বিনিয়োগের আহবান

0
383

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফররত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবারও দেশটির ব্যবসায়ীদের প্রতি বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন। রূপকল্প-২০২১ মোতাবেক বাংলাদেশ এখন একটি শিল্পোন্নত, ডিজিটাল, মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে ওঠার পথে রয়েছে। লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশের প্রয়াসে বিনিয়োগ, বাণিজ্য এবং সমৃদ্ধির অংশীদার হতে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীদের কাছে এর আগেও প্রধানমন্ত্রী আহ্বান জানিয়েছেন। বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে বেশি লাভবান হতে পারেন বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। উল্লেখ্য, গত বছর লন্ডনের জ্যেষ্ঠ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে কমনওয়েলথভুক্ত সরকারপ্রধানদের এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে এশিয়ার সেরা বিনিয়োগ হাব হিসেবে উল্লেখ করে বিশ্বের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছিলেন। সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশে প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ বাড়ছে। গত অর্থবছরে তিন বিলিয়ন ডলারের প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ এসেছে। অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন ও টেকসই উন্নয়নের জন্য বর্তমান সরকারের নেয়া বিভিন্ন নীতি ও কর্মসূচীর সুফল আসতে শুরু করেছে।
বর্তমান সরকারের সময়ে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র দুই দেশের সম্পর্কের বিকাশ ঘটেছে এবং বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সবচেয়ে ভাল সম্পর্ক বিরাজ করছে। যুক্তরাষ্ট্র আমাদের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য ও বিনিয়োগ অংশীদার। আরও উন্নয়নের জন্য সে দেশের বিনিয়োগ ও সম্পৃক্ততা যে গুরুত্বপূর্ণ তা বলাই বাহুল্য। এটা অনস্বীকার্য যে, দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে উদার বিনিয়োগনীতি রয়েছে বাংলাদেশেরই। আইনের মাধ্যমে বৈদেশিক বিনিয়োগের সুরক্ষা, কর অবকাশ সুবিধা, মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিতে শুল্ক ছাড়, লভ্যাংশ ও পুঁজির সহজ প্রত্যাবাসনসহ বাংলাদেশে বিনিয়োগের নানা সুবিধা রয়েছে। বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগ অভ্যন্তরীণ ও দ্বিপক্ষীয় চুক্তিগুলোর প্রাসঙ্গিক আইন দ্বারা সুরক্ষিত থাকে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ‘দ্বিপাক্ষিক বিনিয়োগ চুক্তি’ এবং ‘দ্বিমুখী কর পরিহারের কনভেনশন’ স্বাক্ষরও কার্যকর রয়েছে। বিদেশী বিনিয়োগের সুবিধার জন্য বাংলাদেশে ওয়ান স্টপ সার্ভিস সুবিধাসহ ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে হাইটেক পার্ক গড়ে তোলা হয়েছে। গত ১০ বছরে গড়ে ৭ শতাংশ এবং গত বছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ১৩ শতাংশে পৌঁছানোর দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বৃদ্ধিও অব্যাহত রয়েছে। গত বছর দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ৯ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। আগামীতে এশিয়ায় সেরা বিনিয়োগ যে বাংলাদেশেই হবে এমনটা শুধু স্বপ্ন নয়, বাস্তবরূপ লাভ করবে বলেই দেশবাসী আশা করে। বাংলাদেশে বিনিয়োগ ক্ষেত্রে বর্তমানে অন্তত ১৭টি খাতে কর অবকাশ সুবিধা পাচ্ছে বিদেশীরা। তাদের মুনাফা প্রত্যাবাসন বা ফিরিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রেও বিধি-বিধান শিথিল করা হয়েছে। মুনাফাসহ শতভাগ মূলধন ফেরত নেয়ার পাশাপাশি নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠায় যন্ত্রপাতির অবচয় সুবিধা, শুল্কমুক্ত যন্ত্রাংশ আমদানি এবং রফতানি উন্নয়ন তহবিল থেকে কম সুদে ঋণ নেয়ার সুযোগ পাচ্ছেন বিদেশীরা। আশা করা যায়, প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানকে গুরুত্বের সঙ্গে নেবেন দেশটির ব্যবসায়ীরা। যার ফলস্বরূপ আগামী অর্থবছরে বিনিয়োগ আরও বাড়বে এবং বাংলাদেশ আরও এগিয়ে যাবে সমৃদ্ধির পথে।