জঙ্গী টার্গেটে মুক্তবুদ্ধি

0
525

সর্বকালেই ধর্মান্ধ বা মৌলবাদের শিকার হয়েছে মুক্তচিন্তকেরা। প্রাচীনকালে বিজ্ঞান তথা যুক্তিবুদ্ধি ও সত্যের অবয়ব তুলে ধরলে প্রচলিত বিশ্বাসী ও সংস্কারধারীরা ক্ষুব্ধ হয়েছে। তারা এক জোট হয়ে ওই বিজ্ঞানী বা মতবাদীকে আক্রমণ করেছে। দার্শনিক সক্রেটিস থেকে শুরু করে গ্যালিলিও পর্যন্ত কম-বেশি মুক্তচিন্তকেরাই ক্ষোভ, হিংসা বিরোধিতার টার্গেট হয়ে নাজেহাল হয়েছেন। এখন মানুষ মঙ্গলগ্রহে অভিবাসনের স্বপ্ন দেখছে। বিজ্ঞানের এমন স্বর্ণযুগে লেখক-বুদ্ধিজীবীদের জীবন হুমকির মধ্যে থাকা অত্যন্ত দুঃখজনক। সম্প্রতি নির্বিবাদী ভদ্র মানুষের দেশ নিউজিল্যান্ড থেকে শুরু করে শিল্পী ও শিল্পের ভূখ- প্যারিসও আক্রান্ত হয়েছে জঙ্গী চক্রের। ধর্মের দোহাই দিয়ে আমাদের দেশে তো কম লেখক-বুদ্ধিজীবীর প্রাণ গেল না। তারা আলোর মেলা বইমেলা পর্যন্ত চাপাতি শানিয়ে গেছে হুমায়ুন আজাদ ও অভিজিতের মতো যুক্তিবাদী লেখককে হত্যা করতে। সংঘবদ্ধ আক্রমণ ছাড়াও রয়েছে একক ব্যক্তির প্রচেষ্টায় হামলা, যার শিকার হয়েছেন মুহম্মদ জাফর ইকবালের মতো জনপ্রিয় লেখকও। হন্তারকরা কখনও এসেছে একাত্তরের ঘাতক দালালদের পতাকা নিয়ে, কখনও বা আন্তর্জাতিক জঙ্গীবাদের পতাকাধারী এ দেশীয় সন্ত্রাসীরা আক্রমণ শানিয়েছে। এই নেতিবাচক ধারার সর্বশেষ উদাহরণ দেশের তিন বিশিষ্ট ব্যক্তির জীবন নাশের হুমকি। ‘লোন উলফ’ নামের অনলাইন ম্যাগাজিনের মার্চ সংখ্যায় একটি হিটলিস্ট প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল, একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির এবং ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনের নামও রয়েছে। গত বছরের মার্চে অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবালের ওপর ‘লোন উলফ’ হামলা হয়েছিল বলেও উল্লেখ আছে ওই ম্যাগাজিনে।

জঙ্গী সংগঠনের সদস্য এবং গোপনে সক্রিয় উগ্রবাদীদের অপপ্রচারের কারণেই আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠনের হামলার টার্গেট হয়েছেন দেশের বিশিষ্টজনরা। দফায় দফায় হুমকি দেয়া হচ্ছে তাদের। ফেসবুক, টুইটারসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবী, শিক্ষাবিদ, রাজনীতিবিদ, মানবাধিকারকর্মী ও অনলাইন এ্যাক্টিভিস্টদের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে একাধিক চক্র। কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন সংগঠনের নামে দেশের দুই শতাধিক বিশিষ্ট নাগরিককে হুমকি দেয়া হয়েছে। ভুয়া পরিচয়ে মোবাইল ফোনে হুমকি দেয়া ব্যক্তিদের শনাক্ত করেছে পুলিশ ও গোয়েন্দারা। জঙ্গী সংগঠন আনসার আল ইসলামের বিভিন্ন শাখার নামে এই হুমকিদাতাদের পেছনে কারা জড়িত আছে সেই রহস্য উদ্ঘাটিত হয়নি। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে জঙ্গী হামলার শঙ্কা নিয়ে যখন ভাবা হচ্ছে, তখন আবার দেশের তিন বিশিষ্ট নাগরিককে হুমকির ঘটনা বিষয়টিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অবশ্য আশ্বাস দিয়ে বলেছেন, ‘তিন বিশিষ্ট নাগরিককে নিরাপত্তা দেয়া হবে।’
লেখার জবাব যারা লেখা নয়, চাপাতির মাধ্যমে দিয়ে থাকে তারা রাষ্ট্রের আইন মানে না। তাই রাষ্ট্রকেই উদ্যোগী হয়ে তাদের অপতৎপরতা রোধ করতে হবে। শিকড়সুদ্ধ তাদের উপড়ে ফেলা চাই সভ্যতার স্বার্থে। মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের সরকার ধারাবাহিক মুক্তচিন্তক-হত্যা থামাতে না পারলে সেটা হবে জাতির জন্য দুর্ভাগ্যজনক। আমরা আশা করি সরকার হুমকিপ্রাপ্ত তিন বিশিষ্ট ব্যক্তির সর্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। একই সঙ্গে দেশের মানুষকেও সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে।