শিক্ষার্থীদের পকেটের টাকায় মডেল হতে চলেছে গোপালগঞ্জের খেলনা গ্রাম

0
545

খুলনাটাইমস ডেস্ক: গোপালগঞ্জ শহর থেকে চার কিলোমিটার পূর্বদিকে কাঠি ইউনিয়নের খেলনা গ্রাম।গ্রামটির ভিতরে রয়েছে সৌন্দর্যময় এক নীলাভুমি পদ্মবিল। যেখানে প্রতি বছর হাজার হাজার দর্শনার্থী ভিড় করে পদ্মফুল দেখতে। এমন সুন্দর গ্রামটিতে প্রায় ২০ বছর ধরে ক্ষমতা, জমিজমা ও ব্যক্তিগত শত্রুতার কারণে দুই গ্রুপের মধ্যে মারামারি (কাজে)সংঘটিত হয়ে আসছে। এ কারণে পাল্টাপাল্টি মামলায় কখনও কখনও পুরুষ শূন্য হয়ে পড়ে গ্রামটি। গ্রামটির শান্তি রক্ষায় প্রশাসন এবং জনপ্রতিনিধিরা একাধিকবার সালিশ বিচার করেও সমাধানে আসতে পারেননি। তবে জনপ্রতিনিধি প্রশাসন যা পারেনি, নিজেদের বুদ্ধিমত্তায় তা করেছে গ্রামের ২০ জন শিক্ষার্থী ।
গোপালগঞ্জের কলেজ পড়ুয়া ২০ জন ছাত্র স্থানীয় নেতা, মুরুব্বী, সাধারন মানুষসের কাছে সরাসরি বলতে সাহস পায়নি যে সকল মারামারি মামলা-হামলা করা খারাপ। এতে ক্ষতি ছাড়া কোন লাভ নেই। এজন্য প্রথমে ২০ সদস্যের এলাকার যুবকদের নিয়ে একটি সংগঠন তৈরি করা হয়। সংগঠনের সদস্যরা বাবা-মায়ের দেওয়া কলেজ খরচ এবং টিউশন ফি দিয়ে নিজেদের অর্থে একটা ফান্ড তৈরি করেন।এবং তারা সিদ্ধান্ত নেয় একসাথেই ২০ সদস্য সকলেই নামাজ পড়তে যাবে মসজিদে।যাতে করে বিষয়টি সকলের নজরে আসে।
এরপর তারা খুঁজে বের করে গ্রামের মানুষের মধ্যে আসলে সমস্যা গুলো কোথায়।
তারা ঐ সমস্যাগুলোর সমাধান বিভিন্ন কথা ব্যানার এবং ফেস্টুনের মাধ্যমে লিখে গাছে গাছে এবং চা এর দোকানের সামনে টানিয়ে দেন । এরপর নিজেদের অর্থায়নে, লিস্ট করে অসহায় মানুষদের সাহায্য সহযোগিতা, ঝরে ঘর পড়ে গেলে ঘর তুলে দেওয়া। মসজিদ ও কবরখানা নিয়মিত পরিষ্কার করে স্থানীয় নেতা, মুরব্বী ও সাধারন মানুষের চোখের মণি হয়ে ওঠেন। এর পর এ সকল যুবক স্থানীয় নেতা, মুরুব্বী এবং সাধারন মানুষকে বোঝাতে সক্ষম হন মারামারি হানাহানি কাটাকাটি এবং মামলা-হামলা সমাজের জন্য কতটা ক্ষতিকর। এবং এরপর থেকেই স্থানীয় গ্রামবাসী সকল প্রকার খারাপ কাজ থেকে আস্তে আস্তে নিজেদের বিরত রাখেন রাখতে শুরু করে। এভাবে করে স্থানীয় মুরব্বী এবং নেতাদের একসাথে সালিশ বিচারের মাধ্যমে দুই গ্রুপ একত্রিত হয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলতে শুরু করে গ্রামবাসীরা। বর্তমানে শান্তি বিরাজ করছে গ্রামটিতে।

