পাইকগাছায় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে করোনা,একদিনে শনাক্ত ১০ জন মোট আক্রান্ত ৩৩

0
443

শেখ নাদীর শাহ্ :

জনঅসচেতনতা ও প্রশাসনিক নিষ্ক্রীয়তায় পাইকগাছায় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে করোনা সংক্রমণ। সর্বশেষ সোমবার একদিনে ১০ জনের নমুনায় করোনা পজেটিভ শনাক্ত হওয়ায় পরিস্থিতি ভয়াবহতায় রুপ নিয়েছে। গত ১ জুন প্রথম করোনা ধরা পড়ার পর ২৯ দিনে ডাক্তার,পুলিশ কর্মকর্তা,সাংবাদিকসহ মোট ৩৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে কয়েকজন সুস্থ্য হলেও ২ জনের ফলোআপ রিপোর্টে ফের পজেটিভ শনাক্ত হয়েছে।

এদিকে প্রতিদিন করোনা আক্রান্ত’র তালিকা প্রসারিত হলেও জনসচেতনতা বাড়ছেনা এতটুকু। প্রথম দিকে লকডাউন ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললেও সম্প্রতি আক্রান্ত পরিবারের লোকেরাও লকডাউন ভেঙ্গে বাইরে চলে আসছে। পর্যাপ্ত পরিমাণে নমুনাও দিচ্ছেননা সংশ্লিষ্টরা। এনিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের মাথা ব্যথা না থাকায় চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে পাইকগাছার লাখ লাখ মানুষ।

সূত্র জানায়, উপজেলার অন্যতম প্রধান ব্যস্ততম বানিজ্যিক কেন্দ্র কপিলমুনি। পাইকগাছাসহ আশ-পাশের কয়েকটি উপজেলার কাঁচামালের পাইকারী মোকাম কপিলমুনি। সপ্তাহের দু’দিন বৃহস্পতি ও রবিবার এখানকার সাপ্তাহিক হাট। ঐ দু’দিন লাখো মানুষের সমাগম ঘটে এখানে। করোনা কমিউনিটি পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়ায় এবং হাট-বাজারে আগত সিংহভাগ মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলায় প্রতিদিন ঝুঁকি বেড়েই চলেছে। সূত্র আরো জানায়, করোনা উপসর্গ নিয়ে ইতোমধ্যে অনেকেই নিজেকে আঁড়াল করে ব্যক্তি উদ্যোগে হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। স্থানীয় প্রাইভেট প্রাকটিশনাররা বলছেন, এমন অনেকে রয়েছেন যারা উপসর্গ নিয়ে তাদের কাছে চিকিৎসা নিতে আসছেন। যাদের নমুনাও সংগ্রহ করা হয়নি। এছাড়া নতুন সংক্রমিতদের সংষ্পর্ষে থাকাদের একটা বড় অংশ রয়েছেন, যারা নমুনা দিচ্ছেননা। এক কথায় জনসচেতনতাসহ নানা সংকটে কোনভাবেই লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছেনা সংক্রমনের নতুন তালিকা।

১ জুন সাংবাদিক তপন পালের সংক্রমণের মধ্য দিয়ে ২৯ জুন পর্যন্ত ৩৩ জন কোভিট-১৯ সংক্রমিত হয়েছেন। যাদের তালিকায় ডাক্তার, পুলিশ কর্মকর্তা, সাংবাদিক,শিক্ষক, সমাজকর্মী,ব্যাংকার, দোকানের সেলস কর্মীরাও রয়েছেন। এছাড়া এখন পর্যন্ত উপজেলার মোট আক্রান্তদের একটা বড় অংশ কপিলমুনি কেন্দ্রীক। সেক্ষেত্রে খুলনার অন্যতম প্রধান ব্যস্ততম বানিজ্যিক কেন্দ্র কপিলমুনিকে ঘিরে সাধারণ মানুষ ভয়াবহ করোনা ঝুঁকিতে রয়েছেন।

এছাড়া আক্রান্ত অনেকের বাড়ি লকডাউন ঘোষণায় উপজেলা প্রশাসনের অনুপস্থিতি লকডাউন বাস্তবায়নে প্রথম থেকেই নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে বলেও অভিযোগ করা হচ্ছে। সূত্র জানায়, সম্প্রতি উপজেলার কপিলমুনির সার-কীটনাশক ব্যবসায়ী গোপাল সাধুর করোনা ধরা পড়লে প্রশাসনের পক্ষে তার বাড়িসহ ভাইদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান লক ডাউন ঘোষণা করা হয়। তবে তারা লকডাউন অমান্য করে সেই প্রথম থেকেই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে বসেছেন। স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়ির পক্ষে তাদের দোকান-পাট বন্ধ রেখে হোম কোরেন্টাইনে থাকার নির্দেশনা দিলেও তারা তা মানছেননা।

এপ্রসঙ্গে উপজেলা সেনেটারী ও নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা উদয় মন্ডল জানান, জনসাধারণের মাঝে স্বাস্থ্য বার্তা পৌছে দেওয়া স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষে তা ব্যাপকভিত্তিক পালন করা হচ্ছে। প্রতিটি করোনা আক্রান্ত রোগীকে স্বাস্থ্য পরামর্শের পাশাপাশি জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে উপজেলা স্বাস্থ্য ও প:প: কর্মকর্তা ডা: নিতিশ কুমার গোলদারের নির্দেশে তিনি ভোর থেকে মধ্যরাত অবধি উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় ছুটে বেড়াচ্ছেন। তবে প্রশাসনের পাশাপাশি জনসাধারণকেও করোনা ঠেকাতে মাঠে নামতে হবে। তানাহলে, ভবিষ্যতে পাইকগাছায় করোনা ভয়াবহ অবস্থার জন্ম দিতে পারে বলেও জানান,এ কর্মকর্তা।

