রক্তচাপ বেশি হলে ভারী ব্যায়াম নয়

0
276

খুলনাটাইমস লাইফস্টাইল: রক্তচাপ বেশি থাকলে ভারী ব্যায়াম থেকে দূরে থাকতে হবে। ‘হাইপারটেনশন’ অর্থাৎ উচ্চ রক্তচাপ একটি দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক সমস্যা যাতে নিজের অজান্তেই অনেকেই ভুগছেন। এই উচ্চ রক্তচাপ দীর্ঘমেয়াদে ধমনির ক্ষতি করে, তা সরু করে ফেলে। ফলে রক্তসঞ্চালন ব্যহত হয়। যা থেকে হৃদযন্ত্রের নানান মারাত্বক রোগ হয়। ধ্যান উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের একটি আদর্শ উপায়। তবে শরীরচর্চাও বেশ কার্যকর বিকল্প। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ে ব্যায়াম করলে হয়ত ক্ষতি হবে এমন ধারণা থাকতে পারে অনেকেরই, যা ভুল। বরং তা প্রাকৃতিকভাবে রক্তচাপ কমায়, কর্মশক্তি যোগায় এবং মানসিক অশান্তি দূর করতেও ভূমিকা রাখে।স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে এই বিষয়ের ওপর প্রকাশিত প্রতিবেদনে ভারতের কোকিলাবেন আম্বানি হাসপাতালের হৃদরোগের চিকিৎসক ডা. সুনিল ওয়ানি বলেন, “শরীরচর্চা হল উচ্চ রক্তচাপ কমানোর এমন একটি উপায় যা চিকিৎসা বা ওষুধের উপর নির্ভরশীল নয়। এই সমস্যায় ভুগছেন এমন শারীরিকভাবে সামর্থ্যবান প্রতিটি মানুষকেই শারীরিক পরিশ্রম করার পরামর্শ দেওয়া হয়।” ডা. সুনিল ওয়ানির সঙ্গে একমত পোষণ করে ভারতের ম্যাক্স হাসপাতালের ‘ইন্টারনাল মেডিসিন’য়ের সহযোগী পরিচালক ডা. রোমিল টিক্কু বলেন, “একজন মানুষের রক্তচাপ যদি নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং সে যদি নিয়মিত ব্যায়াম করে তবে তার রক্তচাপ আরও কমে আসবে। পাশাপাশি কোলেস্টেরল ও অন্যান্য স্বাস্থ্যগত সমস্যা থেকেও সুরক্ষা পাবে অনেকাংশে। তবে যেদিন রক্তচাপ বেশি সেদিন কোনো ভারী ব্যায়াম করা থেকে বিরত থাকাই মঙ্গল। এ ব্যাপারে ডা. টিক্কু ব্যাখ্যা দেন যে, “রক্তচাপ বেশি থাকা অবস্থায় ভারী ব্যায়াম করলে নাক দিয়ে রক্ত পড়তে পারে, দম ফুরিয়ে আসতে পারে এমনকি অবস্থা বেশি বেগতিক হলে হৃদরোগের সমস্যাও দেখা দিতে পারে। “উচ্চ রক্তচাপের সঙ্গে যদি যেকোনো হৃদরোগের জটিলতা থাকে তবে ঝুঁকি অনেক বেশি। এমতাবস্থায় ওই ব্যক্তির ভারী পরিশ্রমের কাজ করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। আর শুধু উচ্চ রক্তচাপ নিয়ে ব্যায়াম করার সময় সাবধান থাকতে। দ্রুত শ্বাস নেওয়া যা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি ঘাম হওয়া তেমন গুরুতর সমস্যা নয়। তবে হাঁসফাঁস লাগলে, বুকে ব্যথা অনুভব করলে, মাথা ঘোরালে তৎক্ষণাত ব্যায়াম বন্ধ করে দিতে হবে।
শরীরচর্চায় রক্তচাপ কমানোর পদ্ধতি
নিয়মিত শরীরচর্চার মাধ্যমে হৃদযন্ত্র আরও শক্তিশালী হয়। আর হৃদযন্ত্র শক্তিশালী হলে তা বেশি পরিমাণে রক্ত সরবরাহ করতে পারে, যা পক্ষান্তরে রক্তচাপ কমায়। এছাড়াও শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকলে স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় থাকবে, যা রক্তচাপ কমানোর আরেকটি উপায়।
যে ধরনের শরীরচর্চা করা যাবে
ভারী ব্যায়াম হৃদস্পন্দন বাড়িয়ে দেয়, সেই সঙ্গে রক্তচাপও। তাই যে ব্যায়াম-ই করুন না কেনো শরীরের উপর অতিরিক্ত ধকল দেওয়া যাবে না। হাঁটাহাঁটি থেকে ভারোত্তলন পর্যন্ত সব ব্যায়ামও করা যাবে। তবে পরিমিত। লক্ষ্য থাকবে পেশিবহুল শরীর পাওয়া নয়, শুধু সক্রিয় থাকা।
ডা. ওয়ানি বলেন, “হাঁটা, দৌড়ানো ইত্যাদি উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সহায়ক। তবে ওজন নিয়ে ব্যায়াম করার ক্ষেত্রে সাবধান থাকতে হবে। এ ছাড়া ব্যায়ামের ক্ষেত্রে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। যাদের রক্তচাপ সবসময়ই বেশি থাকে, তাদের উচিত রক্তচাপ সহনীয় মাত্রায় নামিয়ে আনার পর ব্যায়াম শুরু করা।”
আসল কথা হল
যারা মাত্র শরীরচর্চা শুরু করতে যাচ্ছেন তাদের উচিত হবে আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া। শরীরের উপর অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করা যাবে না। অল্প দিয়ে শুরু করতে হবে, ধীরে মাত্রা বাড়াতে হবে। ব্যায়ামের আগে ‘ওয়ার্ম-আপ’ করে নেওয়াকে অবহেলা নয়, বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। আর ব্যায়াম শেষে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিয়ে শরীর ঠা-া করতে হবে।