উদ্যোক্তা মোঃ হেলাল আহমেদ বলেন,আমরা ছোটকাল থেকে দেখে আসছি আমাদের বাপ চাচারা নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে থাকতেন। আরে দলাদলি নিয়ে নিজেদের মধ্যে মারামারি, হানাহানি, কাটাকাটি লিপ্ত হয়ে পড়তেন। আমাদের গ্রামের সকল শিক্ষার্থী ছেলেমেয়েদের মধ্যে এটা একটা বড় ধরনের দাগ কাটে। এই সকল শিক্ষার্থী ছিলেন ভাই বোনদের নিয়ে একটি সংগঠন তৈরি করি। এরপর আমরা বড়দের বোঝাতে শুরু করি। কিন্তু আমরা ছোট হওয়ায় আমাদের কথা কেউই মূল্যায়ন করত না বরং ধিক্কার দিয়ে তাড়িয়ে দিত। পরবর্তীতে আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি, আমরা মুখে নয় অন্য ভাবে আমাদের বাপ-চাচাদের বোঝাবো। তখন আমাদের মনের বিভিন্ন না বলা কথাগুলো ব্যানার এবং ফেস্টুন এর মাধ্যমে বিভিন্ন গাছে গাছে এবং দোকান দোকান এটা নিয়ে দিই। এটা খুব কাজ হয় তারা বুঝতে পারে যে আমাদের সন্তানরা এটা পছন্দ করে না। এরপর আমরা বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ শুরু করি যেন অসহায় কে আমরা নিজেদের চাঁদা তুলে সাহায্য করেছে স্থানীয় মসজিদ পরিষ্কার করা গ্রামের কবরস্থান পরিষ্কার করা সহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করেছে নিজেদের অর্থায়নে। এসব দেখে গ্রামের মুরব্বি এবং নেতা ও স্থানীয় জনগণ আমাদের বাহ বাহ দিতে শুরু করে। এভাবেই আস্তে আস্তে মারামারি, হানাহানি, কাটাকাটি এবং মুক্ত হয় গ্রামটি।এভাবে করে আমরা আশপাশের ইউনিয়নসহ পুরো গোপালগঞ্জ কে পরিবর্তন করতে চাই।

গ্রামের নেতা কালাম শেখ বলেন,ছেলেগুলো ভালো কাজ করছে এটা নিঃসন্দেহে সত্য। এদের সার্বিক সহযোগিতা এবং যেকোন বিপদ-আপদে আমরা এদের পাশে থাকব তবে এখনো গ্রামে কিছু জঞ্জাল আছে এগুলো তাদের মুক্তির জন্য কাজ করতে হবে।

গ্রামের ভারপ্রাপ্ত মেম্বার শেখ রাসেল আহমেদ বলেন,আমাদের গ্রামের এ সকল যুবক আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে। আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে আমরা যা করছি তা খুবই খারাপ । তারা আমাদেরকে সরাসরি বলতে না পারায় গাছ এবং চার দোকানে মারামারি হানাহানি শুধু ধ্বংসের পথ দেখায়,তোমরা হবে যেমন তোমাদের শাসন হবে তেমন, মানুষের সাথে তাদের বুদ্ধি পরিমাণ কথা বলো, অন্যের সমালোচনা না করে নিজেকে নিয়ে ভাবুন, নেতা হবে মানুষের সেবক,এমন বিভিন্ন স্লোগান লিখে রেখেছে। এখন আমরা সব গ্রামবাসী সকলে মিলে মিশে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছি এবং গ্রামের যুবকরা একসাথে নামাজ আদায় করছে এটা খুব আনন্দের বিষয়

স্থানীয় মুরব্বি বোরহান উদ্দিন শেখ বলেন,আমাদের যুবক ছেলেরা আমাদের সরাসরি কিছু বলতে সাহস পায় না এজন্য ব্যানার-ফেস্টুন লাগিয়ে আমাদেরকে দেখালো যে এইভাবে আমাদের চলা উচিত । আমরা যে মারামারি গ্যাঞ্জাম ফাসাদ করি এগুলো না করে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়াই উত্তম এগুলোই বোঝাল আমাদেরকে। এবং পরের সমালোচনা যাতে না করি। আমরা এ সকল ছেলেদের উপর খুব খুশি এবং তাদের জন্য দোয়া করি।
গোপালগঞ্জের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মনিরুল ইসলাম বলেন,গ্রামটিতে প্রতিনিয়ত মারামারি হানাহানি কাটাকাটি লেগে থাকে এদেরকে সামাল দিতে আমাদের হিমশিম খেতে হয় তবে এ সকল যুবকদের এমন ভালো কাজের জন্য গোপালগঞ্জ থানা সর্বদাই তাদের পাশে থাকবে
গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক সাহিদা সুলতানা বলেন, খুশি হয়ে বলেন এমন ভালো কাজের উৎসাহ আমরা সব সময় দিব এবং আমার প্রতিনিধি অবশ্যই গ্রামটিতে যে ঘুরে আসবে। যদি ভাল হয় এটাকে আমরা একটা মডেল হিসেবে ব্যবহার করতে পারব।
গোপালগঞ্জে নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সাদিকুর ইসলাম খান বলেন,ডিসি মহোদয় আমাকে গ্রামটা ঘুরে দেখে আসতে বলেন এবং আমি নিজে গিয়ে সেখানে দেখে এসেছি আমার চোখে গুলো পড়েছে এটা নিঃসন্দেহে একটি ভালো কাজ আমরা এদের পাশে সব সময় থাকবো।