ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাবে সুন্দরবন উপকূলীয় পাইকগাছা লন্ডভন্ড,নিহত- ১

0
610

শেখ নাদীর শাহ্ :


ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের তান্ডবে সুন্দরবন উপকূলীয় পাইকগাছা উপজেলায় ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়েছে। এদিন নানার বাড়ীতে বেড়াতে এসে ঝড়ের কবলে দেয়াল চাপায় মিরাজ (৫) নামে এক শিশুর মৃত্যুসহ অন্তত ৯৩ জন আহত হয়েছে। ঝড়ের আমসমফানের প্রভাবে অ-স্বাভাবিক জোয়ারে পানি বৃদ্ধি পেয়ে পাউবোর একাধিক বেঁড়িবাধ ভেঙ্গে বিস্তীর্ণ অঞ্চলের বহু মৎস্য ঘের,ফসলের ক্ষেত তলিয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গাছ পড়ে ও খুঁটি উপড়ে দ্যিুৎ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। শুক্রবার দিবাগত ভোররাতে সদর এলাকায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সচল হলেও গ্রামাঞ্চলের অধিকাংশ এলাকায় এখন পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত হয়নি। ঝড়ের পর বৃহস্পতিবার সকাল থেকে স্বেচ্ছাশ্রমে অনেক ভাঙ্গনকবলিত ক্ষতিগ্রস্থ বেঁড়িবাঁধ মেরামত করা হয়েছে।

জানাগেছে, বুধবার ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের তান্ডবে রাত সাড়ে ৯ টার দিকে উপজেলার চাঁদখালীর কৃষ্ণনগর গ্রামে মামার বাড়ীতে বেড়াতে এসে মিরাজ(৫) নামে এক শিশু দেওয়াল চাপায় নিহত হয়। এ সময় তার মা শাবনুর বেগমও আহত হয়। নিহত শিশু যশোরের শার্শা উপজেলার বিশোরীপুর গ্রামের জহুরুল শেখের ছেলে।

সূত্র জানায়, ঝড়ের প্রভাবে স্থানীয় নদ-নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩ থেকে সাড়ে ৩ ফুট পানির উচ্চতা বুদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ পাউবো বেঁড়িভাঁধ ছাপিয়ে পোল্ডার অভ্যন্তরে পানি ঢুকে পড়ে। এতে বাঁধের বেশ কিছু স্থানে ভেঙ্গে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। বুধবার রাতে ২৩ নং পোল্ডারের লস্করের খেঁয়াঘাট সংলগ্ন এলাকায় ১৫ ফুট ও কড়ুলিয়ার আনিছ খার ঘের সংলগ্ন এলাকায় ৪০ ফুট বেঁড়িবাধ ভেঙ্গে পোল্ডারে পানি ঢুকে বহু চিংড়ী ঘের তলিয়ে যায়।

বৃহস্পতিবার সকালে স্থানীয়রা স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে সেখানে বিকল্প বাঁধ দিলে খেঁয়াঘাটের ভয়াবহ ভাঙ্গন থেকে রক্ষা পায়। একই সময়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য মোফাজ্জেল হোসেন গ্রামবাসীদের সাথে নিয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে ভাঙ্গনকবলিত বাঁধটি সংষ্কার করতে সমর্থ হন বলেও জানানো হয়। এর আগে সোলাদানা ইউনিয়নের বয়ারঝাপায় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এসএম এনামুল হক ও গড়ইখালীর ক্ষুতখালীতে প্যানেল চেয়ারম্যান আঃ ছালাম কেরু স্থানীয়দের সহয়তায় ঝুঁকিপূর্ণ বেঁড়িবাঁধে বালির বস্তা ও মাটি ফেলে সংষ্কার করেন।

এদিকে উপজেলার দেলুটির কালীনগরে পাউবোর ঝুঁকিপূর্ণ বেঁড়িবাঁধ ভেঙ্গে গোটা এলাকা লবণ পানিতে প্লাবিত হয়েছে।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান রিপন কুমার মন্ডল জানান, আম্ফানের প্রভাবে তার দেলুটি ইউনিয়নে ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়েছে। লবন পানিতে উঠতি ফসল ২শ একর তরমুজ ক্ষেত, বহু কাঁচা-পাকা ঘরবাড়ি, পুকুর ও ফসলের ক্ষেত তলিয়ে মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে।

এসব ঘটনায় বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলা চেয়ারম্যন গাজী মোহাম্মদ আলী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জুলিয়া সুকায়না ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ ছাড়া গাদইপুরের কচুবুনিয়া, নিমাইখালী, রাড়ুলীর কাঠিপাড়া, গড়ইখালীর বাজার, শান্তা গংরক্ষি, দেলুটির গেউয়াবুনিয়া, মধুখালী, পারমধুখালী, কপিলমুনির শ্রীফলতলা, লতার ইউনিয়নের কাঠামারী, লতা, হাড়িয়া, পানা, হালদার চকে ওয়াপদার নিচু বেঁড়িবাঁধ উপচে পোল্ডার অভ্যন্তরে পানি প্রবেশ করে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

মহা এ দুর্যোগ মুহুর্তে খুলনা-৬ (পাইকগাছা-কয়রার) সংসদ সদস্য আকতারুজ্জামান বাবু নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি সকল বিপদে-আপদে সবার পাশে থাকবেন বলে স্কলকে আশ্বস্ত করেন।