সর্বশেষ ২৯ জুন উপজেলার বান্দিকাটি গ্রামের দিলরুবা (৪০), মোহাম্মদ উল্লাহ(৫০), হাবিবুর রহমান(৩০), অজিয়ার(৪২), রাড়ুলীর বিকাশ(৪০), জাহাঙ্গীর হোসেন(৩৮), নাজমুল (২৫), বড়দলের অলিউর(৪৫), বাতিখালীর বিল্লাল(৪৫) ও কপিলমুনির দেলোয়ার হোসেন(৪৮) যিনি স্থানীয় সলুয়া আ:হাই সিদ্দিকী দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। কপিলমুনির প্রতাপকাটি গ্রামের রাজ্জাক গাজীর ছেলে রবিউল গাজীর (৪২) নমুনায় করোনা পজেটিভ শনাক্ত হয়েছে। এর আগে দেশে গত ৮ মার্চ প্রথম করোনা রোগী সনাক্ত হলেও পাইকগাছার কপিলমুনিতে ১ জুন স্থানীয় সাংবাদিক তপন পালের নমুনায় প্রথম করোনা পজেটিভ সনাক্ত হয়। এরপর পর্যায়ক্রমে শাহাপাড়া এলাকার পুলিশে কর্মরত রমজান আলী, ১০ জুন সাংবাদিক তপনের স্ত্রী তৃপ্তি পাল, কপিলমুনির কাশিমনগর গ্রামের মৃত সন্তোষ শীলের ছেলে রামপ্রসাদ শীল, ১২ জুন কপিলমুনির প্রতাপকাটী গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আব্দুল মান্নান সরদার, ১৩ জুন উপজেলার রাড়ুলীর বাঁকা এলাকার সুমন দত্ত (২৮), ১৪ জুন পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কামাল আহমেদ সেলিম নেওয়াজ এবং কপিলমুনি এলাকার প্রসেনজিৎ ও ১৫ জুন রাড়ুলীর শ্রীকণ্ঠপুর গ্রামের রফিকুল ইসলাম মোড়লের স্ত্রী হিমা বেগম, বেতবুনিয়ার স্বাস্থ্য কর্মী আঞ্জুয়ারা বেগম ও ১৭ জুন (বুধবার) খুলনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সাধারণ সম্পাদক কপিলমুনির কাশিমনগর গ্রামের এম মাহমুদ আসলাম ও কপিলমুনির রামকৃষ্ণ বস্ত্রালয়ের মালিক মামুদকাটির রামপ্রসাদ দাশের পিতা দুলাল দাশ (৫৬) করোনা আক্রান্ত আক্রান্ত হন। ২১ জুন এম মাহমুদ আসলামের স্ত্রী নাছিমা বেগম, পৌরসভার সরলের পলাশ কুমার দাশ, বাড়ি যশোরের মনিরামপুরে পাইকগাছা পৌর সদরের বিকাশ পয়েন্টে চাকুরী করেন, আগড়ঘাটা উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ডা: অরুপ রতন অধিকারী, দেলুটি ইউনিয়নের সৈয়দখালী গ্রামের গায়ত্রী চক্রবর্তী। এরআগে পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডের মারজাল ঢালী, ২৩ জুন কপিলমুনি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সঞ্জয় কুমার দাশ, লস্করের ইয়ামিন দফাদার, সোলাদানার পার বয়ারঝাপার ছবিরননেছা। এদের মধ্যে ইয়ামিন ও ছবিরন সম্প্রতি ঢাকা থেকে এলাকায় ফিরেছেন। ২৪ জুন কপিলমুনির নাছিরপুর গ্রামের সুকুমার সাধুর ছেলে সদরের সার-কীটনাশক ব্যবসায়ী গোপাল সাধু, একই দিন কাশিমনগর গ্রামের রামপ্রসাদ শীল ও পরে পৌরসভার মারজাল ঢালীর ফলোআপ নমুনাতেও পজেটিভ শনাক্ত হয়, ২৫ জুন কপিলমুনির প্রতাপকাটির রবিউল গাজী যিনি ইসলামী ব্যাংক নিউমার্কেট, খুলনা শাখায় কর্মরত রয়েছেন। ২৮ জুন পাইকগাছার সুরাইয়া বানু ডলির (৫৫) করোনা শনাক্ত হয়।

সর্বশেষ লক ডাউন প্রত্যাহারের পর ফের এলাকাভিত্তিক লকডাউনে জনসাধারণের নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙ্গে বাইরে বেরিয়ে আসায় এবং লোকাল প্রশাসনের নিষ্ক্রীয়তা মূলত করোনা সংক্রমণ প্রসারতার জন্য দায়ী বলে মনে করছেন স্থানীয় সচেতন মহল। সর্বশেষ পরিস্থিতিতে করোনা ভাইরাস তৃণমূলে ছড়িয়ে পড়ায় ব্যাপক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছেন পাইকগাছার লাখ লাখ সাধারণ মানুষ।