্রহণে অগ্রগতি হলেও ঠিকমতো ক্লাস না হওয়ার অভিযোগ থেকেই গিয়েছিল। আবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই উদ্যোগের কারণে সরকারি কলেজগুলোকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত করার প্রক্রিয়ায় ভাঁটা পড়ে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তাগাদা চলতে থাকে। এ টানাপড়েনের মধ্যে ২০১৭ সালে ঢাকার সাতটি সরকারি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত করা হয়।
এ প্রক্রিয়া কাক্সিক্ষত সমাধান দিতে পারেনি। বরং সমস্যা বেড়েছে। পাঠদান, পরীক্ষা গ্রহণ, ফলাফল প্রকাশ প্রভৃতি সমস্যার কারণে উভয় পক্ষই অধিভুক্তি বাতিলের দাবি তুলেছে। এ দাবিতে টানা ছয় দিন বিক্ষোভ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ সময়ে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের কর্মসূচিও পালন করা হয়েছে। কলেজগুলোর শিক্ষার্থীরাও নানা অভিযোগে বিভিন্ন সময়ে বিক্ষোভ করেছে। কয়েক মাস আগে তাদের একাংশ অধিভুক্তি বাতিলের দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে তারা বৈষম্য, অবজ্ঞা, অবমূল্যায়ন প্রভৃতি অভিযোগ তোলে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একই সেশনের শিক্ষার্থীদের চেয়ে পিছিয়ে পড়ার ক্ষোভের কথাও জানায় তারা।
অধিভুক্তির ফল স্বস্তিদায়ক নয়; না কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য, না সরাসরি শিক্ষার্থীদের জন্য। যথেষ্ট ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয়নি। ‘ব্রাহ্মণ-শূদ্র’ ভেদ রেখে, ব্যবস্থাপনার সামর্থ্যরে অভাব রেখে, প্রশাসনিক দুর্বলতা রেখে কোনো উদ্যোগ সুফল বয়ে আনতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আশ্বাস দিয়ে ক্লাসে ফেরানো গেলেও এটি কার্যকর ও স্থায়ী সমাধান নয়। অধিভুক্ত কলেজগুলোর শিক্ষার্থীদের জন্য সুষ্ঠু ও বৈষম্যহীন ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কলেজগুলোকে আগের ব্যবস্থাপনায় ছেড়ে দেওয়াই উচিত হবে।